অন্নবস্ত্র-বাসস্থান মানুষের প্রাথমিক চাহিদা। অতিমারির কবলে মানুষের খাদ্যাভ্যাস, পোশাক সবই ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে। লকডাউন পরবর্তী সময়ে ফ্যাশনের সংজ্ঞাও বদলাচ্ছে। ফ্যাশন নামক কয়েনের একটা দিকে কমফর্ট থাকলে, অপর দিকে এখন নিরাপত্তা। অর্থাৎ এমন পোশাক বাছতে হবে যা দেখতেও ভাল, আবার হবে সুরক্ষিত।
আস্ক ফর আ মাস্ক
ফ্যাশন ডিজ়াইনার রিমি নায়েক বললেন, ‘‘মাস্ক এখন মাস্ট হয়ে গিয়েছে। তাই প্রত্যেকটা পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং মাস্ক তৈরি করার চেষ্টা করছি। তা ছাড়া ফ্যাশনে এখন আর অত জাঁকজমক থাকবে না। বরং প্রয়োজনীয় জিনিসের উপরেই নির্ভরশীল হবে। এমনিতেও এখন বাড়ি থেকে বেরোনো অনেক কমে গিয়েছে। বেড়ানোও বন্ধ। যেহেতু আমরা গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে থাকি, তাই আরাম বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে দেখতে হবে ফ্যাব্রিকটা ব্রিদেবল কি না! এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই পোশাক বাছতে হবে।’’ বিভিন্ন প্রিন্টেড কাপড়ের মাস্ক কিন্তু ইতিমধ্যেই বাজারে জায়গা করে নিয়েছে। এমনকি, ওয়েডিং স্পেশ্যাল জরির কাজ করা সিল্কের মাস্কও পাওয়া যাচ্ছে। রাস্তায় বেরোনোর সময়ে মাস্ক এখন পরতেই হবে। সুতরাং সেখান থেকেই শুরু করা যাক স্টাইল। ওয়াশেবল ফ্যাব্রিকে তৈরি মাস্ক পরলে তা নিয়মিত পরিষ্কার রাখাও অনেক সহজ হবে।
রোদচশমার আড়ালে
শুধু মাত্র রোদ আড়াল করাই এখন আর সানগ্লাসের কাজ নয়, বরং ভাইরাস প্রতিরোধেও তা এখন বর্ম। চিকিৎসকদের মতে, করোনা ভাইরাস চোখ দিয়েও শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই রাস্তায় যাতায়াতের সময়ে চোখে থাকুক বেশ
বড় আকারের সানগ্লাস। চোখে পাওয়ার না থাকলেও কর্মক্ষেত্রে চশমা পরতে পারেন। অথবা পাওয়ারলেস চশমা বা ট্রান্সপারেন্ট গ্লাসের সানগ্লাস বেছে নিতে পারেন।
লম্বা ঝুলের পোশাকে স্টাইল
এখন একটু লম্বা ঝুলের হাত ঢাকা পোশাক বাছাই শ্রেয়। জেনারেল ফিজ়িশিয়াল ডা. সুবীর কুমার মণ্ডল বললেন, ‘‘ফুলহাতা বা থ্রি কোয়ার্টার পোশাক পরার পিছনে যুক্তি আছে। অনেকে কাজের জায়গায় পৌঁছে মাস্ক খুলে ফেলেন। কাজের মাঝে হাঁচি বা কাশি পেলে, হাত ভাঁজ করে কনুইয়ের অংশ মুখের কাছে নিয়ে হাঁচি দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে ড্রপলেট পোশাকে আটকে যাবে, ছড়াবে না। স্লিভলেস পরলে এই কাজটা হবে না। কাপড়ের অ্যাবজ়র্বিং সারফেস ড্রপলেট শুষে নেয়। খালি হাত তা করতে পারে না।’’ অন্য দিকে একটা লম্বা ঝুলের পোশাক পরার সুবিধে বাড়িতে ফিরে কাচা সহজ। জিন্স বা সালোয়ার পরলে কাচার ঝক্কি বেড়ে যায়। তাই ম্যাক্সি ড্রেস এখন বেশ ইন হতে চলেছে। অন্য দিকে গ্লাভসও পরতে পারেন। এক সময়ে সুন্দর দেখতে ফ্রিল দেওয়া দস্তানা পরার চল ছিল। ফিরতে পারে সেই ফ্যাশনও।
ফ্যাব্রিকও হোক বন্ধু
ফ্যাশন ডিজ়াইনার অভিষেক দত্ত বললেন, ‘‘এমন ফ্যাব্রিক বাছতে হবে, যা ভেদ করে ধুলো বা ময়লা ভিতরে ঢুকতে না পারে। টেফলন কোটিং ফ্যাব্রিক তৈরি করা হচ্ছে, যাতে তা স্প্রে করে বা উপর থেকে ওয়াশ করা যায়।’’ সুতির পোশাকও বেছে নিতে পারেন। এতে আরামও পাবেন। সাবানজলে কেচে পরিষ্কার করাও সহজ। পোশাক যত হালকা হবে, তা পরে থাকাও ততই আরামদায়ক। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ফ্যাশনের ক্ষেত্রে কমফর্টকে ভুলে গেলে চলবে না।
রং, প্রিন্ট ও মোটিফ
পোশাকের কাটে খুব বেশি এক্সপেরিমেন্ট হয়তো এখন করা যাবে না। তাই পোশাকের একঘেয়েমি কাটাতে রং, প্রিন্ট ও মোটিফে বদল আনতে পারেন। যেহেতু এখনও গরমের রেশ কাটেনি, তাই ইন্ডিগো, পিচ, পিঙ্ক, মভ, পাউডার ব্লুয়ের মতো হালকা শেড বাছতে পারেন পোশাকে। অন্য দিকে প্রজাপতি, মাছ, কাঁকড়া, সেফটিপিন, ফুল ইত্যাদি মোটিফেও একঘেয়েমি কাটাতে পারেন। পোশাকের গলায় বা কাঁধের কাছে ছোট নকশাও তুলে নিতে পারেন।
চুল থাকুক আবরণে
ডিজ়াইনার অভিষেক দত্ত মনে করছেন, হুডেড পোশাক বাজারে ইন হবে। এতে সহজেই চুল আড়াল করা যায়। তবে গরমে পোশাকটি আরামদায়ক যাতে হয়, তাই হুডের ফ্যাব্রিক হালকা হতে হবে। স্কার্ফ বা সিল্কের বড় রুমালও রাখতে পারেন সঙ্গে। চুল খুব বড় হলে রাস্তায় বেরোনোর আগে স্কার্ফ দিয়ে পুরো চুল বেঁধে জড়িয়ে নিন। হ্যাটের ব্যবহারও কিন্তু চলতে পারে। এই গরমে ফ্যাশনেবল টুপি দিয়ে নিজের অন্য রকম স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করতে পারেন।
রাস্তায় বেরোনোর সময়ে পুরো পা ঢাকা জুতো পরতে হবে। স্লিপারস জাতীয় জুতো এখন এড়িয়ে চলুন। সম্ভব হলে পায়ে মোজাও পরুন। এতে পা পরিষ্কার রাখা সহজ হবে। খেয়াল রাখুন, অতিমারির মোকাবিলায় পোশাকও যেন হয়ে উঠতে পারে বর্ম। তবেই সেই ফ্যাশন সাসটেনেবল হবে।
মডেল: শ্রীময়ী ঘোষ, মুনমুন রায়, জুহি ঘোষ ; ছবি: দেবর্ষি সরকার; মেকআপ: অভিজিৎ পাল; পোশাক: ইমেজ অ্যান্ড স্টাইল, গড়িয়াহাট (জুহি)
পোশাক ও মানানসই মাস্কে মডেল: ফ্যাশন ডিজ়াইনার অভিষেক দত্ত; কালার কো-অর্ডিনেটেড পোশাক ও মাস্ক: ফ্যাশন ডিজ়াইনার রিমি নায়েক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy