তিন দশকেরও বেশি তারা জানত যে অ্যাসবেস্টস রয়েছে তাদের পণ্যে। যা শরীরে ঢুকলে হতে পারে ক্যানসার। সম্প্রতি রয়টার্সের এক রিপোর্টে দাবি, এই তথ্য লুকিয়েই বছরের পর বছর বেবি পাউডার বিক্রি করেছে জনসন অ্যান্ড জনসন। যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে যদিও জনসন জানিয়েছে, রিপোর্ট একপেশে ও মিথ্যা। তাদের পণ্য সম্পূর্ণ নিরাপদ।
মেসোথেলিয়োমা নামে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন টেক্সাসের বাসিন্দা ডারলিন কোকার। খনি বা কারখানায় কাজ করার সময়ে অ্যাসবেস্টস কণা শরীরে ঢুকলে এই ক্যানসার হয়। তা হলে কী ভাবে অ্যাসবেস্টসের সংস্পর্শে এলেন কোকার? চিকিৎসকরা জানান, বছরের পর বছর দুই মেয়েকে জনসনের যে পাউডার মাখিয়েছেন তিনি, তারই কণা বিষিয়ে দিয়েছে তাঁর শরীর। জনসনের বিরুদ্ধে মামলা ঠোকেন কোকার। কিন্তু জনসন আদালতে সংস্থার গোপন তথ্য পেশ না করায় মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।
কিন্তু আমেরিকা-সহ গোটা বিশ্বে জনসনের বিরুদ্ধে হওয়া একের পর এক মামলায় ১৯৯৯ সালে সংস্থার নানা নথি, গোপন তথ্য, পরীক্ষার রিপোর্ট আদালতে তুলে দিতে বাধ্য হয় জনসন। অন্তত ১২ হাজার মামলাকারী, যাঁদের অধিকাংশই মহিলা অভিযোগ করেন, জনসনের পাউডার ব্যবহার করে জরায়ুর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা।
এই রকমই বিভিন্ন মামলার কাগজপত্র ঘেঁটে সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একাধিক বার পরীক্ষা করে তাদের পাউডারে বিষাক্ত খনিজ অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতি জানতে পেরেছে জনসন। সংস্থার শীর্ষ কর্তা থেকে খনি ম্যানেজার, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, আইনজীবী প্রত্যেকে বিষয়টি জানতেন। এমনকি প্রসাধনীতে অ্যাসবেস্টস ব্যবহারের মাত্রা যাতে না বেঁধে দেওয়া হয় তার জন্যও মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলিকে প্রভাবিত করেছে সংস্থাটি। স্বাস্থ্যে পাউডারের কুপ্রভাব নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণাও বন্ধের চেষ্টা করেছে তারা।
আরও পড়ুন: বিশেষ পরিচর্যায় সহজ হয় ক্যানসারের লড়াই
১৯৭৬ সালে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্রসাধনীতে অ্যাসবেস্টস ব্যবহারে রাশ টানার নির্দেশ দেয়। সেই সময়ে জনসন তাদের জানায়, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তৈরি হওয়া তাদের পাউডারের নমুনায় অ্যাসবেস্টস পাওয়া যায়নি। কিন্তু ঘটনা হল, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের তিনটি ভিন্ন গবেষণাগারে আলাদা আলাদা ভাবে পরীক্ষা করে জনসনের পাউডারে অ্যাসবেস্টস পাওয়া গিয়েছিল। একটি ক্ষেত্রে তো রীতিমতো ‘বেশি মাত্রায়’।
এই বছরের গোড়ায় নিউ জার্সি ও ক্যালিফর্নিয়ায় দুটি মামলায় হেরে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে জনসনকে। সেন্ট লুইসে ২২ জন মামলাকারীকে ৫০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দেয় জনসন। অভিযোগ, জনসনের বেবি পাউডার ও শাওয়ার টু শাওয়ার পাউডার ব্যবহারের কারণে জরায়ু-সহ অন্যান্য ক্যানসার আক্রান্ত হয়েছেন মামলাকারীরা।
শুক্রবার রিপোর্টটি প্রকাশ হতেই জনসন অ্যান্ড জনসনের শেয়ার ১০ শতাংশ কমে গিয়েছে। সংস্থার জনসংযোগ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট আর্নি নিউইৎস বলেছেন, ‘‘মোটা টাকার জন্য নথি বিকৃত করে আদালতকে বিভ্রান্ত করেছেন মামলাকারীরা। কয়েক হাজার পরীক্ষায় জানা গিয়েছে, আমাদের পণ্য অ্যাসবেস্টস মুক্ত ও নিরাপদ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy