Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in India

ভ্যাকসিনের ‘ভারতীয়করণের’ পক্ষে সওয়াল

কেন অনুমোদন পাওয়া ভ্যাকসিনেরও ভারতে আলাদা পরীক্ষার প্রয়োজন, তার পক্ষে আরও একটি যুক্তি দিচ্ছেন গবেষকেরা।

ছবি রয়টার্স।

ছবি রয়টার্স।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৪৬
Share: Save:

পরীক্ষার পরে অন্য দেশ কোভিড ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন পেলেও ভারতের জনগোষ্ঠীর উপরে এর কী প্রভাব, তা আলাদা ভাবে দেখা উচিত বলে মনে করছেন বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের অনেকে। অর্থাৎ, ভ্যাকসিনের ‘ভারতীয়করণ’-এর পক্ষে তাঁরা। এর যুক্তি হিসেবে তাঁরা একাধিক বিষয়ের কথা তুলে ধরছেন। তাঁদের বক্তব্য, ভারতের পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস-সহ একাধিক বিষয় আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলি থেকে আলাদা। তাই ওই সব দেশে যে ভ্যাকসিন ছাড়পত্র পাবে, সেটি ভারতে ব্যবহার হলে সমস্যা দেখা দিতেই পারে। তাই এ দেশে ভ্যাকসিন ব্যবহারের আগে পৃথক ভাবে পরীক্ষা করা উচিত বলেই মত অনেকের।

দেশের কোভিড ১৯ গবেষণার অন্যতম কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধীনস্থ ‘ট্রানস্লেশনাল হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’-এর ইমিউনোলজির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অমিত অবস্থি জানাচ্ছেন, আমেরিকা বা ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীর উপরে হয়তো অনুমোদনপ্রাপ্ত ভ্যাকসিনের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল না। কিন্তু এ দেশের জনগোষ্ঠীর উপরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতেই পারে। ফলে কোনও ভ্যাকসিন ভারতে ব্যবহারের আগে এখানকার জনগোষ্ঠীর উপরে তার ফলাফল দেখা গুরুত্বপূর্ণ। অমিতের কথায়, ‘‘আমেরিকা, ইংল্যান্ড-সহ ইউরোপের যে কোনও দেশে ভ্যাকসিন অনুমোদন পেলেও তা এ দেশে প্রয়োগের আগে কার্যকারিতা ও সুরক্ষার দিকটি আলাদা ভাবে দেখা জরুরি। কারণ, এ দেশের জনগোষ্ঠীর প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ভ্যাকসিনের ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট’-এর প্রয়োজন হতেই পারে।’’

কেন অনুমোদন পাওয়া ভ্যাকসিনেরও ভারতে আলাদা পরীক্ষার প্রয়োজন, তার পক্ষে আরও একটি যুক্তি দিচ্ছেন গবেষকেরা। তাঁদের বক্তব্য, এমনিতেই সার্স কোভ-২-এর সামনে সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স-সহ প্রথম সারির দেশগুলিরই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মুখে। সেখানে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা পদ্ধতি অবলম্বন না করেই যদি ভারতে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ করা হয়, তা হলে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়ুন: ড্রাগ কন্ট্রোলারের সবুজ সঙ্কেত, সস্তার কোভিড টেস্ট কিট ‘ফেলুদা’ আসছে বাজারে

এক গবেষকের কথায়, ‘‘ভ্যাকসিন তো সুস্থ মানুষের দেহে প্রয়োগ করা হবে। ভ্যাকসিনে কোনও কাজ হল না, সেটা আলাদা বিষয়। কিন্তু ভ্যাকসিন দেওয়ার ফলে যদি সেই মানুষটি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নতুন করে চাপ তৈরি হবে। যা সামলানোর পরিস্থিতি এই মুহূর্তে নেই।’’ ফলে অতিমারি পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিন বাজারে আনার একটা ‘চাপ’ থাকলেও এর কার্যকারিতা ও সুরক্ষার দিকটি কোনও ভাবেই অগ্রাহ্য করা উচিত নয় বলে মনে করছেন গবেষকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, এতে যদি আরও ছ’মাস অপেক্ষা করতে হয়, হোক। কিন্তু ভ্যাকসিন থেকে যেন নতুন কোনও বিপদ তৈরি না হয়।

যদিও অনেকে বলছেন যে, ভ্যাকসিনের সুরক্ষা ও কার্যকারিতা দেখার জন্যই তা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর উপরে প্রয়োগ করে দেখা হচ্ছে। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলছেন, ‘‘ভ্যাকসিনের ট্রায়ালগুলো ভিন্ন জনগোষ্ঠীর উপরেই করা হচ্ছে। যেমন, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের পরীক্ষা একাধিক দেশে করা হচ্ছে। সেই একাধিক দেশের মধ্যে ভারতও রয়েছে। অর্থাৎ গ্লোবাল ট্রায়াল হচ্ছে। তাতে যে ফলাফল আসবে, তা সব দেশের জনগোষ্ঠীর উপরেই কাজ করবে বলে আশা করা যায়।’’

আরও পড়ুন: পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার জন্যই কি বিপদে ইউরোপ

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy