পুজোর বাজারে বেশি কদর কোন ধরনের ব্যাগের? ছবি: আকাশ দেবনাথ
পুজোয় প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরতে বেরোলেন, হালকা রূপটানের জন্য নিতে হবে অল্প কিছু প্রসাধনী, কিংবা ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে ছবি তুলতে নেওয়া চাই ক্যামেরা। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এই সবের ভার বইতে বড় ভরসা ব্যাগ। শুধু কি কাজের জন্য? সাজের জৌলুস বাড়াতেও কাজে আসতে পারে বাহারি হাতব্যাগ কিংবা পার্স। তাই নিজের জন্যই হোক বা প্রিয়জনকে উপহার দিতে, জামাকাপড়-জুতোর মতোই সমান তালে বিকোচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ। পুজোর আগে ব্যাগের বাহার দেখতে নিউ মার্কেট ঘুরে এল আনন্দবাজার অনলাইন।
বটুয়া ব্যাগ, চুড়ি বা ব্যাঙ্গেল ব্যাগ, ফ্যান্সি ক্লাচ, সবই মিলছে বাজারে। পকেটের দশা কেমন, সেই বুঝে বেছে নিতে হবে নিজের পছন্দের ব্যাগ। মেট্রোর নিউ মার্কেটের শাখার সহকারী ম্যানেজার ইরশাদ জানান, পুজোয় সবচেয়ে বেশি চাহিদা লাইট লেদার ব্যাগের। রং ও ডিজাইনের নিরিখে চামড়ার ব্যাগের তুলনায় এই ব্যাগগুলির বৈচিত্র বেশি, দামও কম। মেট্রোতে চামড়ার ব্যাগের দাম চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার মতো। সেখানে লাইট লেদারের ব্যাগগুলির মূল্য হাজার তিনেক টাকা। ইরশাদের দাবি, পুজো উপলক্ষে মুম্বই থেকে আলাদা সম্ভার আসে ব্যাগের। তবে এ বছর যে ব্যাগটি সবার নজর কাড়ছে সেটি হল হ্যান্ডপ্রিন্টেড বাটিক ব্যাগ। সাদার উপর রঙিন নকশা করা ব্যাগটির দাম ৩২৯০ টাকা।
কাঁধে ঝোলানো ব্যাগগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে উজ্জ্বল একরঙা ব্যাগ। ফুটপাথ থেকে স্থায়ী দোকান, সবেতেই এই ধরনের ব্যাগের সংখ্যা বেশি। জুতো ও ব্যাগ প্রস্তুতকারী সংস্থা বাটার এক কর্মী জানালেন, বিশুদ্ধ চামড়ার ব্যাগের থেকেও পুজোর বাজারে বেশি কদর একরঙা পলিইউরিথিন বা পিইউ ব্যাগের। বিশেষ করে মধ্যবয়স্ক নারীরা খুবই পছন্দ করছেন এই ব্যাগ। বাটায় এই ধরনের ব্যাগগুলির দাম ১৬৯৯ থেকে ২৯৯৯ টাকার মধ্যে।
যাঁরা ব্যাগের জন্য নামী-দামি ব্র্যান্ডের পিছনে ছুটতে রাজি নন, তাঁদেরও চিন্তিত হওয়ার খুব একটা কারণ নেই। নিউ মার্কেট চত্বরে পথের পাশেই ঢেলে বিকোচ্ছে বিভিন্ন ধরনের হাতব্যাগ ও সাইড ব্যাগ। সাবেকি শাড়ির সাজ থেকে বিদেশি গাউন, যে কোনও ধরনের সাজের সঙ্গে মানানসই হ্যান্ডব্যাগগুলি পেয়ে যাবেন ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। তবে দরদাম না করে কিনবেন না। একই ব্যাগের দাম এক এক জনের কাছে এক এক রকম চাওয়া হয়। আসলে বিক্রেতারাও চেষ্টা করেন এই সময় সারা বছরের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে।
ব্যাগ কেনায় নারীদের আগ্রহ বেশি থাকলেও পুরুষেরা বেশি দিন পিছিয়ে থাকতে রাজি নন। ভালই বিকোচ্ছে পুরুষদের চামড়ার সাইডব্যাগ, বলছিলেন শ্রীলেদার্সের এক কর্মচারী কৃষ্ণতনু দাস। শ্রীলেদার্সে ১২৪০ টাকা থেকে ৩৬৪০ টাকার মধ্যে পুরুষদের এই ধরনের বেশ কিছু ব্যাগ দেখা গেল।
পুজো মানেই পুজোর ছুটিও বটে। লম্বা ছুটিতে প্যান্ডেল পরিক্রমার পর অনেকেই বেরিয়ে পরেন দেশ-বিদেশে ঘুরতে। ফলে শুধু দৈনন্দিন ব্যবহারের ব্যাগই নয়, বিক্রি বেড়েছে ভ্রমণের ব্যাগেরও। তবে এখন আর গন্ধমাদনের ভারী ব্যাগ বইতে চান না অনেকেই। তাই স্যুটকেসের জমানা পেরিয়ে বেড়াতে যাওয়ার ব্যাগের বাজারে অন্য সব মডেলকে টেক্কা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ট্রলি ব্যাগ। শ্রীলেদার্সে জুতসই হার্ড ট্রলি পেয়ে যেতে পারেন ২৬৫০ টাকা থেকে ৩৩০০ টাকার মধ্যে। যদি হার্ড ট্রলিব্যাগ না-পসন্দ হয়, তবে নিতে পারেন চামড়ার ব্যাগও। দাম পড়বে একটু বেশি, ৫৮৫০ টাকা।
বড়দের পাশাপাশি, ছোটদের জন্যও বাজারে রয়েছে রংবেরঙের বাহারি পিঠব্যাগ। মজার মজার কার্টুন আঁকা ব্যাগগুলির দাম ১০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে, বলছিলেন এমডি গুড্ডু নামের এক ব্যাগ বিক্রেতা। গুড্ডু পথের পাশে ব্যাগের পসরা সাজিয়ে বিক্রি করেন। তবে বিক্রিবাটার মধ্যেও কিছুটা মনমরা তিনি। বিকিকিনি কেমন হচ্ছে? প্রশ্ন শুনে স্মিত হেসে গুড্ডু জানান, এখনও পুরোপুরি ফেরেনি বাজারের হাল। শুধু ক্রেতা নন, তাঁর মতো বিক্রেতারাও সারা বছর তাকিয়ে থাকেন পুজোর দিকে। কিন্তু গত দু’বছর কোভিডের ধাক্কায় কার্যত ধূলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল ব্যবসা। এখনও সেই ধাক্কা সামলে ওঠা সম্ভব হয়নি পুরোপুরি। গুড্ডু বলেন, “গত দুই বছরের থেকে সামান্য ভাল হলেও এখনও পুরোপুরি স্বাস্থ্য ফেরেনি বাজারের। দিনে গড়ে হাজার টাকার বেশি আয় হচ্ছে না।”
এ তো গেল বিক্রেতাদের কথা, ক্রেতারা কী বুঝছেন কেনাকাটা করে? মেয়ে চান্দ্রেয়ী ও স্ত্রী পূর্ণিমা ঘোষের সঙ্গে হাওড়ার থেকে নিউ মার্কেট এসেছিলেন মলয় ঘোষ। পুজোর পর শিমলা ঘুরতে যাওয়ার কথা রয়েছে তাঁদের। পোশাক আর নতুন জুতোর সঙ্গে মস্ত একটি ট্রলিব্যাগও কিনেছেন তিনি। কিন্তু বাজার করতে হাওড়া থেকে নিউমার্কেট কেন? “দামের খুব একটা পার্থক্য নেই, কিন্তু এখানে জিনিসপত্রের বৈচিত্র অনেক বেশি। তা ছাড়া মেয়ে আর মেয়ের মায়েরও শখ ছিল নিউ মার্কেট থেকে পুজোর বাজার করার। তাই সবাই মিলে চলে এলাম।” বাজার সেরে রোল খেতে খেতে হাসিমুখে উত্তর মলয়বাবুর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy