গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলুন ছোটখাটো ভুলও। ছবি: শাটারস্টক।
গর্ভাবস্থায় এমন কিছু মিথ আমরা মেনে চলি, যা আদৌ শরীরের কোনও কাজে লাগে না উল্টে ক্ষতি করে ভাবী মা ও সন্তানের। চিকিৎসকের পরামর্শ, নিজেদের ভাবনা-চিন্তার পরেও থেকে যায় নানা রকম ভুল।
যেমন, ছোট থেকে শুনে এসেছেন গর্ভবতী হলে খেতে হয় দু’জনের মাপে। নিজের ও সন্তানের। বেশির ভাগ সময়ই শুয়ে–বসে থাকতে হয় ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে কিন্তু এই সব ধারণার কোনওটাই ঠিক নয়। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মার্থা হাজরার মতে, ‘‘গর্ভাবস্থায় আজও বেসির বাগ বাড়িতেই হবু মায়েদের নানা রকম ভুল ধারণার শিকার হতে দেখা যায়। সেখান থেকে নানা রকম প্যানিক বা উদ্বেগও তৈরি হয়। এমনিতেই এ সময় শারীরিক কিছু পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এমনিই কিছুটা ভয় দানা বাঁধে। তার উপর এই সব ভুল ধারণা আরও বেশি করে উদ্বেগের জন্ম দেয়।’’
ছোট থেকে শুনে আসা এমন নানা মতে বিশ্বাস করতে গিয়েই হয়ে যায় বড়সড় ভুল। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা দিলেন এমনই কিছু ভুলের তালিকা। জানালেন, সে সব কী ভাবে শোধরানো যায়।
আরও পড়ুন: ডায়াবিটিস মারাত্মক থাবা বসায় পায়ে, এ ভাবে যত্ন না নিলে বাদ পর্যন্ত যেতে পারে
ভুল ১: খেতে হবে দু’জনের মাপে
এত দিন যা খেয়েছেন এখন এর দ্বিগুণ খাবেন? এ ধারণা ভুল। ছোট্ট ভ্রূণের এত খাবার লাগে লাগে না। অতিরিক্ত খাবারের সবটাই গিয়ে ভাবী মায়ের ওজন বাড়ায়, বাড়ে ডায়াবিটিস, প্রেশার ও আরও কিছু জটিল বিপদের শঙ্কা। যা থেকে মা ও শিশু উভয়ের প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়তে পারে। কাজেই প্রথম তিন মাস পুষ্টিকর খাবার খান, আগের মাপেই। তিন মাস পর থেকে মাত্র ২৫০–৩০০ ক্যালোরি বেশি খেতে হবে। একটা কলা, ছোট এক বাটি সিরিয়াল আর দুধ একটু বেশি খেলেই ওটুকু পুষিয়ে যায়।
ভুল ২: ছোটখাটো ওষুধ নিজেই খাওয়া যায়
নিতান্ত সাধারণ ওষুধ থেকেও বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি-সহ আরও নানা সমস্যা হতে পারে। কাজেই অম্বল–বদহজম–কোষ্ঠকাঠিন্য, যাই হোক না কেন, ওষুধ খান চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
ভুল ৩: কম ঘুমিয়ে কাজ সেরে রাখা
এমনিতেই এ সময় ক্লান্ত থাকে শরীর। তার সঙ্গে কম ঘুম যুক্ত হলে স্বাস্থ্য ভাঙতে বাধ্য। কাজেই অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমোন। অফিসে ন্যাপ নেওয়ার সুবিধা থাকলে দুপুরে খাওয়ার পর ১০–১৫ মিনিটের দিবানিদ্রা দিতে পারলে ভাল। না হলে সপ্তাহ–শেষে অনেকটা ঘুমিয়ে শরীরের ঘুম পুষিয়ে নিন। কিন্তু কোনও ভাবেই কম ঘুমের থিওরিতে বিশ্বাস করবেন না।
আরও পড়ুন: নিশ্চিন্তে পাতে রাখুন এই খাবার, দূরে থাকবে হৃদরোগ-ক্যানসারের মতো হাজারো অসুখ
ভুল ৪: শুয়ে–বসে থাকতে হবে
শুয়ে–বসে থাকার প্রশ্নই নেই। দিনে আধ ঘণ্টা অন্তত হালকা ব্যায়াম— যেমন জোর–কদমে হাঁটা, যোগা ইত্যাদি না করলে ওজন বেড়ে ডায়াবিটিস বা হাই প্রেশার হতে পারে। সমস্যা হতে পারে প্রসবে। মানসিক চাপ কমাতে, রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে, প্রসবের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করতেও ব্যায়ামের জুড়ি নেই। আর যত নড়াচড়া করবেন, গর্ভস্থ সন্তানের বৃদ্ধিও ভাল হবে এতে। তা বলে খুব ভারী কাজ, পরিশ্রমের কাজ করবেন না। কিন্তু শরীরকে নানা ভাবে সচল রাখতে হবে।
ভুল ৫: পছন্দসই খাবার নয়, চাই স্বাস্থ্যকর খাবার
মিষ্টি, ভাজাভুজি, মশলাদার খাবার কম খেতে হবে ঠিকই। কারণ এতে ওজন বেড়ে যেতে পারে। হতে পারে অপুষ্টিও। কিন্তু পছন্দের খাবার পুরো বন্ধ করে দিলে যে স্ট্রেস হবে তা ভাবী মা ও সন্তানের জন্য ভাল নয়। কাজেই ব্যালান্স করুন। মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হলে কিসমিস, খেজুর, ফল আর নোনতা খাওয়ার ইচ্ছে হলে বাদাম, কাজু, পেস্তা খান। খুব ইচ্ছে করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে, ন’মাসে ছ’মাসে এক–আধ বার অল্প পরিমাণে বাইরের খাবার চলতে পারে, তবে তাও শরীর বুঝে।
ভুল ৬: অ্যান্টিনেটাল ক্লাসে যাওয়ার দরকার নেই
বাড়িতে অভিজ্ঞ কেউ থাকলে আলাদা কথা। না হলে প্রসবের পর কী ভাবে চলবেন, কী ভাবে ব্রেস্ট ফিড করাবেন, গর্ভাবস্থায় কী খাবেন, কী ব্যায়াম করবেন, কী কী নিয়ম মানবেন, সে সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা পেতে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত অ্যান্টিনেটাল ক্লাসে গেলে ভাল বই মন্দ হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy