অনুষ্ঠানে আশিসবাবু।—নিজস্ব চিত্র।
পুরসভার তরফে অনুমতি না মেলায় তৈরি হওয়ার পরেও বন্ধ পড়েছিল আয়ুর্বেদ কেন্দ্রটি। পাঁচ মাস পরে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতিতে ভর করেই খুলে গেল ওই কেন্দ্র। রবিবার কালনার নতুন বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া এলাকায় ওই কেন্দ্রটির উদ্বোধনে হাজির ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী। তবে তাঁদের উপস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করেন কালনার পুরপ্রধান তথা বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। প্রকাশ্যে এসে যায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
১৯৬৬ সালে মিশ্র ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামে ওই সংস্থা জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য পুরসভার কাছে অনুমতি চায়। নির্দিষ্ট মাসিক ভাড়ায় দু’তরফের মধ্যে চুক্তিও সাক্ষরিত হয়। ঠিক হয়, পাঁচ বছর অন্তর দশ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে নতুন চুক্তি হবে। প্রথমে ওই জমিতে একটি স্কুল গড়ে মিশ্র ওয়েলফেয়ার। পরে স্কুলটি সরে গেলেও ২০০৬ সাল পর্যন্ত নিয়ম মেনে চুক্তি নবীকরণ চলতে থাকে। কিন্তু এ বছর কোনও চুক্তি না করে পুরবোর্ড ২ লক্ষ টাকা অগ্রিম ভাড়া নিয়ে নেয় বলে ওই সংস্থার অভিযোগ। ওই সময়েই একটি আয়ুর্বেদ চিকিৎসা এবং যোগকেন্দ্র গড়তে চেয়ে পুরসভাকে চিঠি দেন তাঁরা। কিন্তু সমস্ত নথি-তথ্য দেখার পরেও পুরসভা সেই আবেদন নাকচ করে দেয় বলে ওই সংস্থার দাবি। তাঁরা জানান, এরপর বহুবার আবেদন করেও পুরসভার তরফে কোনও উত্তর আসেনি। তবে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে আয়ুর্বেদ কেন্দ্রটি খোলার ব্যাপারে অসুবিধে নেই বলে জানানো হয়। এর মাস পাঁচেক পরে, পুরসভার তরফে ট্রেড লাইসেন্সের অনুমতি না মেলা সত্ত্বেও উদ্বোধন হল ওই কেন্দ্রের।
ওই সংস্থার চেয়ারম্যান তথা শিল্পপতি সুশীল মিশ্রের দাবি, “পুরসভার অনুমতি চেয়ে পাঁচ মাস আগেই চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আজও কিছু জানায়নি তারা।” তাঁর দাবি, “আইন অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সিদ্ধান্ত না জানানো হলে ধরে নেওয়া হয়, সম্মতি রয়েছে। আমরাও তা ধরেই এগোচ্ছি।” তিনি আরও জানান, এ ব্যাপারে পুরসভা আদালতের দ্বারস্থ হলে তাঁরাও মোকাবিলার জন্য তৈরি। কিন্তু বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও ফের খোলার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন? সুশীলবাবুর দাবি, “আমরা বন্ধ করে দিলেও বহু মানুষ তা খওলার দাবি জানাতে থাকেন। তাছাড়া পারিবারিক বহু স্মৃতিও জড়িয়ে রয়েছে। তাই এই সিদ্ধান্ত।”
এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেন দুই মন্ত্রীই। রাজ্যের ক্ষুদ্র, কুটির ও প্রাণিসম্পদ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানান, শ্যামাদাস বাচস্পতি, কৃষ্ণদাস কবিরাজের মতো চিকিৎসকেরা জন্মেছিলেন এই মহকুমায়। বিখ্যাত কবিরাজ প্রশান্ত দাস গুপ্তের জন্মস্থানও পূর্বস্থলীতে। মন্ত্রীর দাবি, উন্নত পরিকাঠামোর এই আয়ুর্বেদ কেন্দ্রটি একটি নজিরবিহীন প্রতিষ্ঠান। ভেষজ বাগান তৈরির উদ্যোগেরও প্রশংসা করেন তিনি। আর আয়ুস দফতরের মন্ত্রী আশিসবাবু বলেন, “এই কেন্দ্রটির পরিকল্পনার কথা শুনে ভেষজ বাগান তৈরির পরামর্শ দিয়েছিলাম। সংস্থাটি সেই মতো অত্যন্ত উপকারী একটি বাগান তৈরি করেছে। এই কেন্দ্রে রোগীদের জন্য পঞ্চকর্ম নামে একটি পদ্ধতি রয়েছে। চলশক্তিহীন অনেক রোগী এতে উপকার পাচ্ছেন।”
তবে নতুন চুক্তি না করা পর্যন্ত সংস্থাটিকে অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে এগোতে রাজি নয় পুরসভা। এমনকী স্বাস্থ্য দফতর কীভাবে অনুমতি দিল সে নিয়েও খোঁজ করা হচ্ছে বলে পুরপ্রধানের দাবি। তিনি জানান, আইনজীবীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। তবে ওই কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দলের দুই মন্ত্রীর হাজির ছিলেন শুনে বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “উদ্বোধনে আসার আগে দুই মন্ত্রীর বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করা উচিত ছিল।” তিনি জানান, দ্রুত বিষয়টি নিয়ে বৈঠক ডাকবে পুরসভা। সেখানেই আগামী পদক্ষেপ স্থির করা হবে।
আর পুরসভার অনুমতি নেই শুনে স্বপনবাবু বলেন, “সংস্থাটিকে জেলা স্বাস্থ্য দফতর অনুমতি দিয়েছে। তাছাড়া এটা তো ভালো কাজ। পুরসভার সঙ্গে সংস্থার কি হয়েছে সেটা জানা নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy