দাঁত মাজতে গিয়ে রক্ত? সতর্ক থাকুন। ফাইল ছবি
বৃষ্টি হোক বা রোদ্দুর উঠুক, এই আবহে গলা খুসখুস আর জ্বর জ্বর লাগলেই আতঙ্কে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। আধা চেনা কোভিড-১৯ ভাইরাস সম্পর্কে গবেষকদের সঙ্গে সঙ্গে বিভ্রান্ত সাধারণ মানুষও। সবার একটাই চাহিদা— দূর হয়ে যাক অত্যন্ত ছোঁয়াচে আর ভয় ধরানো ভাইরাস। তাই জ্বর বা করোনার সামান্যতম উপসর্গ দেখা দিলে সকলেই আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে পড়েন। এরই মধ্যে বৃষ্টির জমা জলকে সঙ্গী করে ক্রমশ বাড়ছে এডিস ইজিপ্টাই মশককুল। আর তার সঙ্গী হয়েছে ডেঙ্গি ভাইরাস। আছে ম্যালেরিয়ার জীবাণুরাও। তাই জ্বর হলে একা সার্স কোভ-২-কে দায়ী করে লাভ নেই। জ্বর ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ারও উপসর্গ হতে পারে।
ডেঙ্গি জ্বরের এক উল্লেখযোগ্য লক্ষণ প্লেটলেট বা অণুচক্রিকা কমে যাওয়া। প্লেটলেট কমে গেলে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে। এই জ্বরের জীবাণু হামলা হতে পারে যে কোনও অঙ্গেই। জ্বরের মধ্যে দাঁত মাজতে গিয়ে আচমকা মাড়ি থেকে রক্ত বেরলে ডেঙ্গির রক্ত পরীক্ষা করা উচিত বললেন ডেন্টাল সার্জন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। ডেঙ্গি হলে প্লেটলেট কমে গিয়ে রক্ত পাতলা হয়ে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে। যাঁদের দাঁতের গোড়ায় পাথর জমে থাকে এবং জীবনে কখনও স্কেলিং করাননি, তাঁদের ডেঙ্গি হলে মাড়ি থেকে রক্তপাতের ঝুঁকি বেশি। করোনার অতিমারির সময়ে একটু সতর্ক হলে ডেঙ্গির মোকাবিলা করা খুব কঠিন নয়। কয়েকটা সাধারণ ব্যাপারে নজর দিলেই প্রাথমিক পর্যায়ে ডেঙ্গি নির্ণয় করা যায়। শুরুতে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে রোগ নির্ণয়ের পর ওষুধ ও সতর্কতা মেনে ডেঙ্গির জটিলতা অনেকাংশেই কমিয়ে রাখা যায়, বললেন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রতি বছরেই বর্ষা শেষের এই সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া-সহ অন্যান্য জ্বরের ঘটনা তুলনামূলক ভাবে বেশি থাকে। তবে এই বছরে নভেল করোনা ভাইরাসের অতিমারি হওয়ায় সাধারণ ভাইরাল ফিভার হলেও কোভিড-এর ভয়ে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আবার অনেকেরই ডিনায়াল সিনড্রোম থাকায় ডেঙ্গি হোক বা করোনা, সাধারণ জ্বর ভেবে খুশি থাকেন। শুভঙ্করবাবু বললেন যে, “সার্স কোভ-২ ছাড়াও তিন চার রকমের ডেঙ্গি ভাইরাসের সংক্রমণ হলে জ্বর হয়। আমার মতে, মারাত্মক জ্বর হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্যারাসিটামল ছাড়া কোনও ব্যথার ওষুধ খাওয়া চলবে না। তীব্র জ্বর, মাথা ব্যথা, তাঁর তাঁর কথায়, ‘শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা ও সামগ্রিক দুর্বলতা— এই রকম উপসর্গ দেখলে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার টেস্ট করিয়ে নিতে হবে। অনেক সময় হেমারেজিক ডেঙ্গি বা ডেঙ্গির কারণে মারাত্মক শক সিনড্রোমের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে। তাই জ্বর হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলে গেলে বা সেলফ মেডিকেশন করলে আচমকা বিপদে পড়ার ঝুঁকি থাকে।”
আরও পড়ুন: কীভাবে শুরু মাস্কের ব্যবহার, এই মুহূর্তে কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
শুভঙ্করবাবু আরও জানান, বেশির ভাগ মানুষ মৌখিক স্বাস্থ্য বা ওরাল হাইজিন রক্ষার ব্যাপারে অত্যন্ত উদাসীন। তাঁরা শারীরিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলেও সঠিক ভাবে দাঁত মাজা বা মুখগহ্বরের সুস্বাস্থ্য নিয়ে খুব একটা ভাবনা-চিন্তা করেন না। তাই অনেকেই দুর্বল মাড়ি নিয়ে মাঝে মধ্যেই ভোগেন।
হেমারেজিক ডেঙ্গি বা ডেঙ্গির কারণে মারাত্মক শক সিনড্রোমের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে। ফাইল ছবি।
অনেক সময় হেমারেজিক ডেঙ্গির প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে। এই অসুখে রক্ত জমাট বাঁধায় সহায়ক অণুচক্রিকা বা প্লেটলেট কাউন্ট কমে যাওয়ায় রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে। শুরুতে সজাগ হলে বড় বিপদের হাত এড়ানো যায় সহজেই। ডেন-১ থেকে ডেন -৪, যে কোনও ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় হয়ে ওঠে। জোটবদ্ধ হয়ে ডেঙ্গির জীবাণুদের সঙ্গে লড়াই করে। আর সমস্যার সূত্রপাত কিন্তু এখানেই। মুশকিলটা হল, ডেঙ্গির ভাইরাস আর রক্তের কণা প্লেটলেট বা অণুচক্রিকার গঠন অনেকটা একই রকম হওয়ায় রক্তের শ্বেত কণিকা এদের আলাদা করে চিনতে পারে না। এই কারণেই শ্বেত কণিকা ডেঙ্গির ভাইরাসকে ধ্বংস করার সঙ্গে সঙ্গে অণুচক্রিকা বা প্লেটলেটকেও আক্রমণ করে তাদেরও মেরে ফেলে। এই কারণেই রক্তের প্লেটলেট দ্রুত কমতে শুরু করে। যত বিপত্তির সূত্রপাত এর থেকেই। হঠাৎ হঠাৎ শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তপাত শুরু হতে পারে।
যাঁদের মাড়ি ও দাঁত দুর্বল, তাঁদের মাড়ি থেকে রক্তপাতের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি। হাই ফিভারের সঙ্গে সঙ্গে মাড়ি থেকে রক্তপাত, এই সমস্যা হলেই দ্রুত ডেন্টাল সার্জেনের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বললেন শুভঙ্করবাবু।
হাই ফিভারের সঙ্গে সঙ্গে মাড়ি থেকে রক্তপাত, এই সমস্যা হলেই দ্রুত ডেন্টাল সার্জেনের পরামর্শ নিন। ফাইল ছবি।
বিভিন্ন কারণে মাড়ি থেকে রক্ত বেরতে পারে। সব থেকে কমন সমস্যা জিঞ্জিভাইটিস বা মাড়ির সমস্যা। অবশ্য রক্তের ক্যানসারের মতো অসুখেও মাড়ি থেকে রক্ত বেরনোর ঝুঁকি থাকে। তবে ডেঙ্গি জ্বরে মাড়ি থেকে রক্ত বেরনোর অন্যতম কারণ অণুচক্রিকা কমে যাওয়া। রোগীকে পরীক্ষা করে এবং দরকার মনে করলে কয়েকটি রক্ত পরীক্ষা করে ডেন্টাল সার্জন ব্যপারটা বুঝতে পারবেন। কোনও অবস্থাতেই মাড়ি থেকে রক্ত বেরনো অবহেলা করা উচিত নয়। জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে শুধুই জ্বরের ওষুধ খেতে হবে। ব্যথা কমানোর ওষুধ কোনও অবস্থাতেই খাবেন না। ডাক্তারের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। দরকার হলে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া ও কোভিড টেস্ট করাতে হতে পারে। মাস্ক ছাড়া বাইরে যাবেন না, সুস্থ থাকুন।
আরও পড়ুন: আদৌ কি দ্বিতীয় বার করোনা সংক্রমণ হতে পারে? কী বলছেন চিকিৎসকরা?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy