উত্তরবঙ্গ উজিয়ে দক্ষিণের জেলাগুলিতেও ছায়া ফেলছে এনসেফ্যালাইটিস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ মেনে রাজ্যগুলিকে ইতিমধ্যেই এবোলা নিয়ে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। থেকে থেকেই বিভিন্ন জেলায় থাবা বসাচ্ছে বার্ড ফ্লু কিংবা অ্যানথ্রাক্স।
প্রাণী কিংবা পতঙ্গ বাহিত রোগের প্রকোপে স্বাস্থ্য দফতরের বিড়ম্বনার মাঝেই কলকাতার প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পঠনপাঠন বেলগাছিয়ার পাট চুকিয়ে স্থানান্তরিত হতে চলেছে নদিয়ার মোহনপুরে। ফলে, কলকাতার বুকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে প্রাণী-বাহিত বিভিন্ন রোগের জীবাণু নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করবেন কারা? সংশয় জেগেছে তা নিয়েই। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং শিক্ষকদের অধিকাংশেরই আশঙ্কা, নিত্য থাবা বসানো পশু-পতঙ্গ বাহিত রোগের জীবাণু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা থমকে গেলে রোগ নির্ণয় নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হবে।
ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক পরিতিচি সম্পন্ন এক গবেষকের কথায়, “স্নাতক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে গবেষক ও শিক্ষকদের মোহনপুর ছুটতে হলে তাঁরা বিভিন্ন জীবাণু নিয়ে গবেষণাটা করবেন কখন!” তাঁর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলগাছিয়া ক্যাম্পাসের ওই পরীক্ষাগারটি রীতিমতো আন্তর্জাতিক মানের। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষার যে সুযোগ রয়েছে মোহনপুরে তার ‘সিকি ভাগ’ও নেই। শুধু তাই নয়, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-গবেষকরা ‘জোনোটিক ডিজিজ’ বা প্রাণী বাহিত রোগ নিয়ে বেলগাছিয়ার গবেষণাগার ছাড়াও কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজি, স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং কলকাতার নানা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরীক্ষাগার ব্যবহার করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকের প্রশ্ন, “রাতারাতি ছাত্র-শিক্ষক-গবেষকদের মোহনপুরে পাঠিয়ে দিলে কলকাতার ওই সব বিভিন্ন পরীক্ষাগারে যে গবেষণা চলছে তারই বা কী হবে?”
এ সব প্রশ্নকে অবশ্য বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তাঁর স্পষ্ট কথা, “ও সব যুক্তি দিয়ে কাজ নেই। প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পঠনপাঠন এ বার থেকে বেলগাছিয়ার পরিবর্তে মোহনপুরেই হবে।”
কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘ভেটেরিনারি কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া’র (ভিসিআই) অনুমোদন ছাড়া রাজ্যের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস-বদল কী করে সম্ভব? মন্ত্রীর কাছে তার সদুত্তর মেলেনি। প্রাণিসম্পদ দফতরের এক শীর্ষ কর্তার জবাব, “ওই অনুমোদন পরে জোগাড় করে নেওয়া যাবে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৭ জন শিক্ষক রয়েছেন। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় তিনশো। যাঁদের অধিকাংশই স্নাতক স্তরের। তাঁদের প্রশ্ন, ওয়েবসাইটে কলেজের ঠিকানা রয়েছে ৩৭ বেলগাছিয়া রোড। তাহলে রাতারাতি এই ঠিকানা বদল কেন?
ছাত্রদের দাবি, গত বছর একই ভাবে কর্নাটকের একটি প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভিসিআই-এর অনুমোদন না নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থানান্তর করার ফলে খারিজ হয়ে গিয়েছিল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি। এ ক্ষেত্রে সে ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হলে তার দায় কি সরকার নেবে? স্থানান্তরের যুক্তি হিসেবে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজ্য সরকারের ‘ক্যাটল্ লাইসেন্সিং অ্যাক্ট’ অনুসারে কলকাতা পুর-এলাকায় কোনও খাটাল বা গবাদি পশু পালন নিষিদ্ধ। বেলগাছিয়ার ক্যাম্পাসে যেহেতু পশু পালনের ব্যবস্থা রয়েছে তাই কলকাতার পরিবর্তে তা মোহনপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থানান্তর করা হচ্ছে। যা শুনে রাজ্যের প্রাণিসম্পদ দফতরের অন্যতম উপদেষ্টা তথা জীবাণু বিশেষজ্ঞ জহরলাল চক্রবর্তী জানান, প্রাণী ও মৎস্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য গবাদি পশু রাখা হয় ঠিকই তবে তাদের থেকে রোগ ছড়ানোর কোনওই সম্ভাবনা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রঞ্জিত ঘোষ বলেন, “স্থানান্তরই যদি করা হবে তা হলে গত কয়েক বছরে দেড়শো কোটি টাকা খরচ করে বেলগাছিয়া ক্যাম্পাসে এতগুলি বিল্ডিং, হস্টেল, পরীক্ষাগারই বা তৈরি করা হল কেন?”
প্রশ্ন অনেক, অনড় প্রাণিসম্পদ দফতর তা শুনলে তো!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy