তাঁত, সিল্ক, কাঞ্জিভরম, জামদানি, বালুচরী— নতুন বছরে পছন্দের তালিকায় থাকবে কোনগুলি? ছবি- সংগৃহীত
বাঙালির কাছে নববর্ষ মানেই ভরপুর বাঙালিয়ানা। শাড়ি, ধুতি-পাঞ্জাবির জমজমাট মেলবন্ধন। এখনও বাঙালি সাজ মানেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে লালপাড় সাদা বা হলুদ শাড়ির বনেদিয়ানা। এ দিকে, আলমারি ভর্তি শাড়ি। তবু নতুন বছরে পরনে নতুন ধরনের শাড়ি থাকবে না, তা কি হয়? সঙ্গে দোসর আবার ‘চৈত্রসেল’। সে তো বাঙালির আবেগের আর এক নাম। গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট বা হাওড়ার বড়বাজার, ভিড় যতই হোক না কেন, তা ঠেলে, ঘেমেনেয়ে জামাকাপড় কেনার মজাই আলাদা। মা, কাকিমাদের কাছে পয়লা বৈশাখ মানে তাঁতের শা়ড়ি। কিন্তু গরমের তপ্ত দিনে শাড়ি সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া নতুন প্রজন্মও কি সেই তাঁতের শাড়িতেই আটকে? আবার, বৈশাখ মানেই তো বিয়ের মরসুম। শাড়ি কেনার আগে সে সব অনুষ্ঠানের কথাও মাথায় রাখতে হয়। কিন্তু এই গরমে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরার জন্য কোন কোন ধরনের শাড়ি এ বছর থাকতে পারে আপনার আলমারিতে, তার হদিস রইল এখানে।
১) অর্গানজ়া
এই গরমে পাতলা, ফিনফিনে অর্গানজ়া শা়ড়ি থাকতেই পারে পছন্দের তালিকায়। সিল্ক নয়, অথচ সিল্কের মতোই দেখতে এই শাড়ি খুব একটা ভারী হয় না। তাই নতুন শাড়ি পরছেন যাঁরা, তাঁদের পছন্দের তালিকায় থাকতে পারে এই শাড়িটি। পয়লা বৈশাখের সকালে এমন একটি অর্গানজ়া পরলে সঙ্গীর চোখ অন্য দিকে যাওয়ার উপায় থাকবে না। মূলত দক্ষিণ ভারতে তৈরি এই শাড়ি এখন কলকাতার সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। তবে অর্গানজ়া কেনার সময়ে শাড়ির স্বচ্ছতা দেখে তবেই কিনবেন।
২) কাঞ্জিভরম
সাবেক মেজাজের একটি কাঞ্জিভরম থাকতেই পারে কেনাকাটার তালিকায়। দক্ষিণী এই শাড়িটি সাধারণত সিল্কেরই হয়। তাই নতুন বছরের সকালে না পরে রাতে কোনও অনুষ্ঠান থাকলে কাঞ্জিভরম কিন্তু একটি বিকল্প হতেই পারে।
৩) সুতির বালুচরী
বালুচরী শুনলেই আগে সিল্কের কথা মাথায় আসে। আসল বালুচরীর জন্ম কিন্তু মুর্শিদাবাদের বালুচর গ্রামে। পরে সেই শাড়ি ছেয়ে যায় বিষ্ণুপুরের আনাচকানাচে। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বাংলার বিষ্ণুপুরের তাঁতিরা সুতির বালুচরীও বুনছেন। সুতির বালুচরীর পাড় এবং আঁচল জুড়ে থাকে মহাকাব্যের গাথা। এই শাড়ি সিল্কের হলে অবশ্যই একটু ভারী হবে। গরমের দিনে তা সামলানো বেশ কষ্টকর। তাই এই বছর গরমে পরনে থাকতেই পারে সুতির বালুচরী। তা হলে আর গরমে কষ্ট পেতে হবে না। আবার অন্যদের থেকে দেখতেও একটু আলাদা হবে। বছরের প্রথম দিনের সাবেক উদ্যাপনের সাজ হয়ে উঠবে অনবদ্য। সঙ্গে সাদা ফুল জড়ানো হাতখোঁপা আর ছোট টিপের বাহার তো আছেই।
৪) পোচমপল্লি
হায়দরাবাদ থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পোচমপল্লি গ্রামেই এই শাড়ির জন্ম। অনেকটা ওড়িশার ইক্কতের মতো দেখতে এই পোচমপল্লি শাড়ি তৈরি হয় টাই অ্যান্ড ডাই পদ্ধতিতে। নতুন বছরে শুধু যে লালপাড় সাদা শাড়ি পরতে হবে এমন কোনও মানে নেই। তাই সুতির বা সিল্কের রং-বেরঙের একটি পোচমপল্লি শাড়ি থাকতেই পারে নববর্ষের কেনাকাটায়। অন্যান্য শাড়ি থেকে এই পোচমপল্লি আলাদা হয়েছে তার রঙের জন্য। এই শাড়িতে রঙের ব্যবহার এত উজ্জ্বল, যে দেখলেই মন ভাল হয়ে যায়।
৫) ভেলভেটের শাড়ি
ঘন নীল বা মেরুন একরঙা ভেলভেটের শাড়ি পরলে ভিড়ের মধ্যেও আলাদা করে সকলের চোখ আটকাবে আপনার দিকে। পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যা হোক বা বৈশাখী পূর্ণিমাতে কোনও বিয়ের মণ্ডপ, এই শাড়ি কিন্তু একেবারে আদর্শ। তবে ভেলভেটের শাড়ি পরে আরাম লাগলেও শাড়ির পাড় এবং আঁচলে সাধারণত ভারী জরি এবং সিক্যুয়েন্সের কাজ থাকে। তাই অন্যান্য শাড়ির চেয়ে ওজন বেশি হওয়া স্বাভাবিক।
৬) লিনেন জামদানি
শাড়ি পরতে ভালবাসেন অথচ সংগ্রহে একটিও জামদানি থাকবে না, তা কি হয়? তবে অনেকেই বিশ্বাস করেন, জামদানি এক বার জলে পড়লেই না কি তা অন্তঃসারশূন্য হয়ে যায়। তাই জামদানি কিনে টাকা জলে দিতে চান না কেউ কেউ। তবে তার বদলে শাড়ির তালিকায় থাকতেই পারে লিনেন জামদানি। বচ্ছরকার দিনে বাড়িতে বন্ধুদের নিয়ে বৈশাখী আড্ডাই হোক বা প্রিয়জনের সঙ্গে রেস্তরাঁয় খেতে যাওয়া, পরনে লিনেন জামদানি কিন্তু থাকতেই পারে। সঙ্গে খোলা চুলে কানের পাশে ফুল, ছোট্ট টিপ আর হালকা লিপস্টিক। ব্যস, এটুকুতেই কাজ হবে।
৭) ক্রেপ আজরাখ
ক্রেপ ফ্যাব্রিকের উপর গুজরাতের আজরাখ প্রিন্ট যখন মিলেমিশে যায়, তখন তা আরও মোহময়ী হয়ে ওঠে। আর এই মোহময়ী শাড়িটি পরে বৈশাখী আড্ডায় গেলে অন্য পাঁচ জনের চেয়ে আপনি যে আলাদা হয়ে উঠবেন, তা বলাই বাহুল্য। ক্রেপ এমনিতেই খুব হালকা। তাই গরমের দিনে পরতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আজরাখ প্রিন্টের শাড়ি কিন্তু সুতিরও হয়। ক্রেপ হলে দাম স্বাভাবিক ভাবেই একটু বেশি হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy