—প্রতীকী চিত্র।
কিছু দিন ধরে এক অদ্ভুত সমস্যায় পড়েছেন রিয়া। পেশায় স্কুলশিক্ষিকা হওয়ায় পড়ুয়াদের খাতা দেখা ও লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয় রিয়াকে। কিন্তু ইদানীং কলম ধরলেই হাতে অসম্ভব যন্ত্রণা অনুভব করেন। কিন্তু ওই একই হাতে অন্য কাজ করতে অসুবিধে হচ্ছে না তাঁর! পড়ানোর সময়ে বোর্ডে লিখতে গেলেও হাত দিব্যি চলছে। এমনকি, ‘টাইপ’ করতেও অসুবিধে বোধ করেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে গিয়ে রিয়া জানতে পারলেন, ‘রাইটার্স ক্র্যাম্প’ নামে এক স্নায়বিক রোগে ভুগছেন তিনি।
রোগ যে ধরনের
স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জয়ন্ত রায় বলছেন, “রাইটার্স ক্র্যাম্প এক ধরনের ‘টাস্ক স্পেসিফিক ডিসটনিয়া’। কোনও নির্দিষ্ট কাজ করতে গেলে (এ ক্ষেত্রে লেখালিখি) যন্ত্রণা হওয়া বা কাজ শেষ করতে না পারা। সচরাচর দেখা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে একই পেশির সাহায্যে কোনও কাজ করতে থাকলে এই সমস্যা হয়। কিন্তু কী ভাবে? মস্তিষ্ক সব সময় নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পেশিগুলিকে ঠিক ভাবে কাজ করার জন্য কিছু ‘সিগন্যাল’ বা সঙ্কেত দিয়ে থাকে। কিন্তু, যখন কোনও নির্দিষ্ট, চেনা কাজ করার ফলে সেই পেশিগুলি অতিরিক্ত ব্যবহৃত হয়, তখন মস্তিষ্কের সঙ্কেত কোনও পেশিকে ভুল পথে চালিত করতে পারে। আর তখনই টাস্ক স্পেসিফিক ডিসটনিয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এই ধরনের স্নায়বিক সমস্যার সবচেয়ে সাধারণ উদাহরণ হল রাইটার্স ক্র্যাম্প।” কিন্তু এ ছাড়াও নানা কাজে দেখা দিতে পারে এই রোগ। যেমন, নিয়মিত সেলাইয়ের অভ্যেস থাকলেও এক সময় হাত আটকে যায়। কখনও আবার তবলা, ভায়োলিনের মতো বাদ্যযন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে বাজানোর ফলে সমস্যা দেখা দেয় (মিউজ়িশিয়ানস্ হ্যান্ড)। মূলত, দীর্ঘদিন ধরে কোনও নির্দিষ্ট কাজ যখন একই ভাবে করার অভ্যেস হয়ে যায়, তখন পাল্লা দিয়ে সেই কাজে ব্যবহৃত পেশিগুলির উপরেও চাপ পড়ে। এর ফলেই রাইটার্স ক্র্যাম্প দেখা দিতে পারে। আবার, বংশানুক্রমেও এই রোগ হতে পারে।
নির্ণয় যে ভাবে
আলাদা করে কোনও পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় সম্ভব নয়। যদি দেখা যায়, দৈনন্দিন কোনও নির্দিষ্ট কাজ করতে গেলে বার বার হাতে ব্যথা হচ্ছে, কিন্তু একই হাতে অন্য কাজ করতে কোনও অসুবিধে হচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। এ ছাড়াও, রাইটার্স ক্র্যাম্পের ক্ষেত্রে, হঠাৎ হাতের লেখা বদলে গেলে বা দীর্ঘ দিন ধরে লেখার গতি কমে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। ডা. জয়ন্ত রায় বলছেন, “বহু ক্ষেত্রে রাইটার্স ক্র্যাম্পের মতো টাস্ক স্পেসিফিক ডিসটনিয়া দেখা দিলে পরবর্তীতে আরও নানা ধরনের স্নায়বিক বা মস্তিষ্কের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আগে থেকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া থাকলে অন্য রোগের জন্যও যথাযথ পদক্ষেপ করা সম্ভব হয়।”
বয়স মানে না
সাধারণত, তিরিশ থেকে চল্লিশ বছর বয়সের মধ্যে রাইটার্স ক্র্যাম্পের মতো সমস্যা সবচেয়ে বেশি প্রকট হয়। কোনও ক্ষেত্রে আবার দেখা যায়, কম বয়সে, অর্থাৎ স্কুল, কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যেও এই সমস্যা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে, বংশানুক্রমিক কোনও প্রভাব রয়েছে কি না, তা আগে খতিয়ে দেখেন চিকিৎসকেরা। স্কুল বা কলেজজীবনে এই রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসকের সাহায্যে উপযুক্ত চিকিৎসা শংসাপত্র সঙ্গে রাখা যেতে পারে। তা না হলে পরীক্ষায় লেখার সময়ে গতি কমে আসা বা হাতের লেখায় প্রভাব পড়ায় ক্ষতি হতে পারে।
নিয়ন্ত্রণে থাকুক রোগ
রাইটার্স ক্র্যাম্পের মতো স্নায়বিক রোগ চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যদিও পুরোপুরি এ রোগ সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ, যখন কিছু নির্দিষ্ট পেশির কর্মদক্ষতা কমে আসে, তখন অন্য পেশির উপরে জোর দেওয়ার অভ্যাস করাই শ্রেয়। যেমন, বহু ক্ষেত্রে ডান হাতে কলম ধরে লেখার অভ্যেস থাকায় সমস্যায় পড়েন রোগীরা। চিকিৎসকের পরামর্শ, যে মুহূর্তে রাইটার্স ক্র্যাম্প ধরা পড়বে, তখন থেকেই বাঁ হাতে লেখার অভ্যেস শুরু করলে লাভ হবে। এই রোগে আক্রান্ত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে কলম ধরতে অসুবিধে হয় ঠিকই। কিন্তু বোর্ডে লিখতে কোনও অসুবিধে হয় না। ফলে বোর্ডে লেখা অভ্যাস করা উচিত তাঁদের। লেখকদের এমন সমস্যা হলে টাইপ করার অভ্যাসটি বাড়ানো দরকার। এ ছাড়াও, কিছু ওষুধের মাধ্যমে সাময়িক ভাবে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শে বোটক্স ইঞ্জেকশন নিলেও রাইটার্স ক্র্যাম্পকে বেশ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy