বিভিন্ন শিল্পীর কাজ নিয়ে সিমা গ্যালারিতে শুরু হল ৩০ বছর পূর্তির বিশেষ প্রদর্শনী। —নিজস্ব চিত্র।
শিল্প সময়কে যেমন ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলে, তেমনই আবার সমাজকে নানা ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা দেখায়। বছর তিরিশ আগে সে চেষ্টাকে আস্কারা দিতে শুরু হয়েছিল নতুন পথে চলা। তিন দশক পেরিয়েও ‘দ্য সেন্টার অফ ইন্টারন্যাশনাল মডার্ন আর্টস’ (সিমা) শিল্পের নানা ভাষা, অভিব্যক্তিকে তুলে ধরার কাজে সে ভাবেই মগ্ন। এত বছরের সফরে কখনও দিক বদলেছে, কখনও নতুন পালক জুড়েছে। তবে লক্ষ থেকেছে একই— শিল্প ও শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলা। গ্যালারির ৩০-এর উদ্যাপনের উৎসবও সে কথা মনে রাখল।
৩০ বছরের উদ্যাপন হবে দুই দফায়। প্রথম দফায় ১২ জন শিল্পীর কাজ নিয়ে করা হয়েছে প্রদর্শনীর আয়োজন। এই প্রদর্শনীও আবার ভাগ করা হয়েছে তিন ভাগে। প্রথম প্রদর্শনীর উদ্বোধন হল শুক্রবার সন্ধ্যায়। গণেশ পাইন, সুষেণ ঘোষ, অর্পিতা সিংহ ও শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায়ের কাজ প্রদর্শন করা হবে প্রথম ভাগে। পরের দু’টি প্রদর্শনীতে থাকবে যোগেন চৌধুরী, বিকাশ ভট্টাচার্য, লালুপ্রসাদ সাউ, সোমনাথ হোড়, সর্বরী রায়, সনৎ কর, মীরা মুখোপাধ্যায়, জয়া গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীদের কাজ। এ ছাড়া, আরও একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে সিমা। নাম ‘ফ্যান্টাস্টিক রিয়্যালিটিস অ্যান্ড বিয়ন্ড এগ্জিবিশন’। ফেব্রুয়ারি মাসে তা প্রথমে দেখানো হবে দিল্লির ভিজ়ুয়াল আর্টস গ্যালারিতে। তার পরে আগামী এপ্রিল মাসে সিমা-এ তা দেখানো হবে। বারো দশকের শিল্প, ৩৬ জন শিল্পীর কাজের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে তাতে। গত কয়েক দশকে এ দেশে শিল্পের বির্বতন কী ভাবে ঘটেছে, তা-ই ফুটিয়ে তোলা উদ্দেশ্য।
শুধু শিল্প প্রদর্শনে কখনওই আটকে থাকেনি সিমা। শিল্প-ভাবনায় বদল, নানা প্রান্তের শিল্পীর যাপন— সবই হয়ে থেকেছে সিমা-র চর্চার অঙ্গ। সে কথা মাথায় রেখেই পরিকল্পনা করা হয়েছে এই উৎসবের। তিরিশের উৎসবের সূচনায় আয়োজকদের সঙ্গে গ্যালারিতে উপস্থিত থেকেছেন বিভিন্ন শিল্পী ও শিল্পে উৎসাহীরা। আগামী কয়েক দফার উদ্যাপনেও থাকবেন তাঁরা। অনুষ্ঠানে গ্যালারির অধিকর্তা রাখী সরকার বলেন, ‘‘আমরা সব সময়েই শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে চলেছি। বরাবর সেটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য থেকেছে। তিরিশ বছরের উৎসবেও শিল্পী ও শিল্পে আগ্রহীদেরই সঙ্গে থাকার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’’
সিমা বরাবরই শিল্পের মাধ্যমে সময়কে তুলে ধরার কাজে বিশেষ জোর দিয়েছে। প্রবীণ-প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা যেমন পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে থেকেছেন, তেমন নবীনদেরও সস্নেহে কাছে টেনে নিয়েছে। বিশেষ ক্ষণের উদ্যাপনে আবারও সে ভাবনার প্রকাশ ঘটল। শুক্রবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায়। তাঁর এব্রয়ডারি ও অ্যাপ্লিকের কাজ দেখানো হচ্ছে এ বারের প্রদর্শনীতে। সিমা-র শিল্প ভাবনা প্রসঙ্গে কথার মাঝেই আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, ‘‘শিল্প মানেই তো শুধু রং-তুলি দিয়ে হয় না। নানা ভাবে, নানা কাজ করা যায়। যেমন কেউ কোনও জায়গায় রং দেখে, তা তুলিতে নিয়ে ক্যানভাসে দেবেন, তেমনই আমি সে রঙের কাপড় বসিয়েও শিল্প তৈরি করতে পারি।’’ আর সিমা যে তেমনই ছক ভাঙা ভাবনাকে সম্মান দিয়ে এসেছে, তা-ও ফের দেখাল এই প্রদর্শনী। শিল্পী সুষেণ ঘোষের কাজ নানা সময়ে প্রদর্শীত হয়েছে সিমা গ্যালারিতে। এখন তিনি নেই। তবে ৩০-এর উৎসবে বাবার হয়ে যোগ দিয়েছেন প্রয়াত শিল্পীর কন্যা মহুয়া ঘোষ। উৎসবে এসে শিল্পী-পিতার কাছে বড় হয়ে ওঠার কথা বললেন মহুয়া। জানালেন, সঙ্গীত আর অঙ্ক কী ভাবে একসঙ্গে সুষেণবাবুর শিল্পের অঙ্গ হয়ে থেকেছে। এত বছর যে সকল শিল্পী ও শিল্প-চিন্তক গ্যালারির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, ৩০-এর উৎসবে তাঁদের বিশেষ সম্মান জানাতেও উদ্যোগী সিমা। আগামী ২৪ তারিখ আছে বিশেষ অনুষ্ঠান। শিল্পকলায় অবদানের জন্য তিন শিল্পীকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে গ্যালারির তরফে।
রবিবার ও ছুটির দিন ছাড়া রোজ বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে সিমা গ্যালারি। ৩০ পূর্তির প্রদর্শনী আগামী বছরের এপ্রিলের ১৩ তারিখ পর্যন্ত। যে কোনও দিন সেখানে গিয়ে দেখে আসা যায় বিশিষ্ট শিল্পীদের কাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy