Advertisement
E-Paper

চেনা-অচেনা স্বাদে শ্রীলঙ্কা

আমাদের দেশের সঙ্গে কতটা মিল শ্রীলঙ্কার খাবারের, জানালেন শেফ উর্বিকা কানোই

শ্রীলঙ্কান প্ল্যাটার।

শ্রীলঙ্কান প্ল্যাটার।

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৪ ১০:০০
Share
Save

ভারতের দক্ষিণে ছোট একটা দেশ শ্রীলঙ্কা। প্রতি বছরই এ দেশ থেকে কয়েক হাজার ভ্রমণপিপাসু সেখানে পাড়ি দেন। শ্রীলঙ্কা বিদেশ হলেও, স্বাদে-গন্ধে অনেকটাই আমাদের দেশের মতো। তাই দেশীয় কুইজ়িনের সঙ্গে শ্রীলঙ্কান খাবারের বেশ মিল রয়েছে। বিশেষত দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের সঙ্গে। আবার অমিলও বিস্তর। শেফ উর্বিকা কানোই বলছিলেন, ‘‘একটা কথা আছে, সেম সেম বাট ডিফারেন্ট। শ্রীলঙ্কান খাবারের ক্ষেত্রে কথাটা ভীষণ ভাবে প্রযোজ্য। চাল, নারকেল, মশলার ব্যবহারে দক্ষিণ ভারতীয়দের সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে, কিন্তু রন্ধনপ্রণালী আবার আলাদা।’’

শ্রীলঙ্কা মানেই কোস্টাল ফুড নয়

অনেকে মনে করেন, শ্রীলঙ্কার খাবার মানেই কোস্টাল ফুড, তা কিন্তু একেবারেই নয়। তবে এই প্রতিবেশী দেশের খাদ্যতালিকায় মাছ, মাংস, কাঁকড়া... সবই রয়েছে। শ্রীলঙ্কার অন্যতম জনপ্রিয় খাবার— হপার, যা আমাদের দেশে আপ্পম নামে পরিচিত। রাইস ফ্লাওয়ার, নারকেলের দুধ ও জল, বিশেষ মশলা দিয়ে এর ব্যাটার তৈরি করা হয়। ছোট কড়াইয়ের আকৃতির পাত্রে মিশ্রণটি ঢেলে ফ্রাই করলে অনেকটা বাটির মতো আকার নেয়। এর মধ্যে ডিম, কারি, মাংস নানা রকম উপাদান দিয়ে আলাদা আলাদা পদ তৈরি করেন শ্রীলঙ্কানরা। মুম্বইয়ের এক শ্রীলঙ্কান রেস্তরাঁর সঙ্গে কোলাবরেট করে পপআপের আয়োজন করেছিলেন উর্বিকা। সেখানে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে পাশ্চাত্যের খাবারকে মিলিয়েছেন তিনি। ‘‘কলকাতায় সে অর্থেশ্রীলঙ্কান খাবার পাওয়া যায় না। এমন কিছু করতে চাইছিলাম যাতে নতুনত্ব থাকবে, কিন্তু সম্পূর্ণ অজানা-অচেনা হবে না। বিভিন্ন কুইজ়িনের মেলবন্ধন দেখা যায় শ্রীলঙ্কার খাবারে। আমিও এই মেলবন্ধনকেই গুরুত্ব দিয়েছি।” কোল্যাব মেনুতে এগ বেনেডিক্ট হপার যেমন থাকছে, তেমনই শ্রীলঙ্কান ট্র্যাডিশনাল হপারও থাকছে।

ভট্টালাপাম।

ভট্টালাপাম।

শ্রীলঙ্কার ঘরোয়া খাবার থেকে স্ট্রিট ফুড সবই থাকছে তাঁদের মেনুতে। শ্রীলঙ্কাবাসীর অন্যতম পছন্দের স্ন্যাক্স হল কোট্টু পরাঠা। এটাকে ওদের স্ট্রিট ফুডও বলা যায়। রুটি ছোট ছোট টুকরো করে ভেজে তার মধ্যে আনাজ, মাংস এবং নানা ধরনের মশলা দিয়ে নেড়েচেড়ে নিয়ে এটি পরিবেশন করা হয়। ডিম, চিজ়ও দেওয়া হয়। আলাদা আলাদা স্বাদের কোট্টু পরাঠা পাওয়া যায়। উর্বিকা তাঁদের পপআপ মেনুতে চিকেন চিজ় কোট্টু, মাশরুম কোট্টু রেখেছেন। নানা রকমের দোসাও থাকবে পপআপে।

শ্রীলঙ্কার লাম্প্রায়াসের সঙ্গে আমাদের বিরিয়ানির সাদৃশ্যের কথা উল্লেখ করলেন উর্বিকা। লাম্প্রায়াস মূলত দুপুর বা রাতের খাবার। ভাতের উপরে মাংস, কোনও এক রকমের নিরামিষ কারি এবং শ্রীলঙ্কান চাটনি বা আচার— সবটা কলাপাতা দিয়ে মোড়া থাকে। উপকরণেই বোঝা যাচ্ছে, এটা বেশ ভরপেট খাবার। ভাতের সঙ্গে চিকেন বা ক্র্যাব কারি খেয়ে থাকেন স্থানীয়রা। জাফনা ক্র্যাব কারি যেমন সে দেশের জনপ্রিয় পদ।

মশলা এক হলেও স্বাদ ভিন্ন

মশলার ক্ষেত্রেও এই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের মিল রয়েছে। দারুচিনি, গোলমরিচ, এলাচ, লবঙ্গ... ও দেশের খাবারে রীতিমতো ব্যবহার হয়। তবে প্রয়োগের তফাতে স্বাদের তারতম্য আসে। শ্রীলঙ্কার খাবারে মশলার আধিক্য আছে। ঝালের ব্যবহারও আছে, তবে তা খাদ্যবিশেষে। নিরামিষ খাবারেও দু’দেশের মধ্যে মিল রয়েছে। কাঁচকলা, এঁচোড়, বেগুন দিয়ে রকমারি সুস্বাদু পদ তৈরির চল রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের আচার খাওয়ার প্রচলনও রয়েছে সে দেশে। এ দেশের অধিকাংশ রান্নাই নারকেল তেলে হয় এবং রান্নায় নারকেলের দুধের ব্যবহার বেশি।

গ্রিন চিলি চিকেন - নীর দোসা।

গ্রিন চিলি চিকেন - নীর দোসা।

শ্রীলঙ্কার মিষ্টিতে গুড়ের ব্যবহার দেখা যায়। সে দেশের জনপ্রিয় ডেজ়ার্ট হল ভট্টালাপাম। এটি স্টিমড পুডিং, যেখানে প্রধান উপকরণ হল নারকেল, ড্রাই ফ্রুটস, গুড়। কোল্যাব মেনুতে যেমন শ্রীলঙ্কান বাটার কেক রয়েছে। ফ্রেঞ্চ বাটার কেক ও শ্রীলঙ্কান উপকরণ মিশিয়ে যা তৈরি। ফ্রুট পায়সম, লঙ্কান পেস্তা ডেট কেক বেশ জনপ্রিয়। ডেজ়ার্ট হিসেবেও হপার খেয়ে থাকেন স্থানীয়রা। ম্যাঙ্গো বা চকলেট হপার শেষ পাতে জমে যাবে।

পাঠকের জন্য শ্রীলঙ্কার বিশেষ একটি পদের রন্ধনপ্রণালী দেওয়া হল। রেসিপি দিলেন শেফ লক্ষিত শেট্টি।

জাফনা ক্র্যাব কারি

উপকরণ: নারকেল তেল ২০ মিলি, মৌরি ১/৪ টেবিল চামচ, বড় এলাচ ৫টা, সরষে ১/২ চা চামচ, রসুন কুচি ৩ চা চামচ, পেঁয়াজ ২টি, কারি পাতা ১টা, পান্দান পাতা ১টা, কাঁচা লঙ্কা ৪টি, টম্যাটো ৪টি, হলুদ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, লাল লঙ্কা গুঁড়ো ৩ টেবিল চামচ, জাফনা কারি পাউডার ৫ টেবিল চামচ, গোলমরিচ গুঁড়ো ২ চা চামচ, তেঁতুল ৩০ গ্রাম, নারকেলের দুধ এবং কাঁকড়া ২টো।

প্রণালী: কড়াই গরম করে নারকেল তেল দিন। মৌরি, এলাচ, সরষে দিয়ে একটু নেড়ে নিন। কারি পাতা একটু ভিজিয়ে রাখুন। এ বার রসুন কুচি, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা লঙ্কা, কারি পাতা এবং কারি পাতা ভেজানো জল দিয়ে সতে করতে থাকুন। এর মধ্যে টম্যাটো, পান্দান পাতা, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, জাফনা কারি পাউডার, গোলমরিচ দিয়ে অল্প জল দিয়ে মশালাটা কষতে থাকুন। এর মধ্যে তেঁতুল ভিজিয়ে তার ক্বাথটা দিয়ে দিন। এ বার কাঁকড়া দিয়ে আঁচ কমিয়ে রান্না করুন। নামানোর আগে নারকেলের দুধ ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

ফুড ও লোকেশন সৌজন্য:দ্য ডেলি এক্স হপ্পাম

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Chef Food and Recipe

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}