নিবেদিতা কুণ্ডু।—নিজস্ব চিত্র।
শরীরে বাসা বেঁধেছে মারণ থ্যালাসেমিয়া। তবে তা দমিয়ে দিতে পারেনি তাঁর মনের জোর। তাই মারণ ব্যাধিকে সঙ্গী করেই জীবনের দৌড় দৌড়চ্ছেন হুগলির মানকুণ্ডুর পালপাড়ার নিবেদিতা কুণ্ডু। শুধু নিজের লড়াইটুকুই নয়, পাশাপাশি লড়াইয়ের সাহস জুগিয়ে চলেছেন এই রোগে আক্রান্তদের। হাতে তুলে নিয়েছেন থ্যালাসেমিয়া রোধের নানা কর্মসূচী। একটাই আশা, একদিন পোলিওর মতো দেশ থেকে নির্মূল হবে এই মারণ ব্যাধিও।
অসুস্থতার জন্য ঘনঘন ডাক্তারের কাছে ছোটাছুটি, আত্মীয়, প্রতিবেশীদের কাছে করুণার জন--- এমন অবস্থায় বহু থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তের পড়াশোনায় ইতি পড়ে যায় শৈশবেই। ব্যতিক্রম নিবেদিতা। চন্দননগর খলিসানি মহাবিদ্যালয় থেকে এ বার বিএ তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। মা শিবানিদেবী বলেন, “বহু বাধা সত্ত্বেও নিজের জেদে ও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে।” নিবেদিতাদের আগের বাস ছিল উত্তর ২৪ পরগনার বিড়ায়। বয়স যখন সাড়ে চার, তার ই-বিটা থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। তখন থেকেই নিয়মিত রক্ত নিতে হয়। কয়েক বছর আগে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে মানকুণ্ডুতে চলে আসেন নিশীথবাবু। শিবানীদেবীর কথায়, “মেয়ের এমন রোগে স্বামী হতাশায় ভুগতে থাকেন। বছর চারেক আগে হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। সেই অবস্থা থেকেই ও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে ও বদ্ধপরিকর।’’
রোগের জ্বালা সামলে শুধু নিজের পড়াশোনাই নয়, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত অনেক বাচ্চার কাছেই নিবেদিতা ‘দিদি’ তাদের একান্ত আপন। তাদের শরীর খারাপ হলে কী চিকিৎসা করাতে হবে, কোন দিন সরকারি ক্লিনিকে যেতে হবে, সবই সামাল দিতে হয় দিদিকে। এমনই এক আক্রান্ত শিশু ঈশিতা মালিকের মা ভারতীদেবীর কথায়, ‘‘নিবেদিতা আর ওর মা আমাদের মানসিক শক্তি জোগান। কোনও পরিস্থিতিতেই ভেঙে না পড়ার পরামর্শ দেন। মেয়ের শরীর খারাপ হলে সবার আগে নিবেদিতাকে বলি। কোন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, কি করতে হবে সব ওর নখদর্পণে।’’
বৃহস্পতিবার বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবসে তাই প্রচণ্ড ব্যস্ত ছিলেন নিবেদিতা। শ্রীরামপুরের থ্যালাসেমিয়া বিষয়ক একটি সংগঠনের তরফে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের হাতে ওষুধ তুলে দেওয়া হয় এ দিন। নিজের লড়াই নিয়ে নিবেদিতা বলেন, “কারও থ্যালাসেমিয়া হলে সে আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের থেকে আলাদা হয়ে পড়ে। সমাজ থেকেও কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু কোনও পরিস্থিতিতেই তারা যাতে লড়াই না ছাড়ে সেটাই তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি।’’ পাশাপাশি তাঁর দাবি, এই রোগ নির্মূল করতে সচেতনতার প্রচারকে আরও জোরদার করুক সরকার।
চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে যান নিবেদিতা। হাসপাতালের থ্যালাসেমিয়া ইউনিটের মেডিকাল অফিসার কল্লোল ভট্টাচার্য জানালেন, ‘‘অন্য বাচ্চাদের কাছে নিবেদিতা ভীষণ জনপ্রিয়। বাচ্চা এবং তাদের বাবা-মায়েদের যথেষ্ট গাইড করে ও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy