কী কী পোশাকবিধি মেনে চলতেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ? ছবি: সংগৃহীত
ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে কার্যত সমার্থক হয়ে গিয়েছিল উজ্জ্বল রঙের টুপি ও হালকা রঙের দস্তানা। বৃহস্পতিবার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে অতীত হয়ে গেল রানির সেই ঐতিহ্যও। রাজা-রানিদের কথা উঠলেই প্রথমে মাথায় আসে যা খুশি তাই করার স্বাধীনতার কথা। কিন্তু অন্তত পোশাকের দিক থেকে ভাবলে, মোটেও এমন স্বাধীনতা নেই ব্রিটেনের রাজপরিবারের সদস্যদের। অধিকাংশ সময়েই মেনে চলতে হয় কড়া পোশাকবিধি। রানি নিজেও তাঁর ব্যতিক্রম ছিলেন না। কোনও লিখিত আইন না থাকলেও বছরের পর বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্যই হয়ে গিয়েছিল নিয়ম।
সিংহাসনে বসার পর থেকে খুব সচেতন ভাবেই নিজের পোশাক বাছতেন রানি। ১৯৪৭ সালে যুবরাজ ফিলিপের সঙ্গে বিবাহের পর থেকে নরম্যান হার্টনেল, হার্ডি অ্যামিস ও অ্যাঞ্জেলা কেলি নামের তিন পোশাকশিল্পী সামলেছেন রানির পোশাকের দায়িত্ব। অল্প বয়সে রানিকে দেখা যেত সাদা গাউনে। শেষ কয়েক দশক সেই পোশাকের বদলে অধিকাংশ সময় তাঁকে পরতে দেখা গিয়েছে উজ্জ্বল রঙের স্কার্ট। রাজপরিবারের নিয়ম অনুযায়ী সেই স্কার্টের দৈর্ঘ্য হতে হবে একেবারে হাঁটু পর্যন্ত। না কম, না বেশি। তবে স্কার্ট পরলেও পা যেন অনাবৃত না থাকে কোনও মতেই, তা নিশ্চিত করতে হত। রাজপরিবারের যে কোনও মহিলা সদস্যেরই ‘টাইটস’ পরা বাধ্যতামূলক। টাইটস হল এক ধরনের লম্বা পা ঢাকা মোজার মতো পোশাক যা একেবারে চামড়ার সঙ্গে লেগে থাকে। পাশাপাশি ব্রিটেনের রাজপরিবারের রীতি অনুযায়ী যিনি এই টাইট পরবেন, তাঁর ত্বকের রঙের সঙ্গে অবিকল এক হতে হবে টাইটের রং। দিন কয়েক আগে যখন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে শেষ বার জনসমক্ষে দেখা গিয়েছিল, তখনও তিনি পরেছিলেন এই পোশাক।
সাধারণত যে রঙের পোশাক পরতেন রানি, সেই রঙেরই টুপি পরতে দেখা যেত তাঁকে। সিংহাসনে বসার প্রথম দিকে, জনসমক্ষে আসলেই টুপি পরা ছিল বাধ্যতামূলক। কারণ ব্রিটিনের রাজকীয় আচরণশৈলী অনুযায়ী, রানির আলুলায়িত চুল দেখতে পাওয়া ঘোর অনিয়মের বিষয়। তবে কালের নিয়মে সেই রীতি বদলে গিয়েছে। শেষ কয়েক দশক ধরে আর ব্যক্তিগত পরিসরে টুপি বা মুকুট পরতেন না রানি। রাজবাড়ির কর্মচারীদের কেউ কেউ অবশ্য বলেন, টুপি পরতে মোটেই অপছন্দ করতেন না তিনি। বরং টুপি পরলে অনেকের মাঝে থাকলেও দূর থেকে দেখা যেত পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি লম্বা এলিজাবেথকে। যা বেশ পছন্দই করতেন তিনি।
দস্তানার নিয়মটির পিছনে অবশ্য বিজ্ঞানচেতনা রয়েছে বলে দাবি করেন পোশাকশিল্পীদের কেউ কেউ। রানি প্রতি দিন দেশ-বিদেশের বহু মানুষের সঙ্গে দেখা করেন, হাত মেলান। যাতে অন্যের হাত থেকে রোগজীবাণু হাতে না লেগে যায় তার জন্যই নাকি দস্তানার বন্দোবস্ত।
পোশাক পরিচ্ছেদের ক্ষেত্রে রং-ও ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনও ধরনের রাজনৈতিক বার্তা বহন করে, এমন রঙের কোনও পোশাক পরা রাজপরিবারের সদস্যদের জন্য একেবারে নিষিদ্ধ। যদি রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্যে যোগ দিতে যান, তবে অবশ্যই পরতে হবে কালো রঙের পোশাক। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও আজীবন মেনে চলেছেন এই নিয়ম।
এমনকি, নেলপলিশের ক্ষেত্রেও মেনে চলতে হত কড়া নিয়ম। মৃদু গোলাপি ছাড়া সাধারণত আর কোনও রঙের নেলপলিশ পরতেন না রানি। নেলআর্টের কথা রাজপরিবারের কেউ-ই ভাবতে পারেন না।
দীর্ঘ সাত দশক সিংহাসনে থাকার সময়, সমালোচনাও কম হয়নি রানির কিংবা রাজপরিবারের সদস্যদের এ হেন পোশাকবিধি নিয়ে। নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী পোশাক পরাই যে স্বাধীনতা অংশ, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন রানির পুত্রবধূ ডায়ানা থেকে নাতি হ্যারির স্ত্রী মেগান। তবু নিজের অবস্থান বদল করেননি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। রানির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে কি শেষ হল সেই টানাপড়েনও? উত্তর দেবে সময়ই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy