রবিবার সকালে শুরু হল আলোচনাচক্র ‘ইম্যাজিনেশনস: রুরাল, আর্বান, গ্লোবাল’।
কল্পনা কী? তা কি বাস্তব থেকে দূরে? তার উপর নির্ভর করে কি শিল্পের গুণ? কল্পনাশক্তিই কি বাকিদের থেকে আলাদা করে শিল্পীর চোখ? শিল্প কী? কল্পনা না কি বাস্তবের প্রতিফলন? নাকি দুইয়ের মেলবন্ধন? বাস্তবের সঙ্কটের প্রভাব কি বদলে দিতে পারে শিল্পীর কল্পনাকে? কল্পনাশক্তি কি লড়তে শেখায় বাস্তবের সমস্যার সঙ্গে?
রবিবার সকালে এমনই নানা প্রশ্নের মাঝে শুরু হল আলোচনাচক্র ‘ইম্যাজিনেশনস: রুরাল, আর্বান, গ্লোবাল’। সিমা গ্যালারি এবং অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগ।
প্রতি বছর নতুন শিল্পী ও তাঁদের কাজ খুঁজে বার করতে চালু হয়েছে ‘সিমা পুরস্কার’। গত শনিবার সেই মঞ্চে সম্মানিত হয়েছেন শিল্প জগতের তরুণেরা। সেই পুরস্কার অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসাবেই আয়োজিত হয়েছে দু’দিনের অনলাইন আলোচনাচক্র। যোগ দিয়েছেন শিল্পমাধ্যমের সঙ্গে নানা কাজে যুক্ত দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট জন। রবিবার ছিল তার প্রথম দিন। সমকালীন শিল্প, শিল্প ভাবনা এবং শিল্পী মন— আলোচনায় উঠে এল সব।
আলোচনা শুরু করলেন অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মালবিকা সরকার। শিল্পে কখন কী ভাবে কল্পনাশক্তির উদ্যাপন হয়েছে, মনে করালেন মালবিকা। ক্রমে খুলল উপস্থিত সকলের ভাবনার পরত। কল্পনারও নানা সংজ্ঞা আছে, যেমন আছে কল্পনাশক্তির বহুমুখী ক্ষমতা। নানা কথায় উঠল প্রসঙ্গ।
রবিবার ছিল তিন দফার আলোচনা। প্রথম ভাগে আলোচনা হল সঙ্কট এবং শিল্প নিয়ে। অংশগ্রহণ করলেন ভারতে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রে আরানিয়া কুরিয়া দ লাগো, পরিচালক সুমন ঘোষ, লেখক কুণাল বসু এবং শিল্পী মেরো কোইজুমি। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায়। কথায় কথায় উঠে এল অতিমারির সময়ের সঙ্কট থেকে শুরু করে বিশ্ব উষ্ণায়নের মতো প্রসঙ্গও। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে শিল্প নানা দায়িত্ব পালন করে, তা ঘিরে গড়াল আলোচনা। কুণাল বললেন, ‘‘যে কোনও সঙ্কটের ক্ষেত্রেই শিল্পের বিভিন্ন ধরনের ভূমিকা থাকতে পারে। প্রতিবাদের ভূমিকা নিতে পারে কোনও শিল্প। কোনও শিল্পী সঙ্কটের সময়ে শিল্পকে বেছে নিতে পারেন মুক্তির পথ হিসাবে। আবার কোনও শিল্প প্রশ্নও তুলতে পারে।’’ অর্থাৎ, সঙ্কটের প্রভাবও একমুখী হয় না। কারণ, কল্পনা সব সময়েই বহুমুখী। এবং বাস্তবের সঙ্গে তার যোগ যে নানা স্তরের। স্থানীয় কোনও সঙ্কট শিল্পের মাধ্যমে পৌঁছে যায় বিশ্বের দরবারে।
আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয়ের যোগাযোগের প্রসঙ্গ উঠে এল পরবর্তী দুই আলোচনা ক্ষেত্রেও। শিল্প-আকৃতি এবং তার বিষয়বস্তুর মধ্যে গুরুত্বের তারতম্য নিয়ে তর্ক কম হয়নি। কিন্তু স্থাপত্যের ক্ষেত্রে সে আলোচনা কোন দিকে গড়াতে পারে, তা-ই দেখাল দিনের দ্বিতীয় সভা। সঞ্চালনায় ছিলেন সিমা গ্যালারির অধিকর্তা রাখী সরকার। আলোচনায় যোগ দিলেন দুই স্থপতি আবিন চৌধুরী এবং মার্তণ্ড খোসলা। ছিলেন সরকারি আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ ছত্রপতি দত্ত এবং তসনিম জাকারিয়া মেহতা। স্থাপত্য থেকে ভাস্কর্য, সবই রইল আলোচনায়। কোনও জায়গায় শিল্পের নতুন বিষয়বস্তু নিয়ে আসা সহজ নয়। শিল্পের আকৃতি না ভাবনা, এমন ক্ষেত্রে কিসে আনা যেতে পারে পরিবর্তন, তাতে কি অসুবিধা হতে পারে না কি সেটিই শিল্পীর কল্পনার ক্ষেত্রে— সবই উঠে এল নানা জনের আলোচনায়।
শিল্পের ক্ষেত্রের কথা উঠতেই ওঠে সংগ্রহশালার প্রসঙ্গ। দিনের তৃতীয় আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল সেটিই। এ সময়ে কেমন দায়িত্ব পালন করতে পারে বিভিন্ন শিল্পের সংগ্রহশালা? তা নিয়ে আলোচনায় যুক্ত হলেন লর্ড কালচারাল রিসোর্সেসের প্রতিষ্ঠাতা গেল লর্ড, আমেরিকার সাইরাক্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রমিতা রায়, ইনক্লুসিভ মিউজিয়াম অ্যান্ড সাসটেনেবল হেরিটেজ ক্ষেত্রে ইউনেসকো চেয়ার অধ্যাপক অমরেশ্বর গল্লা, নিউ ইয়র্কের মেট্রোপলিটন আর্ট মিউজিয়ামে ইসলামিক আর্ট বিভাগের কিউরেটর নবীনা নজত হায়দর। ইতিহাস এবং বর্তমানকে একসঙ্গে দেখে, তা থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে কি আরও মিলমিশের জায়গা হয়ে উঠতে পারে শিল্পের বিভিন্ন সংগ্রহশালা, কথা গ়ড়াল তা নিয়ে। কল্পনাশক্তি কী ভাবে বাস্তবকে সুন্দর এবং সহনশীল করে তুলতে পারে, আলোচনা পৌঁছল সেখানেও।
তবে এখানেই শেষ নয়। সোমবার কল্পনা এবং কল্পনাশক্তি সংক্রান্ত আরও কয়েক দফা আলোচনা হবে। ভবিষ্যতের শিল্প ভাবনার পথ খোঁজাও হবে তার মাধ্যমে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy