প্রতীকী ছবি।
প্রশ্ন: উদ্বিগ্ন হওয়ার সমস্যা বা ‘অ্যাংজ়াইটি ডিসঅর্ডার’ বিষয়টি কী?
উত্তর: সাধারণ ভাবে বলা চলে, উদ্বিগ্ন হওয়ার সমস্যা বা ‘অ্যাংজ়াইটি ডিসঅর্ডার’ জাতীয় রোগে রোগী অকারণে অত্যধিক চিন্তা করেন ও বিভিন্ন বিষয়ে অহেতুক ভয় পান। নানা রকম ভাবে এই ভয়ের বহিঃপ্রকাশ দেখা দিতে পারে। এই জাতীয় সমস্যা দেখা দিলে কেউ ভিড় জায়গায় যেতে ভয় পান। অনেকে আবার বদ্ধ জায়গায় থাকতে ভয় পান। কেউ কেউ অনেক লোকজনের সামনে কথা বলতে বা কোনও কাজ করতে ভয় পান। কেউ আবার বিশেষ কোনও জায়গায় যেমন, উঁচু জায়গা, জল, অন্ধকার ইত্যাদিকে ভয় পেতে শুরু করেন। অনেকে জীবজন্তুকে দেখে বা রক্ত দেখে বা বিশেষ কোনও ব্যাপারে ভয় পান। এই রোগের কারণে অনেকে জীবনে প্রায় সব পরিস্থিতিতেই অকারণে ভয় পান। সাধারণ ভাবে দেখা যায়, ভয়ের কারণে হাত-পা কাঁপতে থাকা, বুক ধড়ফড় করা, বেশি ঘাম হওয়া, গলা শুকিয়ে যাওয়া, বার বার প্রস্রাব পাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। অনেকের ক্ষেত্রে অত্যধিক ভয়ের কারণে বুক ধড়ফড় করার পাশাপাশি, শ্বাসকষ্টও হতে পারে। পাশাপাশি, মাথা ঘোরা, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি এমন মনে হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। অনেকে এই পরিস্থিতিতে মৃত্যুভয়েও ভীত হয়ে পড়েন। বিশ্বের প্রায় ২০-৩০ শতাংশ মানুষ জীবনে কোনও না কোনও সময়ে এই সমস্যার শিকার হন।
প্রশ্ন: উদ্বিগ্ন হওয়ার সমস্যা বা ‘অ্যাংজ়াইটি ডিসঅর্ডার’ কেন হয়?
উত্তর: আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে কিছু রাসায়নিকের পরিমাণে তারতম্য ঘটলে এই সমস্যা দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে ‘সেরোটোনিন’ ও ‘গাবা’ নামের দু’টি রাসায়নিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এ ছাড়া, মস্তিষ্কের একটি বিশেষ জায়গা, ‘লিম্বিক সিস্টেম’ এই রোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রশ্ন: কত রকমের ‘অ্যাংজ়াইটি ডিসঅর্ডার’ দেখা যায়?
উত্তর: ‘অ্যাংজ়াইটি ডিসঅর্ডার’ অনেক রকমের হতে পারে। যেমন, ‘জেনারেলাইজ়ড অ্যাংজ়াইটি ডিসঅর্ডার’, ‘প্যানিক ডিসঅর্ডার’, ‘ফোবিক ডিসঅর্ডার’ বা (ফোবিয়া), ‘অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার’ ইত্যাদি।
প্রশ্ন: ‘জেনারেলাইজ়ড অ্যাংজ়াইটি ডিসঅর্ডার’ রোগটি কী?
উত্তর: এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সমাজের প্রায় সব ক্ষেত্রেই ও জীবনের প্রায় সব বিষয়েই অযথা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এর সঙ্গে সঙ্গে মনোযোগের অভাব, খিটখিটে মেজাজ, মাথা ব্যথা, অনিদ্রা, গলায় কিছু আটকে থাকার অনুভূতি, বমি ভাব দেখা যেতে পারে।
প্রশ্ন: ‘প্যানিক ডিসঅর্ডার’ কী?
উত্তর: এই জাতীয় সমস্যায় কোনও কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে রোগীর বুক ধড়ফড় করা, হাত-পা কাঁপা, বেশি করে ঘাম হওয়া, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, বমি ভাব, মাথা ঘোরা ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হয়। সে মুহূর্তে রোগীর মনে হয়, তিনি যেন এখনই মারা যাবেন। এই ঘটনাকে বলা হয় ‘প্যানিক অ্যাটাক’। কারণ, কোন পরিস্থিতিতে বা কোন সময়ে এই ঘটনা ঘটবে তা রোগী বুঝে উঠতে পারেন না, তাই সর্বদাই রোগীর মনে ‘এই বুঝি আবার ওই রকম হল’ জাতীয় ভয়ের সঞ্চার হয়।
প্রশ্ন: ‘ফোবিয়া’ কী?
উত্তর: ‘ফোবিয়া’ কথাটির অর্থ হল কোনও কোনও বিশেষ জায়গা বা বিষয় নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ভয়। অর্থাৎ ভয়ের কারণটা রোগীর জানা। তাই এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ওই বিশেষ জায়গাগুলি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ফোবিয়া হল ‘এগোরা ফোবিয়া’, ‘সোশ্যাল ফোবিয়া’ ইত্যাদি।
প্রশ্ন: ‘এগোরা ফোবিয়া’ কী?
উত্তর: সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি একা একা কোনও ভিড় জায়গায়, বাড়ি থেকে দূরে কোথাও গেলে বা একা কোথাও বেরলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হন। এ ক্ষেত্রে তাঁর বুক ধড়ফড় করে, হাত-পা কাঁপতে থাকে, ঘাম হতে থাকে, গলা শুকিয়ে যায়, শ্বাসকষ্ট হয়। পাশাপাশি বুকে ব্যথা, বমি ভাব, পেটে ব্যথা, মাথা ঘোরা, আচমকা ঠান্ডা বা গরম লাগা, কানে ঝিঁঝিঁ ধারার অনুভূতি, পরিবেশ থেকে নিজে আলাদা হয়ে যাওয়ার অনুভূতি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এই সমস্যাগুলি রোগীর জীবনযাত্রাকে এমন ভাবে প্রভাবিত করে যে রোগী ওই স্থানগুলি এড়িয়ে চলতে থাকেন এবং ক্রমশ গৃহবন্দি হয়ে পড়েন। ঠিক মতো চিকিৎসা না করলে প্রাণঘাতী রোগ না হয়েও কোনও অসুখ কী ভাবে আমাদের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে তার অন্যতম উদাহরণ হল এই রোগ। অনেক সময়ে এর সঙ্গে নানা উদ্বিগ্ন হওয়ার সমস্যাও জড়িয়ে থাকে। উপযুক্ত চিকিৎসায় এই রোগ সহজেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
প্রশ্ন: ‘সোশ্যাল ফোবিয়া’ কী?
উত্তর: এই জাতীয় ‘ফোবিয়া’-তে ভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতি, নতুন জায়গায় গেলে, অচেনা লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে, স্টেজে উঠে কিছু বলতে গেলে, অনেকের সামনে কিছু বলতে বা উপস্থাপন করতে গেলে রোগী অহেতুক অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হন।
প্রশ্ন: ‘অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডার’ কী?
উত্তর: আমাদের দেশের প্রায় এক থেকে দুই শতাংশ মানুষ এই রোগের শিকার। এই রোগে রোগীর মনে বারবার এমন কিছু অযৌক্তিক চিন্তা, ইচ্ছা আসে বা কিছু ছবি ভেসে ওঠে— যেগুলি রোগীকে কষ্ট দেয়। কিন্তু অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও সেই চিন্তাগুলিকে আটকানো যায় না। অনেক সময়ে এই চিন্তার বশবর্তী হয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রোগীকে কিছু কাজ বারবার করতে হয়— যেমন বারবার হাত ধোওয়া বা স্নান করা (একে আমরা অনেক সময় বাংলায় শুচিবাই রোগ বলি), দরজায় ঠিকমতো তালা দেওয়া হয়েছে কি না তা বারবার পরখ করে দেখা ইত্যাদি।
প্রশ্ন: ‘অ্যাংজ়াইটি ডিসঅর্ডার’-এর চিকিৎসা কী?
উত্তর: যদি সমস্যা এমন হয় যে তা স্বাভাবিক জীবনযাপন ও কাজকর্মকে বিপর্যস্ত করে তুলছে, তা হলে তার চিকিৎসার প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট, অ্যান্টি অ্যাংজ়াইটি জাতীয় ওষুধ ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া, উদ্বেগ কমানোর জন্য ‘ডিপ ব্রিদিং টেকনিক’, ‘প্রোগ্রেসিভ মাসল রিল্যাক্সেশন’ ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy