ছবি : সংগৃহীত।
পহলে দর্শনধারী/ পিছে গুণ বিচারি নীতিতে চলা দুনিয়ায় অনেকেই নিজেকে সুন্দর দেখাতে চান। সেই ভাবনা থেকেই সাজগোজের সঙ্গে জড়িত নানা ব্যবসার রমরমা। যতই ‘কালোও ভাল’ গোছের নীতিবাদী বুলি আওড়ানো হোক, ফর্সা হওয়ার ক্রিমের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠুক, পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপনে এখনও ফর্সা এবং সুশ্রীর চাহিদা বেশি। ফলে চাহিদা তুঙ্গে ত্বকের রং উজ্জ্বল করার প্রসাধনীরও। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ত্বকের রং উজ্জ্বল করার যে সমস্ত ক্রিমে নির্ধারিত মাত্রার বেশি পারদ জাতীয় ক্ষতিকর পদার্থের ব্যবহার করা হচ্ছে, তা থেকে শুধু ত্বকের ক্ষতিই নয়, কিডনিরও সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?
কয়েকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, গত বেশ কয়েক বছর ধরে ওই কারণ জনিত কিডনির রোগ মেমব্রেনাস নেফ্রোপ্যাথি হতে দেখা গিয়েছে। যা হলে প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন বেরিয়ে যায়।কিডনির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। প্রশ্ন হল, সত্যিই কি ত্বকের রং উজ্জ্বল করার ক্রিম থেকে কিডনির রোগ হচ্ছে? চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের কিডনির রোগ সংক্রান্ত বিভাগের প্রফেসর চিকিৎসক রাজা রামচন্দ্রন এক সাক্ষাৎকারে বলছেন, "ত্বক উজ্জ্বল করার সব ক্রিম এক রকম নয়। তবে কিছু ক্রিমে পারদের মতো ক্ষতিকর উপাদান থাকে। যা কিডনির স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। শুধু তা-ই নয়, ইদানীং ত্বকের রং উজ্জ্বল করার জন্য অনেকে গ্লুটাথিয়োনেরও ব্যবহার করছেন। বেশি পরিমাণে ওই উপাদান ব্যবহার করলেও তা কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।’’
কোন ক্রিম থেকে সাবধান হতে হবে?
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, সমস্ত ত্বকের রং উজ্জ্বল করার ক্রিমকেই এক পর্যায়ে ফেলা উচিত হবে না। কারণ দেশের বাজারে যে ক্রিম বিক্রি হচ্ছে আর যে ক্রিম মানুষ ব্যবহার করছেন, তা যাতে নিরাপদ হয়, তা দেখে নেওয়ার নির্দিষ্ট সরকারি পরিকাঠামো রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘বাজারে আসার আগে সমস্ত ক্রিমকেই তাই নিরাপত্তার পরীক্ষা দিতে হয়। সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অনুমোদন পেতে হয়। তবে সেই ক্রিম গিয়ে পৌঁছয় বাজারে এবং মানুষ তা কিনতে পারেন। কিন্তু কিছু সংস্থা ওই নিয়ম না মেনে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ফাঁকি দিয়েও বাজারে তাদের উৎপাদন ছেড়ে দেয়। ভয় সেই সমস্ত ক্রিম থেকেই।’’
এ দেশে কি ত্বক উজ্জ্বল করার ক্রিম থেকে কিডনির সমস্যা হয়েছে?
চিকিৎসক রামচন্দ্রন জানিয়েছেন, খুব অল্প হলেও এমন কিডনির সমস্যা নিয়ে রোগী এসেছেন তাঁদের কাছে। তিনি বলছেন, ‘‘ওই রোগীদের প্রস্রাবে প্রোটিন বেরিয়ে যাওয়ার উপসর্গ ছিল। পরে জিজ্ঞাসা করে জানা গিয়েছে, তাঁদের অনেকেই ফরসা হওয়ার ক্রিম মাখতে অভ্যস্ত। তবে সেই সব ক্রিমের কোনও অনুমোদনের শংসাপত্র ছিল না। এমনকি, ক্রিমে কী কী উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে, তারও বিশদ লেখা ছিল না। পরীক্ষা করে আমরা দেখি, ওই রোগীদের রক্তে পারদের মাত্রাও ছিল বেশি। যা থেকে বোঝা যায়, ওই সমস্ত ক্রিম নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ম মেনে তৈরি হয়নি। বাজারজাত করার আগে পরীক্ষাও করা হয়নি।’’
বিভিন্ন গবেষণার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ধরনের ঘটনা কেরলে বেশি ঘটেছে। তবে ভারতের অন্যান্য প্রান্তে এমনকি, ভারতের বাইরে যে এমন ঘটনা ঘটেনি, তা নয়।
কী ভাবে ত্বক উজ্জ্বল করার ক্রিম থেকে কিডনি আক্রান্ত হয়?
কেরলেরই একটি গবেষণায় ত্বকের রং উজ্জ্বল করার ক্রিম পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তাতে উচ্চমাত্রায় পারদ ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, পারদ যখন ত্বকের রন্ধ্রপথে শরীরে ঢোকে, তখন তা কিডনি পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। কিডনি যে ছাঁকনির সাহায্যে রেচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে আক্রান্ত করে এবং অ্যান্টিবডি তৈরির কাজকেও প্রভাবিত করে। যার ফলে প্রস্রাবের মাধ্যমে প্রোটিন বেরিয়ে যেতে শুরু করে। এবং প্রোটিনের মাত্রা কমে গেলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ওই গবেষণার উল্লেখ করেই চিকিৎসক রামচন্দ্রন বলছেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রোটিনের মাত্রা কমে যাওয়ায় রোগীর পা এবং শরীরের নানা অংশ ফুলতে শুরু করেছে।’’
চিকিৎসা কী?
কেরলের রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ক্রিমের ব্যবহার বন্ধ করতেই প্রস্রাবে প্রোটিন বেরিয়ে আসা বন্ধ হয়েছে। তবে একই সঙ্গে রামচন্দ্রণ বলেছেন, কোনও কোনও রোগীকে ইমিউনো সাপ্রেসিভ থেরাপিও করাতে হয়েছে।
কী ভাবে সতর্ক হবেন?
চিকিৎসকের মতে ত্বকের রং উজ্জ্বল করার ক্রিম কেনার সময় সেই ব্র্যান্ডের অনুমোদনের লেবেল সম্পর্কে যথাযথ ভাবে অবগত হয়ে কেনাই ভাল। একই সঙ্গে দেখে নিতে হবে, ওই ব্র্যান্ড তাদের উপকরণের তালিকা ক্রিমের গায়ে নিয়ম মেনে নথিবদ্ধ করেছে কি না। নির্মাণকারী সংস্থাটি সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত কি না। প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কম থাকে। কারণ, তারা তাদের সুনামের কথা মাথায় রেখে সরকারি অনুমোদনের বিষয়টি নিয়ে ঝুঁকি নেয় না, বলছেন চিকিৎসক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy