Advertisement
১২ জানুয়ারি ২০২৫

vaginal infection: সংক্রমণে সাবধান

কী থেকে সংক্রমণ হতে পারে, তা নিয়ে সচেতন থাকা আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা— এই দুই-ই হল সংক্রমণ থেকে বাঁচার মূল মন্ত্র।

সায়নী ঘটক
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২২ ০৯:০৭
Share: Save:

মানুষের শরীরে যে কয়েকটি স্বাভাবিক ‘ওপেনিং’ বা খোলা মুখ থাকে, সেখান দিয়ে যাতে বাইরের জীবাণু, ছত্রাক ইত্যাদি প্রবেশ করতে না পারে, তার জন্য কিছু ‘ন্যাচারাল বেরিয়ার’ও থাকে সে সব ওপেনিংয়ে। অর্থাৎ বাইরের পরিবেশের সংস্পর্শে এসে কোনও ধরনের ব্যাকটিরিয়াল বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন যাতে ছড়াতে না পারে, তার ব্যবস্থাও সেই সব অঙ্গে থাকে স্বাভাবিক ভাবেই। মানুষের চোখ, মুখ, কানের মতোই পেরিনিয়াল এরিয়াও ব্যতিক্রম নয়।

ব্যাকটিরিয়া ফাঙ্গাস

নারীদেহে ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন বেশ পরিচিত সমস্যা। বিশেষ করে একটু বেশি বয়সের মহিলাদের, মেনোপজ়ের পরে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে বেশি দেখা যায়। তার নির্দিষ্ট কারণও রয়েছে। পেরিনিয়াল ইনফেকশন মূলত দু’ধরনের। ব্যাকটিরিয়াল এবং ফাঙ্গাল। সাধারণত মুখে কোনও জীবাণু প্রবেশ করলে লালারসের মধ্যে থাকা উৎসেচক তার প্রতিরোধ করে। নারীদেহের ভ্যাজাইনাল ওপেনিংয়েও এমনই কিছু সুরক্ষার বর্ম থাকে, যার ফলে বাইরের জীবাণু প্রবেশ করলেও বেশিক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে না। যদি কোনও ভাবে এই সুরক্ষাস্তরটি নষ্ট হয়ে যায়, তখনই ভ্যাজাইনাল ইনফেকশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায় কয়েক গুণ।

বিভিন্ন কারণে এই সুরক্ষার আস্তরণ বিঘ্নিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাহ্যিক কারণগুলিই মুখ্য। কসমেটিক্সের ব্যবহার ভ্যাজাইনাল এরিয়ার পিএইচ ব্যালান্স নষ্ট করতে পারে। ভ্যাজাইনাল এরিয়ায় পিএইচের মাত্রা এমনই, তা অ্যাসিডিক হয়। তা ব্যাকটিরিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে। পারফিউম, সাবান, ক্রিম বা অন্য কোনও কৃত্রিম রাসায়নিকের সংস্পর্শে সেই পিএইচ ব্যালান্স বিঘ্নিত হতে পারে।

দেওয়াল ময়লা ও স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকলে যেমন সেখানে ছত্রাক জন্মায়, এ ক্ষেত্রেও তাই। ফাঙ্গাল ইনফেকশন মৃত কোষ বা কিউটিকলকে আশ্রয় করেই তৈরি হয়। অপরিচ্ছন্নতাও ডেকে আনতে পারে ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন। যৌন মিলনের সময় বীর্যের সংস্পর্শে এসে ভ্যাজাইনার অ্যাসিডিক পিএইচ ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। সেই অবস্থাতেই যদি জায়গাটি পরিষ্কার না করে ফেলে রাখা হয়, পিএইচ ভারসাম্যের অভাবে ব্যাকটিরিয়াল সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়বে।

পোশাক পরিচ্ছন্নতা

খুব আঁটসাঁট অন্তর্বাস পরলেও ভ্যাজাইনাল ইনফেকশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিশেষ করে সিন্থেটিক জিমওয়্যার বা সুইমিং কস্টিউম থেকেও এ ধরনের আশঙ্কা থাকে। গরমকালে ঘাম হওয়ার ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনা আরও বেশি। এই ধরনের পোশাক খুব বেশিক্ষণ পরে না থাকাই ভাল। সুতির নরম অন্তর্বাস ব্যবহার করা ও তা নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরি।

হরমোনের তারতম্য

যে মহিলাদের মেনোপজ় এগিয়ে আসছে, ফিমেল হরমোন ক্ষরণের মাত্রা কমে এসেছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ভ্যাজাইনার অংশটি শুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এই ড্রাইনেস থেকে ইচিং বা চুলকানি হতে পারে। অনেকেই এটিকে ইনফেকশনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। ফাঙ্গাল ইনফেকশন ভেবে অনেকে বাজারচলতি মলমও লাগিয়ে থাকেন। তবে এটা ঠিক, ড্রাইনেস বেড়ে গেলে ওই অংশটিতে সংক্রমণের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে পরে মায়েরাও এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। যাঁদের ডিম্বাশয় বা গর্ভাশয় বাদ দেওয়া হয় অস্ত্রোপচারের সাহায্যে, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে। হরমোনাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে এর হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। অনেক সময়ে রোগীদের প্রাথমিক ভাবে হরমোন ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে চিকিৎসকেরা এই ড্রাইনেস প্রতিহত করে থাকেন।

উপশম কীসে?

জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীরকুমার মণ্ডল জানালেন, ব্যাকটিরিয়াল ইনফেকশনের জন্য সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়ে থাকে। আর ফাঙ্গাল ইনফেকশনে কাজ করে বিভিন্ন প্রকার মলম। যদি সংক্রমণের মাত্রা স্থানীয় ভাবে ছড়িয়ে থাকে, তা হলে সাধারণ মলম বা অ্যান্টিবায়োটিকেই কাজ হয়ে যায়। ‘‘সাধারণ ত্বকের উপরে যে মাত্রার ওষুধ বা মলম লাগালেই চলে, পেরিনিয়াল এরিয়ায় তার দ্বিগুণ মাত্রা দরকার হয়। এই অংশের জন্য সেই কম্বিনেশনের ওষুধ আলাদা করে পাওয়া যায়।’’

কী থেকে সংক্রমণ হতে পারে, তা নিয়ে সচেতন থাকা আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা— এই দুই-ই হল সংক্রমণ থেকে বাঁচার মূল মন্ত্র। খেয়াল রাখুন সেটুকুই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy