সম্পর্কে ঠিক-ভুল বলে কিছু হয় কি?
মানুষে তো ভেবেচিন্তে প্রেমে পড়ে না সব সময়ে। এত মানুষ বিয়ের ঠিক-ভুল নিয়ে প্রশ্ন করেন কেন? কার সঙ্গে বিয়ে করে থাকা ঠিক আর কোন বিয়েটা ঠিক নয়, এ নিয়ে আর কত দিন শুনতে হবে? প্রসঙ্গটা তুললেন বছর ৩০-এর তৃণা মজুমদার (নাম পরিবর্তিত)।
হঠাৎ এ প্রসঙ্গ কেন?
বছর তিনেক হল দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে তৃণার। এক বছরের সন্তান রোহনকে নিয়ে ভাল-মন্দ মিলিয়ে ছন্দে পড়ে গিয়েছে তাঁদের সংসার। কিন্তু পিছু ছাড়েনি পুরনো নিন্দা। প্রথম বিয়ে থেকে দ্বিতীয় বিয়েতে যাওয়ার পথটি মসৃণ ছিল না। অনেকেরই থাকে না। তবে তৃণার ক্ষেত্রে বিষয়টি ‘আলাদা’। এমনই বক্তব্য ওঁর আশপাশের বহু মানুষের, বলে দাবি তৃণার। কেন আলাদা? আপাত ভাবে বড় কোনও অশান্তি ছিল না যে প্রথম স্বামীর সঙ্গে। তবু বিয়ে ভাঙে। এবং দ্বিতীয় স্বামী হলেন প্রথম স্বামীর পিসতুতো ভাই।
দু’টো বিয়েই প্রেমের। প্রথম স্বামী ছিলেন সহকর্মী। সে সূত্রেই তৃণার সঙ্গে আলাপ। তৃণা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন দ্বিতীয় বিয়ের পরে। জানালেন, পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে কিছু সম্পর্ক এমন জটিল হয়ে গেল যে, কলকাতা শহরে আর থাকতে চাইলেন না দ্বিতীয় স্বামী, নীল। বিদেশে চাকরি নিলেন। এখন সেখানেই সংসার। তবু মন খারাপ হয়। বলেন, ‘‘ছেলে হওয়ার পরে আনন্দের খবরটাও সকলকে দিতে পারলাম না। ভাবতে হল, কে-কী বলবেন!’’
যোগাযোগ আছে প্রথম স্বামীর সঙ্গে? তৃণা বলেন, ‘‘আমার প্রথম স্বামী খুবই ভালবাসে আমাদের। যোগাযোগ আছে। পারিবারিক অনুষ্ঠানে দেখা হয়। তবে লোকের মাঝে খুব যে সহজ হতে পারে, তা বলা যায় না।’’ ছেলেকে কোলে নিয়ে তৃণা বলে চলেন, একটা সময়ে ভাবতেই পারছিলেন না, কী ভাবে নীলের সঙ্গে সম্পর্ক এগোবে। বললেন, ‘‘কাউকে তো ভেবেচিন্তে ভাল লাগে না। প্রেমটা হয়ে গিয়েছিল হঠাৎ। তবে প্রথমে আমিও বুঝিনি। পরে বুঝতে পারি, এক জনকে ভালবেসে অন্য জনের সঙ্গে বিয়ে করে থাকা ঠিক নয়।’’
কী বলেছিলেন প্রথম স্বামী রাহুলকে? প্রথমে বলতেই পারেননি। শুধু বিচ্ছেদ চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটাই কি ঠিক বলে মনে হয়েছিল তাঁর? তা ঠিক না ভুল, এখনও জানেন না তৃণা। বলেন, ‘‘তখন এটুকুও ভাবিনি, আদৌ আবার বিয়ে করব কি না। শুধু মনে হয়েছিল রাহুলের সঙ্গে বিয়েটা রাখা ঠিক হচ্ছে না।’’ তৃণার পরিবার প্রথমে অবাক হলেও, পরে বুঝেছে তাঁকে। মা-দিদি সকলেই পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু তাঁদেরও মন্দ কথা কম শুনতে হয়নি।
কোনটা ভুল? প্রশ্ন পিছু ছাড়ে না তৃণার। প্রেমের পড়ার পড়েও কি তা লুকিয়ে রেখে, প্রথম বিয়েটাই কি তবে টিকিয়ে রাখতে হত তাঁকে? তবে সেই ব্যবহারটি ঠিক হত তো প্রথম স্বামীর সঙ্গে?
মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ও খানিকটা তৃণার সুরেই মন্তব্য করলেন। তাঁর বক্তব্য, প্রেম যে চাইলেই হবে, না চাইলে হবে না— এমন জিনিস তো নয়। তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই বিয়ের পরেও নতুন করে অন্য কারও প্রেমে পড়তে পারেন। তার পরেও তিনি সে বিবাহে থাকবেন কি না, থাকলে কী কারণে থাকবেন, কী ভাবে তার সঙ্গে বোঝাপড়া করবেন, সে সিদ্ধান্ত একান্তই তাঁর। আমরা সে জীবন নিয়ে কোনও নিদান দেওয়ার কেউ নই। তাতে জটিলতা থাকতে পারে, কিন্তু সম্পর্কে বিচলন ঘটছে মানেই, যিনি ঘটাচ্ছেন, তাঁকে কাঠগড়ায় তুলতে পারি না।’’ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঠিক-ভুল বলে কিছু হয় নাকি, প্রশ্ন তুললেন অনুত্তমাও। মনোবিদের বক্তব্য, মানুষে সম্পর্কে জড়ায় ভাল থাকার জন্য। কেউ ভাল থাকতে চাইলে নিন্দার কিছু আছে কি তাতে? তৃণার বাড়ির লোকেরা যে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা থেকে বোঝা যায় যে, তাঁরা ওঁর ভাল থাকাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
তৃণা অবশ্য গুলিয়ে ফেলেছেন ভাল-মন্দের ব্যাখ্যা। তিনি শুধু বলেন, ‘‘তখন যা করেছিলাম, সেটা আমাদের প্রত্যেকের জন্য সম্মানজনক হবে ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এত সমালোচনার মুখে পড়ে এখন সবটা গুলিয়ে গিয়েছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy