প্রতীকী ছবি।
এ যেন জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ। বাইরে বেরোলে করোনা-আতঙ্ক। অথচ ঘরের চার দেওয়ালে থেকেও ওদের অনেকে অরক্ষিত। ফলে লকডাউন পর্বে শিশু নির্যাতন নামক আরও এক সংক্রমণ মাথাচাড়া দেওয়ার অভিযোগ জমছে। তবে বহু অভিযোগই চাপা পড়ে আছে ঘরে। আবার অভিযোগ জমা পড়লেও আদালত আংশিক বন্ধ থাকায় বিচার ঝুলছে।
পরিসংখ্যান বলছে, লকডাউনের প্রথম সপ্তাহে গোটা দেশ থেকে চাইল্ডলাইনগুলির কাছে ৯২০০০-এরও বেশি শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এ রাজ্যে লকডাউন ও আনলকের চার মাসেরও বেশি সময়ে সেই সংখ্যা নিশ্চিত ভাবেই কয়েক গুণ বেড়েছে। জুনে একটি বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নুথালাপতি বেঙ্কটরামন। তিনি জানান, অতিমারিতে পারিবারিক হিংসার সঙ্গেই শিশু নির্যাতন উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে।
শিশু নির্যাতন কী? এ নিয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। এ ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয় শিশুটিকে শারীরিক বা যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। কিন্তু মানসিক নির্যাতন বিশেষ গুরুত্ব পায় না। অথচ শারীরিক নির্যাতন ও যৌন নিগ্রহের থেকে কোনও অংশে কম নয় মানসিক নির্যাতন। শিশুকে অবহেলা করে অজান্তেই তার মানসিক নির্যাতনের কারণ হতে পারি আমরা। নাবালিকা বিয়ের প্রবণতাও আরও এক প্রকার নির্যাতন।
শিশু ন্যায়বিচার আইন বা জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টের ৭৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী একটি শিশুকে তার অভিভাবক শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করলে বা অবহেলা করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। যার শাস্তি তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা দু’টিই। পুনরাবৃত্তি হলে শাস্তির মাত্রা বেশি হয়। শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনে কোনও শিশুর চূড়ান্ত শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হলে দশ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা দু’টিই হয়।
অভিযোগ জানাতে যোগাযোগ
• টোল ফ্রি নম্বর: ১০৯৮ (চাইল্ডলাইন)
• পুলিশ: ১০০
• রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বর: ৯৮৩৬৩০০৩০০
শিশুদের উপরে যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে অপরাধ ও তার মাত্রা বিশেষে শাস্তির বিধান দেওয়া আছে প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস (পক্সো) আইনে। এই আইনের প্রায় সবক’টি অপরাধই জামিন অযোগ্য।
লকডাউন পর্বে এই আইনগুলি বাস্তবায়িত করতেই অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। অতিমারির আবহে যেখানে শিশুদের নির্যাতিত হওয়ার সংখ্যা অনেক, সেখানে যাতায়াতের সমস্যা তাকে সঙ্কটে পরিণত করছে। শিশু নির্যাতন, তা সে যে কোনও ধরনের হোক, পুলিশ ও প্রশাসন জরুরি পদক্ষেপ করতে আইনত দায়বদ্ধ। যদি নিকটবর্তী থানায় যেতে সমস্যা হয় তখন থানা বা চাইল্ডলাইনে ফোন করে তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করা উচিত। শিশুর উপরে যৌন নির্যাতন হতে দেখেও গোপন করে যাওয়া ও অভিযোগ দায়ের না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সমস্যা হলে তা পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের নজরে আনা জরুরি।
বিবাহসংক্রান্ত বা সন্তানের হেফাজত সংক্রান্ত মামলায় আদালত সন্তানের পুরো সময়ের হেফাজত কোনও এক জন অভিভাবককে দেয়। অন্য অভিভাবক সন্তানের সঙ্গে দেখা করার, সাময়িক ভাবে তাকে নিজের কাছে রাখার অনুমতি পান। কিন্তু লকডাউনে সন্তানের সঙ্গে দেখা করা বা তাকে কাছে রাখার অনুমতি পাচ্ছেন না হেফাজতের রায় পাওয়া অনেক অভিভাবক। সন্তানের স্বাস্থ্য-সুরক্ষার কথা ভেবে ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের অনুমতি চাইছেন অনেকে। নির্দিষ্ট রায় না থাকার অজুহাতে, সেটুকুও পাচ্ছেন না তাঁরা। বাবা-মায়ের আইনি লড়াইয়ে মাঝে পড়ে এ ভাবে মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে সন্তানকে। তবে সুপ্রিম কোর্ট এবং কলকাতা হাইকোর্ট একাধিক রায়ে লকডাউন পর্বে ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করার উপরে জোর দিয়েছে। সন্তানের সঙ্গে দেখা ও যোগাযোগ করা যেমন অভিভাবকের অধিকার, সন্তানেরও অধিকার তার অভিভাবকের সঙ্গে দেখা বা যোগাযোগ করার। এ ক্ষেত্রে যে আদালতে মামলা বিচারাধীন সেখান থেকে রায় নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy