সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সহজ হবে সঙ্গে ছাতা থাকলে, তবে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ছবি: শাটারস্টক।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ কমেনি। এ দিকে বর্ষাও শেষ হয়ে শেষ হচ্ছে না যেন। আবার ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েডও হচ্ছে। সাধারণ ফ্লু ও পেটের গোলমাল তো আছেই। কোভিড ঠেকাতে দিনে বার দুয়েক শ্যাম্পু-সাবানে স্নান করে একটু-আধটু হাঁচি-কাশি-গলা ব্যথা হওয়াও বিচিত্র নয়। সমস্যা হল, যে উপসর্গই হোক না কেন তাতে দুশ্চিন্তা প্রচুর। সাধারণ বদহজমের পেটের গোলমালকে কোভিড বলে মনে হয়। গা-হাত-পা-মাথা ব্যথাকেও তাই। জ্বর-সর্দি-কাশি হলে তো কথাই নেই। বরবাদ রাতের ঘুম। সব মিলে কমে যেতে পারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। সেখান থেকেই বিপদ। সুযোগ পেয়ে যেতে পারে সব ধরনের জীবাণু। যে রোগ হওয়ার কথা ছিল না, হয়তো সেও হাত বাড়াবে। কোভিড ঠেকানোর নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশিই খাওয়া-দাওয়া, স্নান, ঘুম, ব্যায়াম, সব ব্যাপারেই নিয়ম মেনে চলতে হবে।
খাওয়ার নিয়ম
ঘরে বানানো খাবারের বিকল্প নেই। এতে না থাকবে করোনা ভাইরাস, না থাকবে পেটখারাপের জীবাণু। হালকা করে রান্না করলে বদহজমও হবে না। অতএব বাইরের খাবার বাদ দিন।
রান্নায় সব ধরনের মশলা ব্যবহার করুন। আদা, রসুন, হলুদ, ধনে, জিরে, কালো জিরে, মেথি, মৌড়ি, গরম মশলা। ধনে পাতা, কারি পাতা, তুলসি, পুদিনা দিয়ে সিজনিং করুন। প্রতিটি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, জানালেন পুষ্টিবিদ বিজয়া আগরওয়াল।
আরও পড়ুন: কম্পিউটারে এক টানা কাজ, 'ভিশন সিনড্রোম' থেকে বাঁচতে এই সব মানতেই হবে
দিনের প্রতিটি খাবারের সঙ্গে নিয়ম করে প্রোটিন খান। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সবচেয়ে বড় অস্ত্র আছে এরই হাতে। সব সময় মাছ, মাংস, ডিম খেতে হবে এমন নয়। ডাল, রাজমা, ছোলা, বিনস, সয়াবিন, দই, ছানা, বিভিন্ন রকম বাদাম, অঙ্কুরিত ছোলা-মুগ মিলিয়ে-মিশিয়ে খান।
প্রচুর ভিটামিন পাবে শরীর। পাবে জিঙ্ক এবং অন্যান্য খনিজ। প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তাদেরও বিরাট ভূমিকা। উপরি পাওনা ফাইবার। যা পেট পরিষ্কার রাখবে, প্রেশার-সুগার-কোলেস্টেরলের বাড়াবাড়ি কমিয়ে কমাবে কোভিডের আশঙ্কা।
আরও পড়ুন:ঘরবন্দি বাচ্চা বুঁদ টিভি-মোবাইলে, সামলাতে কী কী করতেই হবে
আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেবাশিস ঘোষ জানান, সাধারণ ফ্লু ও কোভিড ঠেকাতে ভিটামিন সি-এর ভূমিকা প্রমাণিত। অতএব দিনে গোটা দুয়েক টাটকা ফল খাওয়া জরুরি।মূল খাবার খাওয়ার পর খেলে খাবারের পুষ্টি, বিশেষ করে আয়রন শোষণে সহায়তা করবে। ভাতের পাতে লেবু খেলেও একই উপকার। রোজ যদি আমলকি খেতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই। সবচেয়ে বেশি ভিটামিন সি আছে এই ফলটিতেই। কাঁচা রস করে খেলে সবচেয়ে উপকার। নুন-মধু-গোলমরিচ ইত্যাদি মিশিয়ে নিলে স্বাদ যেমন বাড়বে, বাড়বে উপকারও।
বাড়িতেই খান পুষ্টিকর খাবার। ফাইল ছবি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ডি-এর বিরাট ভূমিকা। আর আমাদের দেশে এর যথেষ্ট অভাব। প্রচুর রোদ থাকলেও সে রোদ লাগাতে মানুষের অনীহা এর প্রধান কারণ। কাজেই খাবার থেকেই একে সংগ্রহ করতে হবে। কুসুম বাদ দিয়ে ডিম খাওয়া চলবে না। খেতে হবে তৈলাক্ত মাছ, মাশরুম, মেটে, ভিটামিন ডি মেশানো দুধ ও ফলের রস। খাবারে তেল-ঘি একেবারে বাদ দিলে হবে না, কারণ ভিটামিন ডি কিন্তু চর্বিসমৃদ্ধ খাবারে ভর করেই শরীরে ঢোকে। কোনও রোগের কারণে এ সব খাওয়া সম্ভব না হলে সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে।
আরও পড়ুন: সব সময় শাসন নয়, ‘স্পেস’ দিন শিশুদেরও
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “ঘরে পাতা দই খাবেন রোজ। এতে অন্ত্রের উপকারি জীবাণুর সংখ্যা-বৈচিত্র বাড়বে। পেট যেমন ভাল থাকবে, বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। জ্বর-কাশি হলেও কিন্তু দই খাওয়া যায়। ঠান্ডা না হলেই হল।”
রাতে কম ঘুমে ক্ষতি বাড়ছে। ফাইল ছবি।
জলের তেষ্টা জল দিয়েই মেটান। দিনে কম করে আড়াই-তিন লিটার জল অবশ্যই খাবেন। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় থাকে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন:‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়ে উঠতে আর কত দিন, ভ্যাকসিনই বা কবে?
কী খাবার বাদ দিতে হবে
যে কোনও প্রসেসড খাবার, প্যাকেটজাত খাবার এ সময় ব্রাত্য। কারণ তাতে যে রং, গন্ধ, সংরক্ষক, অতিরিক্ত নুন-চিনি মেশানো থাকে তাতে শরীরের নানা ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি কমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। অতএব রাশ টানুন নরম পানীয়, প্যাকেটের ফলের রস, কফি ও ক্যাফেইনসমৃদ্ধ খাবার, মিষ্টি-চকলেট-কেক-পেস্ট্রি, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই-চিকেন উইং বা অন্য ছাঁকা তেলে বা ঘিয়ে ভাজা খাবার, অ্যালকোহল ইত্যাদিতে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত এ সব খেলে শরীরে জীবাণু সংক্রমণের রাস্তা প্রশস্ত হয়। বাড়ে রোগের জটিলতাও।
কী কী খেয়াল রাখবেন
• মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার সঙ্গে সঙ্গে কোভিড ঠেকাতে অফিস থেকে ফিরে স্নান করতেই হবে। ঠান্ডার ধাত থাকলে স্নান করুন গরম জলে। শ্যাম্পু করার পর ড্রায়ারে মাথা শুকিয়ে নিন। তাতেও অসুবিধা হলে মাথা সম্পূর্ণ হেডক্যাপে ঢেকে অফিস যান।
• বাড়ি থেকে খাবার, জল নিয়ে যান।বাইরের কোনও খাবার খাবেন না। নিজস্ব কাপ থাকলে তাতে চা-কফি ঢেলে খেতে পারেন।
• রাত জেগে মোবাইল ঘাঁটার অভ্যাস বদলে ফেলুন। ঘুমের ব্যাঘাত হলে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে।
• ২০ মিনিট ধরে এমন ব্যায়াম করুন টানা যাতে শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়।এই ধরনের ব্যায়ামে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy