ইন্টারনেট আসক্তিতে বিপন্ন কৈশোর! ছবি: সংগৃহীত।
চোখ খুললেই হাতে উঠে আসছে মোবাইল। দিনরাতের বেশির ভাগ সময়ে মন থাকছে তাতেই। যত ক্ষণ না ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসে, নজর শুধু মোবাইল, না হলে ল্যাপটপের পর্দায়।
এ ছবি ঘরে ঘরেই। ডিজিটাল দুনিয়ায় ডুবছে আট থেকে আশি। চোখের তো বারোটা বাজছেই, কাজেও দেখা দিচ্ছে মনোযোগের অভাব। তবে অন্যান্য বয়সের চেয়ে ইন্টারনেট নিয়ে সর্ব ক্ষণ ডুবে থাকার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে কিশোর-কিশোরীদের উপর। অন্তত এমনই বলছে সাম্প্রতিক গবেষণা।
পড়াশোনা থেকে নিত্য প্রয়োজন, এখন হাতেই থাকে মুঠোফোন। এক ক্লিকেই খুঁজে নেওয়া যায় পছন্দের জিনিস। ছোটদের ভাল লাগা কার্টুন, গেমে আবদ্ধ থাকলেও বয়ঃসন্ধির কৌতূহলী মন খোঁজে আরও অনেক কিছু। মস্তিষ্ক থেকে মন, সব আকর্ষণের জন্যই যেন এ এক ফাঁদ! আর তাতেই ইন্টারেনেটে আসক্ত হয়ে পড়ছে তরুণ প্রজন্ম। তবে উদ্বেগের বিষয় হল, এর ক্ষতিকর প্রভাব অন্যান্য বয়সের চেয়ে কিশোর মস্তিষ্কেই বেশি পড়ছে।
পিএলওএস নামে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্র বলছে, ২০১৩-২০২২ পর্যন্ত ১২টি গবেষণা হয়েছে কিশোরদের উপর নেট দুনিয়ার প্রভাব নিয়ে। তাতেই দেখা যাচ্ছে, এর গুরুতর প্রভাব পড়ছে কিশোর মস্তিষ্কে।
নেট-আসক্তির প্রভাব কিশোর মস্তিষ্কে
দিনের অনেকটা সময় নেট জগতে ডুবে থাকার প্রভাব মস্তিষ্কে পড়ায় বদল দেখা দিচ্ছে মন ও আচরণে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এ নিয়ে গবেষণা করেছে। আর তাতেই উঠে এসেছে, ইন্টারনেট আসক্তির জেরে পড়াশোনা থেকে জরুরি কাজ, কোনওটিতেই মন বসাতে পারছে না ১২-১৭ বছরের ছেলেমেয়েদর অনেকে। যে কোনও কাজের পরিকল্পনা করতে গিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে তারা। অকারণে রাগী, জেদি হয়ে উঠছে। যার প্রভাব পড়ছে বন্ধুত্ব থেকে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কেও।
চিন্তার বিষয় হল, আসক্ত হয়ে পড়া ছেলে-মেয়েদের কেউ কেউ এক ঘণ্টা মোবাইল না পেলেই অস্থির হয়ে উঠছে। খেলা, কথা বলা, গল্প করা, ঘুরে বেড়ানো কোনও কিছুতেই আগ্রহ নেই। বন্ধুও খুঁজলেও, নেট দুনিয়াতেই বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে তারা।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের মুখ্য গবেষক ম্যাক্স চ্যাং বলছেন, ‘‘ইন্টারনেট আসক্তির প্রভাবে কার্যক্ষমতা কমার পাশপাশি অসহিষ্ণুতা-কষ্ট বাড়ছে কারও কারও জীবনে।’’
স্নায়ু চিকিৎসক অনিমেষ করও মানছেন, ইদানীং এই সমস্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘‘ছেলে-মেয়েদের অনেকেরই দিনরাত মোবাইল নিয়ে বসে থাকছে। অনেক অভিভাবক এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা যে সব সময়ে পড়াশোনার জিনিস দেখছে, তা একেবারেই নয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকায় অপরিণত মনে তার খারাপ প্রভাব পড়ছে। অনেক সময়ে এই আসক্তি তাদের অসহিষ্ণু করে তুলছে, মনঃকষ্টে ফেলছে। মনঃসংযোগের অসুবিধা তো আছেই।”
নেটদুনিয়ার আসক্তিকে মানসিক স্বাস্থ্য বি়জ্ঞানে অসুখ বলেই চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে জানালেন মনোসামাজকর্মী মোহিত রণদীপ। তাঁর কথায়, “মাদক সেবনে মনে ভাল লাগা তৈরি হয়। মোবাইল, ইন্টারনেট নিয়ে বুঁদ হয়ে থাকার কারণও সেটাই। ভার্চুয়াল জগতে বিচরণ করে তারা আনন্দ অনুভব করে। এমনকি, মন খারাপ হলে নেটদুনিয়াতেই সুখ খুঁজে নিতে চায়। নিজেকে আড়াল করতেও সেখানেই আশ্রয় খোঁজে। আত্মগোপন থেকে নির্ভরতা, সব কিছুর সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে ভার্চুয়াল জগৎ। এই নির্ভরতা এতটা বেশি হয়ে উঠছে যে, সকালে উঠে ফোন না পেলে বিরক্তি, বাধা দেওয়া হলে রাগ হয়। কখনও কখনও অপরাধপ্রবণ মানসিকতাও দেখা দিতে পারে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভিডিয়ো দেখার পর বইয়ের পাতার অক্ষর দেখে মনঃসংযোগ করতে অসুবিধা হচ্ছে।”
মুক্তির উপায় কী!
যে ছাত্র বা ছাত্রী ইন্টারনেট জগতে আসক্ত হয়ে পড়েছে, তাকে ভাল ভাবে এর ক্ষতিকর দিকটা বোঝাতে হবে। পড়াশোনা যেমন জরুরি, তেমন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইন্টারনেট নিয়ে ডুবে থাকলে তা শরীর-মনের জন্য যে কতটা খারাপ, সে সম্পর্কে ধারণাও দিতে হবে।
বই পড়া, খেলাধূলা, শখগুলিতে উৎসাহ দিয়ে নেট আসক্তি কমানোর চেষ্টা করতে হবে বলে পরামর্শ মনো-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপের। আর তাতে কাজ না হলে কাউন্সেলিংয়ের পথে হাঁটতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy