অফিস থেকে ফিরছেন। এক হাতে ভিড় বাসের হ্যান্ডেল ধরে কোনও মতে নিজেকে গুঁজে রেখেছেন এক চিলতে জায়গায়। অন্য হাতের বুড়ো আঙুল চলাফেরা করছে ফোনের স্ক্রিনে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বেছে নিচ্ছেন লাইক, শেয়ার। টাইপ করে চলেছেন কমেন্ট। বাড়ি ফিরেই নিজেকে এলিয়ে দিলেন সোফায়। যত ক্ষণ না বাথরুমে না ঢুকলেই নয় চলল ফেসবুকের পাতায় কমেন্ট, শেয়ার। জামা কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসেও বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল কিন্তু ফোনের স্ক্রিনেই। রাতে খাটে শুয়েই ব্যাটারি লো জানান দিল ফোন। চার্জারে লাগিয়ে চলল ফেসবুক।
কতক্ষণ? যত ক্ষণ না চোখ বুজে আসছে ঘুমে। হাতের আলগা বাঁধনেই রয়ে গেল ফোন। সকালে ঘুম ভেঙেও প্রথম কাজও একটাই। যতই দেরি হয়ে যাক অফিস বেরনোর আগে এক বার চেক করতেই হবে ফেসবুক। আপনার অবস্থা কি এ রকম? কিছুতেই থাকতে পারছেন না ফেসবুক ছাড়া? সারা দিনের হাজার ব্যস্ততার মাঝেও বিভোর হয়ে থাকেন ফেসবুকের নেশায়? তা হলে কিন্তু আপনার মস্তিষ্কের বারোটা বেজে গিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, খুব বেশি মাত্রায় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের দুটো কগনিটিভ-বিহেভিয়ারিয়াল সিস্টেমের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা কগনিটিভ সাইকোলজি ও নিউরোসায়েন্সের ডুয়াল সিস্টেম পারসপেক্টিভের সাহায্যে এই গবেষণা চালান। যা জানায় মানুষের মস্তিষ্ক দু’ধরনের মেকানিজম বা পদ্ধতির সাহায্যে সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম সিস্টেমটি অটোমেটিক এবং রিঅ্যাকটিভ। যার সাহায্যে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সিদ্ধান্ত নিই আমরা। অনেক সময়ই যা হয় অবচেতনের দ্বারা। সোশ্যাল মিডিয়ায় নোটিফিকেশন দেখে প্রতিক্রিয়া জানানো এর উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
দ্বিতীয় সিস্টেমটি রিফ্লেকটিভ। কার্যকারণ ব্যাখ্যা করে এই সিস্টেম কিছুটা ধীরগতিতেত কাজ করে। ডিপল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক হামাদ কাহরি সারেমির মতে এই সিস্টেম মস্তিষ্কের কগনিশন ও বিহেভিয়ার নিয়ন্ত্রণ করে। দ্বিতীয় সিস্টেমের সাহায্যে আমরা নিজেদের উদ্দীপনা যেমন প্রশমন করতে পারি, তেমনই অবাঞ্ছিত আচরণও নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
উত্তর আমেরিকার একটি ইউনিভার্সিটির স্নাতক স্তরের ৩৪১ জন পড়ুয়াকে নিয়ে গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা যত বেশি সময় ফেসবুকে কাটান তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় সিস্টেমের মধ্যে ভারসাম্যের অভাব তত প্রকট। যা নেগেটিভ প্রভাব ফেলেছে তাদের পড়াশোনা, পরীক্ষার ফলাফলেও।
আরও পড়ুন: আধুনিক গ্যাজেটের দুনিয়ায় ঢেউ তুলতে হার্ডওয়্যার বাজারে ফেসবুক
জার্নাল অব ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে এই গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy