অনেক সময় কথায় যা বোঝানো যায় না, লিখেও যে অনুভূতি ব্যক্ত করা যায় না, তা বুঝিয়ে দিতে পারে ছবি। নিঃশব্দ অথচ বাঙ্ময় তার প্রকাশ।
প্রিয় নায়কের মৃত্যুতে শোকে কাতর ভক্তকুল, আন্তর্জাতিক ক্রীড়ায় পদক জয়ের আনন্দ-বিহ্বল মুখচ্ছবি, কোনও বিশিষ্টের শেষ বার নিজের কর্মক্ষেত্র থেকে বেরেনোর মুহূর্ত—আবেগ, অভিব্যক্তি নিখুঁত ভাবে রয়ে যায় ছবির ফ্রেমে। কালের নিয়মে সেই ছবি হয়ে ওঠে ইতিহাসের দলিল।
প্রতিদিন খবরের সন্ধানে ক্যামেরা কাঁধে যাঁরা ঘুরে বেড়ান, বিপদের তোয়াক্কা না করে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তকে ফ্রেমবন্দি করার কাজ করেন, সেই চিত্র সাংবাদিকদের ছবি এ বার রাজপথে। ২৬৫টি প্রকাশিত, অপ্রকাশিত ছবি নিয়ে সেজে উঠেছে প্রদর্শনী ‘চিত্র যেথা ভয়শূন্য’।
গত বছর থেকেই সরস্বতী পুজোয় ধর্মতলার কাছে এমন আয়োজন শুরু করেছে কলকাতা ফোটোজার্নালিস্টস’ অ্যাসোসিয়েশন। সেখানেই জায়গা পেয়েছে প্রবীণ থেকে নবীন চিত্র সাংবাদিকদের বিভিন্ন সময়ের ছবি। মাদার টেরেসা, উত্তম কুমারের প্রয়াণের সাদা-কালো ছবি থেকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, বিপদের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে কর্মরত সাংবাদিকদের পেশাদারিত্বের প্রমাণের নিদর্শন, শহর কলকাতার উৎসব-আনন্দের রূপ— ধরা পড়েছে ফ্রেমে। আয়োজনে বাহুল্য নেই, তবে ভাবনায় আছে নিজস্বতা।
গ্যালারি নয়, মেলা নয়, ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে কলকাতার রাজপথ সংলগ্ন ফুটপাথে। ফোটোজার্নালিস্টস’ অ্যাসোসিয়েশনের তরুণ সদস্য কৌশিক দত্তের মতে, গ্যালারিতেও চিত্র প্রদর্শনী হতে পারত। তার দর্শক সীমিত। বরং কলকাতার ব্যস্ততম রাস্তায় সাজানো ছবি চোখে পড়বে পথচলতি মানুষদের। ছবি পৌঁছে দেওয়া যাবে আরও বৃহত্তর পরিসরে।

প্রদর্শনীতে ছবি দেখছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।
শনিবার ১ ফেব্রুয়ারি প্রদর্শনী শুরুর পর থেকেই পথচলতি মানুষদের কেউ কেউ সেখানে থমকে দাঁড়াচ্ছেন। এ দিন প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস । তা চলবে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
কলকাতা ফোটোজার্নালিস্টস’ অ্যাসোসিয়েশনের তরফে পিন্টু প্রধান জানালেন, গত বছরের চেয়ে এ বার ছবির সংখ্যা, চিত্র সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ, দুই-ই বেড়েছে। প্রদর্শনী যাতে পথচলতি মানুষের চোখে পড়ে, সে ভাবেই সাজানো হয়েছে।
প্রদর্শনীতে কোথাও সাদা-কালো ফ্রেম। কোথাও আবার উৎসবের কলকাতার বিভিন্ন মুহূর্ত। কোথাও ক্রীড়াজগতের ছবি। সাদা-কালো ছবির তালিকায় চোখে পড়ে সুচিত্রা সেনের একটি বিশেষ মুহূর্তের ছবি। অভিনয় ছেড়ে অন্তরালবাসিনী অভিনেত্রীর ছবি সে ভাবে আর পাওয়া যায়নি। এই ছবি অন্তরালে চলে যাওয়া সুচিত্রার। এক চিত্র সাংবাদিকের ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল সেই ছবি। উত্তমকুমারের প্রয়াণের ছবিও প্রর্দশিত হয়েছে এখানে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক উত্থান থেকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া— বিভিন্ন সময়কে তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন ফ্রেমে।

‘চিত্র যেথা ভয় শূন্য’ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে ১ ফেব্রুয়ারি। চলবে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। —নিজস্ব চিত্র।
প্রয়াত চিত্র সাংবাদিক তারাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুধীর উপাধ্যায়, সুপ্রিয় নাগকে স্মরণ করে তাঁদের ছবিও রাখা হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নয়, উৎসবের ছবি, প্রকৃতি, ফিচার— অনেক কিছুই জায়গা করে নিয়েছে প্রদর্শনীর তালিকায়। এ বছর আলোকচিত্র শিল্পী অথচ সাংবাদিক নন, তাঁদের ছবি নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়েছিল। সেখান থেকেও তিনটি ছবি পুরস্কৃত হয়েছে। সেই ছবিগুলিও ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে।