গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
একটা করে দিন পেরোচ্ছে, আর উৎসব এগিয়ে আসছে ক্রমশ। সেই সঙ্গে পুজোর সাজের প্রস্তুতিও তুঙ্গে। সাজের উপলক্ষ যখন দুর্গাপুজো, ষষ্ঠী থেকে দশমীর লুকে তখন চমক থাকতেই হবে। তবে বাঙালি অষ্টমীর সাজ নিয়ে বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চায় না। অষ্টমীর সকাল মানেই শাড়ি আর ধুতি-পাঞ্জাবি। সাদা আর লালে সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়। এ পুজোয় যদি অষ্টমীর সাজের চিরাচরিত ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে বদলে ফেলা যায়, তা হলে কেমন হয়? এমনিও হাওয়া অফিসের তরফে পুজোয় দুযোর্গের পূর্বাভাস আছে। তার উপর এ বছরের পুজোর নির্ঘণ্ট একেবারে আলাদা। পঞ্জিকা বলছে, অষ্টমীর অঞ্জলির সময় পেরিয়ে যাবে চড়া রোদ ওঠার আগেই। সে কারণে অনেকেই অষ্টমীর সাজ নিয়ে দোটানায়। ঐতিহ্য আর আবেগের কথা মাথায় রেখেই শাড়ি-পাঞ্জাবির বিকল্পের খোঁজ শুরু হয়েছে। পুজোর ১৫ দিন আগেও মনের মতো কিছু ভেবে উঠতে পারেননি? অষ্টমীতে সাবেকি সাজের বিকল্প কী হতে পারে, আনন্দবাজার অনলাইন তা জানতে চেয়েছিল শহরের পরিচিত কয়েক জন পোশাকশিল্পীর কাছে। কী বললেন তাঁরা?
অষ্টমীর সাজে সাবেকিয়ানার ছক ভাঙলেও পোশাকে সাদা-লালের ছোঁয়া রাখা যেতে পারে বলে মত পোশাকশিল্পী সন্দীপ জয়সওয়াল। এই দুটো রং ছাড়া অষ্টমী অসম্পূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। তাই মেয়েদের ক্ষেত্রে অষ্টমীর সাজে শাড়ির বিকল্প হতে পারে লাল রঙের ড্রেপ আনারকলি। সন্দীপ বলেন, ‘‘সঙ্গে লাল ঘেঁষা দোপাট্টা আর কানে সোনালি ঝুমকা। খোলা চুলে অষ্টমীর সাজ সম্পূর্ণ।’’ এ তো গেল মেয়েদের সাজ। পুজোর সাজে সমানতালে পাল্লা দেয় পুরুষেরাও। টলিউড তারকা থেকে পাশের বাড়ির ছেলেটি— অষ্টমীর দিন পাঞ্জাবি-ধুতিতেই সেজে উঠতে পছন্দ করেন অনেকে। তবে বৃষ্টির ভয়ে অনেকেরই সে পরিকল্পনা আপাতত শিকেয়। সে ক্ষেত্রে ধুতি আর পাঞ্জাবির বদলে আর কী পরা যেতে পারে? সাদা-লালের ছোঁয়া রেখেই যদি পোশাকের নকশায় খানিক বদল আনা যায়, তা হলে কেমন হয়? পোশাকশিল্পী বলেন, ‘‘মন্দ হয় না। হাঁটু ঝুলের বদলে অ্যাসিমেট্রিক্যাল পাঞ্জাবি পরা যেতে পারে। সঙ্গে সিগারেট ট্রাউজ়ার্স ভাল লাগবে। পায়ে থাক রাজস্থানি কাজের মোজারি জুতো।’’ একেবারে অন্য রকম সাজের খোঁজ দিলেন পোশাকশিল্পী।
বাঙালির পুজোর সাজে শাড়ি নেই! এমন কল্পনা করা সহজ নয়। তবে মাঝেমাঝে ছক ভাঙলেও ক্ষতি নেই। পুজোর এই চারটি দিনের জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় থাকে বাঙালি। উৎসবে খাওয়াদাওয়া, আনন্দও যেমন বাঁধনছাড়া হয়, তেমনি সাজগোজও হয় মন খুলে। সাজ নিয়ে চলে পরীক্ষানিরীক্ষা। অনেকেই আছেন যাঁরা শাড়ি পরতে ভালবাসেন, কিন্তু শাড়ি সামলানোর ঝক্কি পোহাতে চান না। তা হলে উপায়? শাড়িরও কিন্তু কিছু রকমফের আছে। সে ক্ষেত্রে কম ঝক্কির রেডিমেড শাড়ি পরা যেতে পারেন বলে জানাচ্ছেন শহরের অন্য এক পোশাকশিল্পী অনুপম চট্টোপাধ্যায়। জিন্স দিয়েও শাড়ি পরার কথা মনে করিয়ে দিলেন তিনি। আর কোনও বিকল্প? অনুপমের কথায়, ‘‘স্কার্টের সঙ্গে মানানসই টপ পরে ওড়না দিয়ে ড্রেপ করে নিলেই একটা পরিপূর্ণ সাজ হয়ে যাবে।’’ এ ছাড়া সালোয়ার-কামিজ় তো রয়েছেই। আবার ‘কলঙ্ক’ সিনেমায় আলিয়া ভট্টের মতো গোড়ালি ঝুল আনারকলি পরলেও যে সকলের নজরে থাকা যাবে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে লাল-সাদা ছাড়া আর কোন রং থাকতে পারেন অষ্টমীর সাজে? অনুপমের পরামর্শ, প্যাস্টেল ঘেঁষা কিছু রং, যেমন অলিভ সবুজ, হালকা হলুদ ভাল লাগবে। ছেলেরা কুর্তা-পাজামার বদলে ডেনিমের সঙ্গে শর্ট কুর্তা পরতে পারেন। পালাজো দিয়ে কোমরঝুল কুর্তাও পরলে অন্য রকম লাগবে বলে জানালেন পোশাকশিল্পী।
পুজোয় বৃষ্টি হলে শাড়ি সামলানো যে মুশকিল হবে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। সেটা সত্যিই একটা ভাবনার বিষয়। সে ক্ষেত্রে বিকল্প হিসাবে প্রি-স্টিচ শাড়ির খোঁজ দিলেন পোশাকশিল্পী নীল সাহা। আলাদা করে শাড়ির কুঁচি, আঁচল সামলানোর ঝক্কি নেই। শুধু স্কার্টের মতো গলিয়ে নিলেই হবে। এ ছাড়াও লেহঙ্গা শাড়িও বিকল্প হিসাবে ভাবা যেতে পারে। যেতে পারে। নীল বলেন, ‘‘স্যুট-ট্রাউজ়ার্সের সঙ্গে শাড়ি পরা যেতে। খুবই ট্রেন্ডিং এটা। দেখতেও আলাদা লাগবে।’’ ছেলেদের অষ্টমীর ছকভাঙা সাজের জন্য নীল বেছে দিলেন কোরিয়ান সিল্যুয়েটের শার্ট, সুতির ইন্ডিগো শার্ট। যেগুলি পুজোর আমেজ ধরে রাখবে।
সাবেকি না কি ফিউশন— পুজোর সাজকথায় এই দ্বন্দ্ব না রেখে বরং সাবেকি এবং আধুনিকতা মিশে যেতে পারে। উৎসবের আভিজাত্য আর ঐতিহ্য বজায় রেখেই পোশাক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়। চিরাচরিত ভাবনা মাথায় রেখেই অষ্টমীর সাজের নতুন সংজ্ঞা তৈরি তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy