Advertisement
E-Paper

গোলাপি-ধূসরে কোলিয়ারির গল্প বলেন শিল্পী, সিমা গ্যালারির ক্যানভাসে ধরা থাকে ‘মৌন মুখরতা’

সিমা গ্যালারিতে চলছে শিল্পী সুমন চন্দ্রের একক প্রদর্শনী। কোলিয়ারি অঞ্চলে রোজের জীবন থেকে দূষণ নিয়ে চিন্তা, আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে একান্ত আড্ডায় ভাগ করে নিলেন শিল্পী।

শিল্পী সুমন চন্দ্র।

শিল্পী সুমন চন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২৩ ১৯:২৯
Share
Save

গোলাপি মানেই বার্বি নয়। গোলাপি আরও অনেক কিছু। গোলাপি মানেই সাজানো প্লাস্টিকের গল্প নয়। গোলাপি মানে কঠিন পরিস্থিতিও।

তমলুকের ছেলে সুমন চন্দ্র। কোলিয়ারি অঞ্চলের নন। তবে কয়লার খনিই তাঁর কাজের জায়গা। ব্যবসায়ী নন, শিল্পী তিনি। পশ্চিমবঙ্গ ও আশপাশের অঞ্চলের কোলিয়ারি ঘিরেই তাঁর কাজ। গোলাপি-ধূসরে আঁকা ক্যানভাসে সে সব জায়গার গল্প বলেন সুমন।

সম্প্রতি সিমা গ্যালারিতে শুরু হয়েছে সুমনের একক প্রদর্শনী। কোলিয়ারি অঞ্চলে রোজের জীবন থেকে দূষণ নিয়ে চিন্তা, আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে একান্ত আড্ডায় ভাগ করে নিলেন সুমন। জানালেন, গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন কোলিয়ারির আশপাশেই দিন কাটাচ্ছেন তিনি। নেমেছেন খনির ভিতরেও।

গোলাপি-ধূসরে আঁকা ক্যানভাসে  কোলিয়ারির গল্প বলেন সুমন।

গোলাপি-ধূসরে আঁকা ক্যানভাসে কোলিয়ারির গল্প বলেন সুমন। —নিজস্ব চিত্র।

সবুজ টানে অনেককে। পাহাড়, সমুদ্র, শহর— অনেক কিছুই টেনে নিয়ে যায় বহু শিল্পীকে। তাই বলে কোলিয়ারি অঞ্চলের ধূসর জগৎ এ ভাবে টানবে? সুমনের কাছে উত্তর স্পষ্ট। বলেন, ‘‘ঠাকুরদাদা আর বাবা কয়লার ব্যবসা করেছেন। কোলিয়ারিতে যান না তাঁরা, কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমি কয়লার সঙ্গে যোগাযোগটা উপলব্ধি করেছি। লরি থেকে যখন হুড়হুড় করে কয়লা পড়ত, আমার তা দেখে ঢেউয়ের মতো লাগত।’’ সেই কয়লার ঢেউ টেনে নিয়ে গিয়েছে কয়লা তৈরির এলাকায়। সেখানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জীবন কেমন, কী দিয়ে খেলে তারা, রোজনামচা কি আর পাঁচটি শিশুর মতোই— সে সবের খোঁজ করে বেরিয়েছেন সুমন। আর তা-ই বার বার ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের ক্যানভাসে। শিল্পী বলেন, ‘‘কোলিয়ারির আকাশ সব সময়েই যেন কিছুটা ধূসর। অন্ধকার মতো। তার মধ্যে শিশুরা খেলে, গল্প করে। তবে ওদের বড় হওয়া আর আমাদের বড় হওয়ার মধ্যে অনেক ফারাক আছে। সে সব কেউ জানতে পারে না। আমি কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, কোলিয়ারি অঞ্চল নিয়ে বিশেষ ধারণা নেই অনেকেরই।’’ তবে সে সব এলাকার নিজস্ব সমাজ-সংস্কৃতি রয়েছে। আছে পালা-পার্বণও। সবই আপন হয়েছে এই শিল্পীর।

CIMA Gallery

সুমন ল্যান্ডস্কেপ পেন্টিংই করেন। তবে যে ভূমির কথা বলেন, তা কম পরিচিত। —নিজস্ব চিত্র।

ড্রয়িং, পেন্টিং, ভাস্কর্য, ইনস্টলেশন, ভিডিয়ো মনতাজ— নানা ধরনের কাজে সুমন সে সব অঞ্চলের গল্প বলেন। সুমনের বক্তব্য, তিনি ল্যান্ডস্কেপ পেন্টিংই করেন। তবে যে ভূমির কথা বলেন, তা কম পরিচিত। তাই তার আলাদা একটা চরিত্র তৈরি হয়। ২০২২ সালে ‘সিমা অ্যাওয়ার্ডস’ পেয়েছিলেন সুমন। বিশ্বভারতীর কলাভবনের ছাত্র। সেখানে লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর থেকেই মন দিয়েছেন বাংলার বিভিন্ন কোলিয়ারি অঞ্চলে। সেখান থেকেই উঠে আসে নানা ছবি। দিন-রাত কাটে কয়লার খনির আশপাশেই।

CIMA Gallery

সুমনের ‘সাইলেন্ট ভিশন’ কোলিয়ারি অঞ্চলের শিল্পও তুলে আনে। সেখানকার ঐতিহ্য সোহরাই। —নিজস্ব চিত্র।

কিন্তু কোলিয়ারির গল্পে এত গোলাপি রঙের ব্যবহার কেন? এ সব অঞ্চলে সবুজের ভারী অভাব। দেখা যায় না বললেই চলে। রঙের দুনিয়ায় গোলাপিকে ধরা হয় সবুজের বিপরীতে। তাই সে রঙের সঙ্কট বোঝাতেই সুমনের ক্যানভাসে বার বার ফিরে আসে গোলাপি। তবে গোলাপির ব্যবহারেও নানা ধরন থাকে। এখানে গোলাপি উল্লাসের রং নয়। ক্যানভাসের দিকে কিছু ক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই দেখা যাবে, যেন শূন্যতার কথা বলছে সে ছবি। কোনও কোনও ছবি বিশালাকার। দেওয়াল জুড়ে দাঁড়িয়ে। প্রায় একটি বিশ্ব যেন তুলে ধরেছেন শিল্পী। সে বিশ্বে নেই বিশেষ সবুজের আশা।

তবে কি সেখানে প্রাণ নেই? সুমনের তুলি সে কথা বলে না। বরং সেখানেও বদলে যায় সংস্কৃতি। তা দেখান শিল্পী। সুমনের ‘সাইলেন্ট ভিশন’ কোলিয়ারি অঞ্চলের শিল্পও তুলে আনে। সেখানকার ঐতিহ্য সোহরাই। ঝাড়খণ্ডের কিছু কোলিয়ারি এলাকায় মহিলারা বিশেষ পরবের সময় এই শিল্পচর্চা করেন। সময়ের সঙ্গে বদলে গিয়েছে সে সব দেওয়ালচিত্রের চেহারা। সে সব ছবির মাধ্যমেই শিল্পী তুলে ধরেন বদলাতে থাকা সমাজের ছবি। কোলিয়ারির জীবনে যে গতি আছে, পরিবর্তন আছে, নতুন আছে, বিগত আছে— সব উঠে আসে একে একে।

সুমনের সে সব ক্যানভাসেই সেজেছে সিমা গ্যালারি। প্রদর্শনী চলবে আগামী ১৯ অগস্ট পর্যন্ত। সোমবার থেকে শনিবার পর্যন্ত খোলা থাকে গ্যালারি।

CIMA Gallery CIMA Art Gallery Art exhibition Exhibiton

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।