প্রতীকী ছবি।
একুশ শতক শুরু হতে তখনও কয়েক বছর বাকি। ওই সময় থেকেই লোক জন একুশ শতকের দক্ষতা (টোয়েন্টি-ফার্স্ট সেঞ্চুরি স্কিলস) নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। কিন্তু সম্প্রতি, এই করোনা সঙ্কটকালে, এক প্রবল তাগিদ থেকে এই সব দক্ষতা নিয়ে কথা শুরু হয়েছে। এটা আরও বেশি হয়েছে, কারণ এই অতিমারি শুধু আমাদের জীবনটাকেই বদলে দেয়নি, গোটা বিশ্বকে এক নতুন যুগের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
স্কুল-কলেজ এখন জনশূন্য। ই-শিক্ষাই এখন নতুন ধারা। ক্লাসরুম শিক্ষা থেকে অনলাইন শিক্ষার এই পরিবর্তনটা কেমন যেন বিদ্যুৎগতিতে ঘটে গেল। একই ধরনের বিপ্লব ঘটেছে কাজের দুনিয়াতেও।
এই পরিস্থিতিতে তোমাদের, ছাত্রছাত্রীদের, পড়াশোনা, কেরিয়ার এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্য রকম ভাবে ভাবার পরামর্শ দেব। সে জন্যই আগামী কয়েকটা সংখ্যায় আমি আলোচনা করব সেই স্কিল ও গুণগুলো নিয়ে, যেগুলো এই অনিশ্চিত সময় এবং ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে তোমরা অনুশীলন করবে। এর মধ্যে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্কিল হল যে কোনও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা (flexibility)-সহ হার না মানার মনোভাব (resilience)।
এই হার না মানা মনোভাবই তোমাকে যে কোনও কঠিন সময়, পরাজয় কিংবা বাধাকে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে। এটা থাকলে তুমি যে কোনও পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারবে, পারবে যে কোনও পরাজয়ের মধ্যে থেকেও সুযোগ খুঁজে নিতে। এই মনোভাব যে কোনও ব্যর্থতা থেকে শুধু শিক্ষা নিতেই শেখায় না, কোনও পরিস্থিতিকে অন্য ভাবে দেখতে এবং সেইমতো কৌশল নিয়ে ভাবতেও শিখিয়ে দেয়। দ্রুত পরিবর্তনশীল ও অনিশ্চিত এই সময়ে কিন্তু মনের দিক থেকে দুর্বল মানুষেরা যুঝতে পারবে না, টিকেও থাকতে পারবে না। লকডাউন পরিস্থিতিতে বহু মানুষের পেশাগত ক্ষেত্রে ভয়াবহ বিপর্যয় হয়েছে। আমি নিশ্চিত যে তোমরা নিজেরাও মুগ্ধ হয়ে দেখেছ, এদের মধ্যে অনেকে কী ভাবে এই কঠিন সময়ের সঙ্গে শুধুমাত্র নিজেদের মানিয়েই নেননি, তার মোকাবিলা করারও চেষ্টা করছেন বা করেছেন। এমন কত উদাহরণ রয়েছে, যেখানে এই নির্ভীক মানুষেরা রাতারাতি নিজেদের ভাচুর্য়াল দুনিয়ার উপযোগী করে তুলেছেন। ক্রমাগত বদলাতে থাকা পরীক্ষার সময়সূচি সামলানো, ভার্চুয়াল ক্লাস ও কোর্সে হাজিরা দেওয়া, অনলাইন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্কসভা, ফেস্ট-এর আয়োজন করা, এবং তারই মধ্যে রান্নাবান্না, কারুশিল্পের মতো নতুন কিছু শেখা— এই অবস্থায় অসামান্য দক্ষতা প্রদর্শন করেছে অনেক ছাত্রছাত্রীও।
কোভিড সঙ্কটের আগেও কোনও নতুন পদ্ধতির বিষয়ে আলোচনার সময় দু’ধরনের অভিব্যক্তি শুনতে পেতাম। প্রথমটা, ‘কিন্তু আমরা আগে তো কখনও এ ভাবে করিনি’ আর দুই, ‘কিন্তু আমরা তো সব সময় এ ভাবেই করে আসছি’। বর্তমান সময় দেখিয়ে দিয়েছে, আমরা যদি পুরনো অভ্যাস ঝেড়ে ফেলতে না পারি, তা হলে টিকে থাকতে পারব না। আমরা যা-ই করি না কেন, কোভিড-কাল এবং পরবর্তী সময়ে কার্যকর ভাবে কাজ করতে হলে পুরনো অনেক কিছু ভুলে গিয়ে একদম নতুন ভাবে শিখতে হবে।
ডিরেক্টর, মডার্ন হাই স্কুল ফর গার্লস
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy