অনলাইনে কেনাকাটা, ইন্টারনেটে জুয়া খেলার মতো বেড়েছে পর্নোগ্রাফি দেখার প্রবণতাও। ছবি: সংগৃহীত
অতিমারিতে বেড়েছে পর্নোগ্রাফি দেখার হার। বেড়েছে আসক্তি। গত বছর থেকে তেমনই বলছে নানা পরিসংখ্যান। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাবগুলি কী কী? কী বলছেন চিকিৎসকেরা?
গত বছর থেকে গোটা পৃথিবীতেই পর্নোগ্রাফি দেখার হার অনেক বেড়ে গিয়েছে। অতিমারির কারণে ঘরবন্দি থাকার ফলে বেড়েছে নেটমাধ্যম বা অনলাইনে সময় কাটানোর প্রবণতা। তারই হাত ধরে উঠে এসেছে পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তিও।
মনোরোগ চিকিৎসক সঞ্জয় গর্গের বক্তব্য, গত এক বছরে অনলাইনে তিন ধরনের কাজের মাত্রা বিপুল ভাবে বেড়ে গিয়েছে। জুয়া খেলার প্রবণতা, অনলাইনে কেনাকাটা এবং পর্নোগ্রাফি দেখা। ‘‘যৌনতা এমন একটা জিনিস, যা নিয়ে আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষ এখনও খোলাখুলি কথা বলেন না। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষেরই যৌনচাহিদা, পছন্দ-অপছন্দ আছে। অতিমারির কারণে অন্য কারও সঙ্গে সেই যৌনতার আদানপ্রদানের মাত্রা কমে গিয়েছে। সেই খামতিটা পূরণ করার জন্যই অনেকে হাজির হচ্ছেন নেটদুনিয়ায়। ফলে পর্নোগ্রাফি দেখার হার বেড়েছে,’’ বলছেন সঞ্জয়।
পর্নোগ্রাফি অতিরিক্ত দেখার ফলে কোনও ক্ষতির আশঙ্কা থাকে কি? অতিরিক্ত পর্নোগ্রাফির কারণে নানা বয়সের মানুষের মধ্যে আলাদা আলাদা সমস্যার পরিমাণ বাড়ছে বলে মত সঞ্জয়ের। ‘‘বয়ঃসন্ধির অনেকেরই পড়াশোনা নষ্ট হচ্ছে। খিটখিটে হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। বাবা-মা বা পরিবারের অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে। অন্য কোনও কাজে এই সময় ব্যয় করলে হয়তো এতটা সমস্যা হত না। কিন্তু পর্নোগ্রাফির আসক্তি হয়ে যাওয়ার ফলে, সেটি দেখার সময়ে বাধা পড়লেই মন তিক্ত হয়ে যাচ্ছে,’’ বলছেন সঞ্জয়।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও কি তা-ই? সঞ্জয় বলছেন, ‘‘এমন মানুষও দেখেছি, পর্নোগ্রাফির প্রতি এত আসক্ত হয়ে পড়েছেন, অন্য কোনও কাজ করতে পারছেন না। তাই চাকরি চলে গিয়েছে। এমন মানুষও আমাদের সাহায্য চেয়েছেন, যিনি সন্তানের দেখভাল ঠিক করে করতে পারছেন না পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তির কারণে।’’ এই আসক্তির কারণে যৌনচাহিদায় বড়সড় বদল আসে। যে সম্পর্কগুলি আগে খুব স্বাভাবিক ছিল, তাতে আর মন ভরে না। ফলে যৌনসম্পর্কের অবনতি হয়, সম্পর্কে ভাঙন ধরে। এমনই বলছেন তিনি।
এর থেকে মুক্তির উপায় কী? সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘যিনি আসক্ত হয়ে পড়েছেন, তাঁকেই বুঝতে হবে, তিনি আসক্ত কি না। তিনি এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চান কি না।’’ তেমন যদি হয়, তা হলে এই আসক্তি কাটানোর রাস্তা বলে দিচ্ছেন তিনি।
• ডায়েরি লিখুন: প্রতিদিন কত ক্ষণ কাটাচ্ছেন পর্নোগ্রাফি দেখে, সেটা লিখে রাখুন। নিজের চোখেই ধরা পড়বে আসক্তির পরিমাণ।
• মজার কিছু করুন: এমন কিছু করুন, যাতে মজা পাবেন। গান শুনুন, সিনেমা দেখুন। এক বারে আসক্তি কাটে না। আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন অন্য কিছুর মধ্যে মজা খুঁজে।
• নতুন কিছু করুন: ছবি আঁকা শুরু করুন। বা গান গাওয়া। এতে মন সরে আসবে আসক্তি থেকে।
• কাছের মানুষের সঙ্গে কথা: বন্ধু বা আত্মীয়দের মধ্যে যাঁদের সঙ্গে এই আসক্তি নিয়ে কথা বলা যায়, তাঁদের জানান। তাঁরা সাহায্য করবেন।
• মনোবিদের পরামর্শ: পেশাদার মনোবিদরা এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করতে পারেন।
• চিকিৎসকের সাহায্য: বর্তমানে চিকিৎসাবিজ্ঞানও এই ধরনের আসক্তি কাটানোর রাস্তা দেখাচ্ছে। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধও সাহায্য করতে পারে এই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy