ফাইল চিত্র।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত মায়ের জন্য সর্বক্ষণ দেখাশোনা করার লোক রেখে গিয়েছিলেন অনাবাসী ছেলে। ফোনে তাঁর থেকেই শুনতেন মায়ের খবর। অথচ, বৃদ্ধাকে দেখার নামে রীতিমতো ‘শাসন’ চালাতেন সেই দেখাশোনা করার কর্মী। পান থেকে চুন খসলেই বৃদ্ধার কপালে জুটত মার। বেশিক্ষণ চুপ করিয়ে রাখতে ঘুমের ওষুধও দেওয়া হত তাঁকে। এক দিন সেই ছেলের কাছে খবর গেল, মায়ের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশি তদন্তে উঠে এল, শরীরে মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধের উপস্থিতিই মৃত্যুর কারণ!
খাস কলকাতার এই ঘটনার মতো বয়স্কদের হেনস্থা করার এমন অজস্র উদাহরণের কথা প্রায়ই শোনা যায় বলে পুলিশের দাবি। কখনও বৃদ্ধা মাকে ছেলের লাঠিপেটা করা, কখনও বৃদ্ধ বাবাকে ছেলে-বৌমার বাড়িতে তালা দিয়ে রেখে যাওয়া। সেই বাবারই জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে খাবার চাওয়ার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে। যা দেখে নানা মহলে আলোচনা শুরু হয়। কখনও পুলিশেও মামলা দায়ের হয়। অভিযোগ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিষয়গুলি থানা পর্যন্ত গড়ায় না। একটা সময়ের পরে ‘এ ভাবেই বাঁচতে হবে’ বলে ধরে নেন বয়স্কেরা।
এর উল্টো পথে হেঁটে বয়স্কদের জন্য আরও ভাল ভাবে বাঁচার পরিসর তৈরির লক্ষ্যে মঙ্গলবার একটি সচেতনতার প্রচারমূলক কর্মসূচির আয়োজন করেছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সদ্য চালু হওয়া জেরিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগ। সেখানে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং বয়স্ক নাগরিকদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন প্রবীণদের জন্য তৈরি কলকাতা পুলিশের ‘প্রণাম’ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তারা। উদ্যোক্তাদের দাবি, বুধবার ‘বিশ্ব বয়স্ক হেনস্থা সচেতনতা দিবস’-এর আগের দিন ওই কর্মসূচি থেকে নবীণ এবং প্রবীণ প্রজন্মের আরও ভাল সহাবস্থানের কথা উঠে এসেছে।
তাঁরা জানাচ্ছেন, ২০০৬ সালের ১৫ জুন একটি সংস্থা বয়স্কদের বিরুদ্ধে হওয়া হেনস্থার ঘটনার প্রতিরোধ নিয়ে প্রথম কর্মসূচি করে। পরবর্তীকালে তারা বিশ্ব জুড়ে এ বিষয়ে প্রচার চালাতে শুরু করে। ২০১১ সালে ১৫ জুন দিনটিকে ‘বিশ্ব বয়স্ক হেনস্থা সচেতনতা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) দেখেছে, প্রতি ছ’জন বয়স্কের এক জন কোনও না কোনও ভাবে হেনস্থার শিকার হন। মানসিক হেনস্থাকেও এর মধ্যে রাখার কথা বলেছে ডব্লিউএইচও। বিশ্বে হেনস্থার শিকার হওয়ার বয়স্কের সংখ্যা চলতি বছরে ১৪ কোটি ছাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই এমন কর্মসূচি জরুরি বলে উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের জেরিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানান, ডব্লিউএইচও দেখেছে, বয়স্কদের সুস্থ রাখাই একটা চ্যালেঞ্জ। ভারত সরকারও প্রবীণদের সার্বিক চিকিৎসার লক্ষ্যে চালু করেছে ‘ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর হেলথকেয়ার অব এল্ডারলি’ (এনপিএইচই)। তারই অঙ্গ হিসেবে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে একটি করে ‘রিজিয়োনাল জেরিয়াট্রিক সেন্টার’ তৈরি হওয়ার কথা। পূর্ব ভারতে এই হাসপাতালের জেরিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগই প্রথম, যেখানে এমডি মেডিসিনের কোর্সও চালু হতে চলেছে। সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকে এখন এই বিভাগের বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ চালু হয়েছে। অরুণাংশবাবুর কথায়, ‘‘শুধু রোগী দেখা বা প্রশিক্ষণ দেওয়াই নয়, বয়স্কদের বেঁচে থাকার সুস্থ পরিবেশ তৈরির বিষয়ে সচেতনতার প্রচারও এই বিভাগের কাজ। যার অঙ্গ হিসেবেই এই কর্মসূচি।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy