Advertisement
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

সাজ হোক সুরভিত

রূপচর্চায় সুগন্ধীর ব্যবহার বহু যুগ ধরে। জেনে নিন অ্যারোমাথেরাপির গুণরূপচর্চায় সুগন্ধীর ব্যবহার বহু যুগ ধরে। জেনে নিন অ্যারোমাথেরাপির গুণ

বাড়িতে নিজেও স্নানের আগে অল্প মাসাজ নিয়ে নিতে পারেন।

বাড়িতে নিজেও স্নানের আগে অল্প মাসাজ নিয়ে নিতে পারেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

শোনা যায়, রানি ক্লিয়োপেত্রা মার্ক অ্যান্টনির সঙ্গে যখন দেখা করতে যান, তখন জাহাজ বোঝাই করে সুগন্ধী নিয়ে গিয়েছিলেন। সুগন্ধে স্নাত সেই বাতাস ক্লিয়োপেত্রার আগমন বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল মার্ক অ্যান্টনিকে। ক্লিয়োপেত্রার সৌন্দর্যচর্চায় ব্যবহার হত নানা গাছ, ফুল, পাতার অ্যারোমা। গ্রিস, চিন, প্রাচীন ভারত থেকে শুরু করে পারস্য দেশেও অ্যারোমাথেরাপির ব্যবহার বহু যুগ ধরে চলে আসছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এক ফরাসি শল্যচিকিৎসক সৈনিকদের ক্ষত সারাতেও শরণাপন্ন হয়েছিলেন অ্যারোমাথেরাপির।

অ্যারোমাথেরাপি কেন?

ফুলের পাপড়ি, গাছের পাতা, কাণ্ড ইত্যাদি প্রাকৃতিক নির্যাসেই তৈরি হয় বিবিধ অ্যারোমা অয়েল। যেহেতু প্রাকৃতিক, তা ত্বক যত্নে লালন করে। অ্যারোমা স্পেশ্যালিস্ট ড. ব্লসম কোচার বললেন, ‘‘সুগন্ধীর প্রভাব বহু বিস্তৃত। শুধু ত্বকেই নয়। বরং মাথা এবং মনকেও শান্ত করে। রোজকার টার্গেট দৌড়ে ক্লান্তি আর হতাশার আঁচড় পড়ে যায় ত্বকে। ফলে ত্বকের এজিং, বলিরেখা। এ সব থেকে মুক্তি দিতে পারে এক ফোঁটা সুগন্ধী তেল।’’ মাসাজ থেকে শুরু করে রোজকার স্নানের জলে কয়েক ফোঁটা অ্যারোমা অয়েল দিয়ে দিতে পারেন। সামান্য স্নানই পালটে দেবে আপনার সকালের মুড।

ত্বকের যত্নে অ্যারোমা অয়েল

ব্রণ ও অ্যাকনের সমস্যায়: ব্রণ ও অ্যাকনের ক্ষেত্রে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল সেই দাগের উপরে লাগিয়ে নিন। সকালে উঠে দেখবেন, ত্বক অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে। যেহেতু এই তেল অ্যান্টি ভাইরাল, অ্যান্টি ব্যাকটিরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাল, তাই এর ব্যবহারে কাটা, পোড়ার দাগ থেকে শুরু করে ফাঙ্গাল ইনফেকশনও সেরে যায়। লেমনগ্রাস, সিনামন, বেসিল অয়েলও খুব ভাল কাজ করে ত্বকে অ্যাকনের সমস্যায়।

আরও পড়ুন: এ সব উপায়ে ব্যবহার করুন অ্যালো ভেরা, ঝরবে মেদ, ভাল থাকবে চুল-ত্বক

বলিরেখায়: কথায় আছে, ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যায়। কিন্তু আদপেই যদি ত্বক অতটা স্পর্শকাতর হয়, সে ক্ষেত্রে ফুলের শরণাপন্ন হওয়াই ভাল। এই ধরনের ত্বকের জন্য রোজ় অয়েল ভাল কাজ দেবে। স্ট্রেচমার্কস বা বলিরেখার দাগ থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রত্যেক দিন রোজ় অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। মরিঙ্গাও খুব ভাল কাজে দেয়।

সানবার্নে: সানবার্ন কমাতে জেরেনিয়ামের পাপড়ি থেকে নিঃসৃত তেলের ব্যবহার বহু পুরনো। ড. কোচার জানালেন, ‘‘সানবার্ন কমাতে ক্যামোমাইল, ল্যাভেন্ডার ও পিপারমিন্ট অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন।’’

পিগমেন্টেশনে: সূর্যালোকে অনেকক্ষণ থাকলে পিগমেন্টেশনও হয়। ফলে ত্বকের ইভন টোন নষ্ট হয়ে যায়। ছোট ছোট স্পট পড়তে দেখা যায়। পোমেগ্র্যানেট ও ট্যাঞ্জারিন অয়েলে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট প্রপার্টি বেশি মাত্রায় থাকায় পিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে।

বাষ্পে ভাসো

ঘুম থেকে উঠেই সারা দিনের শেডিউল এসে যখন মাথার উপরে কড়া নাড়ে, তখন কেমন লাগে? লম্বা ছুটি নিয়ে কোথাও পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। তবে অ্যারোমা অয়েলের সঙ্গে ছোট্ট সফরে যেতেই পারেন বাষ্পে ভেসে। ঘুম থেকে ওঠার কিছু ক্ষণ পরে একটি পাত্রে জল ফুটিয়ে তার মধ্যে এক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল এবং এক ফোঁটা সুইট আমন্ড অয়েল দিয়ে মিনিট পাঁচেক ভেপার নিন। মুডও সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয়ে যাবে সারা দিনের জন্য। ত্বকও সুগন্ধের রক্ষাকবচে ঢাকা পড়ে যাবে।

স্নানঘরে

সকালে বাষ্পে ভাসার সময় না পেলে স্নানঘরে সে আয়োজন করে নেওয়াই যায়। স্নানঘরের দরজা-জানালা সবচেয়ে আগে বন্ধ করে দিন। ঈষদুষ্ণ জলে দু’ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল আর তিন ফোঁটা জেসমিন অয়েল দিন। এ বার হাত দিয়ে নাড়িয়ে নিন। দু’টি সুগন্ধী মোমবাতিও জ্বেলে নিতে পারেন। আর ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকুক হালকা সন্তুর বা মনের মতো মিউজ়িক। পাঁচ মিনিটের স্নানই কিন্তু সব ক্লান্তি কাটিয়ে আপনাকে তৈরি করে দেবে গোটা একটা দিনের জন্য। বাড়ি ফিরেও সুগন্ধী স্নান সারতে পারেন।

তৈলচর্চিত

সালঁ ও স্পায়ে তো অ্যারোমা অয়েলের ব্যবহার হয়েই আসছে। বাড়িতে নিজেও স্নানের আগে অল্প মাসাজ নিয়ে নিতে পারেন। এর জন্য দশ ফোঁটা অরেঞ্জ অয়েল, পাঁচ ফোঁটা চন্দন তেল ও চার টেবিল চামচ নারকেল তেল একটি পাত্রে মিশিয়ে নিন। এ বার ভাল করে ত্বকে তা মাসাজ করুন। মিনিট দশেক মাসাজ করার পরে তেল গায়ে বসার জন্য মিনিট দশেক অপেক্ষা করুন। ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করে নিন। সে দিন সাবান না মাখাই ভাল।

সুরভিত কেশদাম

চুল পড়ায়: শীত আসতেই চুল পড়ার মরসুমও যেন শুরু। এই সমস্যার মোকাবিলায় ব্যবহার করতে পারেন ল্যাভেন্ডার, পিপারমিন্ট বা রোজ়মেরি অয়েল। তবে কোনও ক্যারিয়ার অয়েলের (যেমন নারকেল তেল) মধ্যেই দু’-তিন ফোঁটা অ্যারোমা অয়েল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ভাল করে মাসাজ করতে হবে। চুলের দৈর্ঘ্য ও ঘনত্বের উপরে তেলের পরিমাণ নির্ভর করবে। পরে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে এক দিন এটি করতে পারেন।

খুসকিতে: শীতের অন্যতম সমস্যা খুসকি। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে লেমনগ্রাস অয়েল কাজে লাগাতে পারেন। তবে এর ব্যবহার করতে হবে প্রত্যেক দিন। তাই রোজ চুলে অল্প তেল বা শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার, যা-ই লাগান না কেন, তাতেই কয়েক ফোঁটা লেমনগ্রাস অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন।

শিরোধারা: আয়ুর্বেদিক এই পদ্ধতিতে কপালের ঠিক মাঝখানে তরল ঢালা হয়। এই তরলে থাকে অ্যারোমা অয়েল, দুধ, বাটারমিল্ক, এমনকি জলও। এতে অনিদ্রা, সাইনাসাইটিসের মতো সমস্যায় আরাম মেেল।

এ ছাড়াও পচৌলি, নেরোলি, ল্যাং ল্যাং— অনেক ধরনের অ্যারোমা অয়েল পেয়ে যাবেন। ব্যবহার করলেই বুঝতে পারবেন, কোন সুগন্ধী তেল আপনার বেশি কাজে লাগবে।

মডেল: ঐশ্বর্য সেন, তরুণিমা চক্রবর্তী; ছবি: জয়দীপ মণ্ডল মেকআপ: চয়ন রায়; হেয়ার: বীথি রায়, লোকেশন: সীমা দেওয়ান’স দ্য হেয়ার কমিশন, বোসপুকুর

অন্য বিষয়গুলি:

Aromatherapy Skin Care
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy