উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রকল্পে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হল। ক্যাম্পাসে ১ একর জায়গায় ১০ তলা ওই ভবন তৈরি করা হবে বলে মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালন কমিটি এবং রোগী ক্যলাণ সমিতির বৈঠকের পর এ কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত পরিচালন সমিতি এবং রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “আগের সরকার শিলানা্যস করে ফলক লাগালেও কাজ করেননি। উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঢেলে সাজতে উদ্যোগী। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাই মাল্টিফেসিলিটি সার্জিক্যাল ব্লক গড়ার ব্যাপারে তিনি উৎসাহী। কোন সংস্থা ওই কাজ করবে তা ঠিক করা হয়েছে। ডিসেম্বর থেকেই তারা কাজ শুরু করবেন। কেন্দ্রীয় অর্থের পাশাপাশি রাজ্য সরকার থেকেও অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রেই জানা গিয়েছে, সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা দিতে ৭ টি ব্লক থাকছে। সেগুলি হল কার্ডিও থোরাসিক সার্জিরি, নিউরো সার্জিরি, অঙ্ক সার্জিরি, ইউরো সাজার্রি, নেফ্র সার্জিরি, পেডিয়েট্রিক সার্জারি এবং প্লাস্টিক সার্জারি। ১ বছর সময়ে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। ৮০ কোটি টাকার কিছু বেশি খরচ হবে ভবন নির্মাণের কাজে। ৬০ কোটি টাকা দরকার সরঞ্জাম কেনার জন্য। উল্লেখ্য, রাজ্যে মালদহ এবং বাঁকুড়াতেও ওই প্রকল্পে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রকল্পের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায় বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার সঙ্গে কথা বলবেন।
ওই সুপার স্পেশালিটি ব্লক তৈরির বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া ছাড়াও এ দিন বৈঠকে আলোচনা হয়েছে ৬০০ আসনের একটি অডিটোরিয়াম তৈরির ব্যাপারেও। এ বছর এমসিআই ১৫০ আসনে এমবিবিএস পাঠক্রমে ছাত্রছাত্রী ভর্তির অনুমোদন দিলেও পরিকাঠামোর অনেক ক্ষেত্রেই ঘাটতি রয়েছে বলে অভিযোগ। সে ক্ষেত্রেও বড় অজিটরিয়াম তৈরির প্রয়োজন রয়েছে। তা ছাড়া আগামী ৫ নভেম্বর মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে অন্তর্বিভাগও চালু করা হচ্ছে। ওই বিভাগে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্তরের কোর্স চালু হয়েছে। তাদের জন্য অন্তবির্ভাগ থাকা বাধ্যতামূলক। তা না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। তাই অন্তবির্ভাগ চালু না হলে ভবিষ্যতে ওই বিভাগে পিজি পাঠ্যক্রমের অনুমোদন আটকে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
এমনিতেই এমবিবিএস পাঠ্যক্রমে ছাত্রছাত্রী অনুপাতে প্রশিক্ষক নেই বলে উদ্বিগ্ন রয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ১ অক্টোবরের পর মেডিক্যাল কাউন্সিলর অব ইন্ডিয়ার তরফে যে কোনও দিন পরিদর্শনে আসার কথাও রয়েছে। তার উপর চিকিৎসক অধ্যাপকদের একাংশ দীর্ঘদিন ধরে কাজে না এসে বেতন তুলতেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর নির্দেশে এর পর নড়ে বসেন কর্তৃপক্ষ। ৯ জন চিকিৎসককে শো-কজও করা হয়। বিভাগীয় প্রধানদের কাছ থেকে সমস্ত চিকিৎসকদের স্টেটাস রিপোর্ট চাওয়া হয়। অথচ তা নিয়ে এ দিন কোনও আলোচনা হয়নি। মন্ত্রী বলেন, “পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।”
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে চিকিৎসা বর্জ্য বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে নষ্ট করার জন্য ‘ইনসিনারেটর’ ব্যবস্থা বাম জমানাতেই করার কথা ঠিক হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তারা তা করে যেতে পারেননি। সেই ব্যবস্থা চালু করতে সচেষ্ট হয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তা ছাড়া ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান ঠিক মতো চলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ ‘জেনেরিক’ নামে ওষুধ লিখছেন না বলে অভিযোগও রয়েছে। মন্ত্রীর বলেন, “মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ, সুপার এবং অপর চিকিৎসককে নিয়ে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সমস্যার বিষয়টি খতিয়ে দেখে তাঁরা রিপোর্ট দেবেন। যে সমস্ত চিকিৎসকেরা জেনেরিক নামে ওষুধ লিখছেন না, রিপোর্ট পেলেই সে সব ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy