Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Jobs

এখনই সময় তৈরি হওয়ার

অতিমারির কারণে চাকরির বাজারে এখন সুযোগ কম। কিন্তু চিরকাল তা থাকবে না। তখন যাতে কোনও সুযোগ হাতছাড়া না নয়, সে জন্য নিজেকে গড়ে তোলো এখন থেকেই। কী ভাবে, আলোচনা করলেন সৌরজিৎ দাসঅতিমারির কারণে চাকরির বাজারে এখন সুযোগ কম। কিন্তু চির কাল তা থাকবে না। তখন যাতে কোনও সুযোগ হাতছাড়া না নয়, সে জন্য নিজেকে গড়ে তোলো এখন থেকেই। কী ভাবে, আলোচনা করলেন সৌরজিৎ দাস

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২০ ০০:০৪
Share: Save:

কিছু দিন আগে রূপায়ণ একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ‘মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড অ্যানিমেশন’ শিখে একটি ই-কমার্স সংস্থায় চাকরির আবেদন করেছিল। ফাইনাল সিলেকশনও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সব কিছু ওলোটপালট করে দিল কোভিড-১৯। ওই সংস্থা আর যোগাযোগ করেনি ওর সঙ্গে। রূপায়ণ একা নয়। আজ ওর মতো অবস্থা বহু কলেজ পাশ করে বেরোনো ইঞ্জিনিয়ারিং, এমবিএ বা অন্যান্য স্ট্রিমের ছাত্রছাত্রীদের। কোনও সংস্থাতেই যে কর্মী নিয়োগ হচ্ছে না, এমন কিন্তু নয়। কিন্তু বাজারে অভিজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ মিলিয়ে হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী। এই পরিস্থিতিতে অন্যদের থেকে নিজেকে এগিয়ে রাখতে কী করা উচিত, কতটা ভাল ভাবে কাজে লাগানো যায় এই অতিমারির সময়টা, বাড়ি বসে কেমন করে অনলাইন চাকরির খোঁজ করা যায়— এই বিষয়গুলো নিয়েও ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন। চাকরি খোঁজা সহজ ব্যাপার নয়, অন্তত এই সময়ে। ভাল প্রতিষ্ঠানে মনের মতো চাকরি পেতে যথেষ্ট সময় দিতে হয়, সেই সঙ্গে লাগে আন্তরিক চেষ্টাও। তার জন্য ঠিকঠাক পরিকল্পনা চাই।

সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং

ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তোমাদের ফ্রেন্ডলিস্টে বন্ধুবান্ধব ছাড়াও স্কুল-কলেজের প্রাক্তনীরাও সাধারণত থাকে। তাদের সঙ্গে চ্যাট করার সূত্রে জেনে নিতে পারো, তাদের সংস্থায় কোনও চাকরির সুযোগ আছে কি না, বা আগামী দিনে কোন কোন বিভাগে সুযোগ তৈরি হতে পারে। একই সঙ্গে আলোচনা করে নাও তোমার বর্তমান দক্ষতার পাশাপাশি আর কী করলে ওই চাকরি পাওয়ার সুযোগ বাড়তে পারে। অন্য দিকে, এখন অনেক সংস্থাই মার্কেটিং, রিসোর্স তৈরি এবং নেটওয়ার্ক বাড়াতে এই সব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে যোগ দিয়ে থাকে। নজর রাখো, সেখানে তোমার পছন্দসই কোনও সংস্থার পেজ আছে কি না। থাকলে, দেখো কারা কারা তার সঙ্গে যুক্ত আছেন। তাঁদের সঙ্গে নিজের নেটওয়ার্ক তৈরির চেষ্টা করো।

অনেক সময় এই সব প্ল্যাটফর্মে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। সে সবে যোগ দাও। যদি সেই বিষয়ে তোমার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য বক্তব্য থাকে, যা অন্যদের থেকে আলাদা, সেটা লেখো। এতে তোমার ‘ভিজ়িবিলিটি’ বাড়বে। নানা অভিজ্ঞতা, নতুন ভাবনাচিন্তা সময়ে সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘পোস্ট’ করো। দেখো, অন্যরা কী ভাবে সেটা গ্রহণ করছে। তাদেরটাও ‘ফলো’ করো। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পোস্ট এবং ব্লগ পড়ো, ওয়েবিনারে যোগ দাও। জানতে পারবে কোন বিষয়ে কার কী অভিমত। এতে সেই বিষয়ে তোমার নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে সুবিধে হবে। আর চোখ-কান খোলা রাখো, কোথাও চাকরি, ফ্রিলান্সিং বা ইন্টার্নশিপের সুযোগ আছে কি না।

সুযোগ এলে ছেড়ো না

যদি কোথাও ফ্রিলান্সিং বা ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাও, ছেড়ো না। তবে তারও আগে খোঁজ নিয়ে রাখবে, ওই সংস্থায় ইন্টার্নশিপ বা ফ্রিলান্সিং করলে সেটা তোমার সিভি-তে ‘ভ্যালু অ্যাড’ করবে কি না। এই সময় অনেক সংস্থাই হয়তো সে ভাবে পারিশ্রমিক দেবে না। হয়তো কিছুই দেবে না। কিন্তু তা হলেও এই অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। এ ছাড়া হাতে-কলমে কাজ শেখার সুযোগ তুমি পাবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কলেজ থেকেই এই ধরনের ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা হয়। সে বিষয়েও খোঁজ রেখো।

নতুন কিছু শেখো

একটা কাজের জন্য হাজার হাজার প্রার্থী আবেদন করবে। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও মোটামুটি একই। এদের মধ্যে অনেকের আবার চাকরির অভিজ্ঞতাও থাকবে। সে ক্ষেত্রে নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলে ধরবে কী করে? আজকের দিনে অধিকাংশ সংস্থাই শুধুমাত্র ডিগ্রি এবং ভাল নম্বরকে গুরুত্ব দেয় না। কেউ যদি পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের উপযোগী কিছু শিখে থাকে, সেটাও প্রাধান্য পায়। যেমন, যদি কেউ কপি রাইটিং সংস্থায় আবেদন করে, এবং তার তার যদি লেখালিখির সঙ্গে গ্রাফিক্স ডিজ়াইনিং এবং সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট-এর দক্ষতা থাকে, তা হলে চাকরির ক্ষেত্রে সংস্থা তাকেই প্রাধান্য দেবে। ইন্টারনেটের দৌলতে ‘কোর্সেরা’, ‘লিঙ্কডইন’, ‘এডএক্স’-এর মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এখন খুব কম খরচে কিংবা বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের স্বল্পমেয়াদি কোর্সের সুযোগ রয়েছে। প্রযুক্তি থেকে ভাষা, কত কিছু শেখা যায়। বাড়িতে অবসর সময়ে এ রকম কোনও কোর্স করে নিতে পারো। এই ধরনের কোর্স শেষ করার পরে ফেসবুক এবং লিঙ্কডইন প্রোফাইলে সেটা আপডেট করতে ভুলো না।

মাতৃভাষা এবং ইংরেজির পাশাপাশি জার্মান, ফরাসি, স্প্যানিশ, জাপানি বা চিনা-র মতো দু’-একটা বিদেশি ভাষা শিখে নিতে পারলে, তা তোমার ‘রেজিউমে’র গুরুত্ব বাড়াবে। বিশেষত ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রার্থীদের অনেক সময়েই কাজের সূত্রে বিদেশে যেতে হয়। বিদেশি কোনও ভাষা জানা তাই তাদের জন্য আবশ্যক। ‘ব্যাবেল’ কিংবা ‘ডুয়োলিঙ্গো’-র মতো অ্যাপ ডাউনলোড করে মোবাইলের সাহায্যেই এই ধরনের বিদেশি ভাষা শেখার সুযোগ রয়েছে।

মক ইন্টারভিউ দাও

প্রথম চাকরির ইন্টারভিউ! ভাবলেই টেনশনে কেমন যেন হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায় না? আর ঠিক এই কারণেই অনেক সময় প্রার্থীরা যোগ্য হয়েও শেষপর্যন্ত ইন্টারভিউয়ের গণ্ডি পেরোতে পারে না। মাথা ঠান্ডা রেখে কোনও প্রার্থী আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কী ভাবে তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে, সেটা দেখতে চান নিয়োগকর্তারা। এটাও এক ধরনের দক্ষতা যেটা প্র্যাকটিসের মাধ্যমে আয়ত্ত করা যায়। অধিকাংশ ইন্টারভিউতেই সাধারণত কিছু কমন প্রশ্ন করা হয়। যেমন, নিজের সম্পর্কে কিছু বলো, এখনও পর্যন্ত তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য কী, কোন কোন ক্ষেত্রে তোমার দক্ষতা ও দুর্বলতা রয়েছে, কেন তোমাকে আমরা নির্বাচন করব ইত্যাদি। কিন্তু কোনও উত্তর মুখস্থ কোরো না। বরং তোমার কাছে যেন এই ধারণা স্বচ্ছ থাকে, নিয়োগকর্তা এই ধরনের প্রশ্ন করলে তুমি তার কী উত্তর দেবে। বন্ধুবান্ধব বা পরিচিত ব্যক্তি, যারা কিছু দিন আগেই চাকরি পেয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বলো। জেনে নাও, তারা ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় কী ভাবে নিজেদের প্রস্তুত করেছিল। তাদের কারও সঙ্গে এই মক ইন্টারভিউ প্র্যাকটিস করো। ব্যাপারটা ঘরোয়া হলেও তোমাকে কিন্তু আনুষ্ঠানিক ইন্টারভিউয়ের মতো পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বাড়ির কোনও নিরিবিলি জায়গা বেছে নাও। আনুষ্ঠানিক ইন্টারভিউতে যেমন ফর্মাল জামাকাপড় পরে যাবে, এখানেও সাজপোশাক তেমনই রেখো। সঙ্গে তোমার সিভি যেন থাকে। তুমি সিভি-তে কী লিখেছিলে, সেটা চোখের সামনে থাকলে প্রশ্নের উত্তর দিতে সুবিধে হবে। এখন অধিকাংশ সংস্থাই টেলিফোন বা ভিডিয়োর মাধ্যমে ইন্টারভিউ নেবে। যেটাতেই প্র্যাকটিস করো না কেন, সেটা রেকর্ড করো। বন্ধু বা যে ব্যক্তি তোমার মক ইন্টারভিউ নিল, তার সঙ্গে আলোচনা করে দেখো, সব কিছু ঠিকঠাক ছিল কি না। এক বার নয়, একাধিক বার ইন্টারভিউ দাও। এক বার এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচিত হয়ে গেলে আসল ইন্টারভিউয়ের সময় তেমন কোনও সমস্যা হবে না।

অতিমারির কারণে গোটা বিশ্ব আর্থিক সঙ্কটের কবলে। বাজার কবে ঘুরে দাঁড়াবে তার কোনও দিশা এখনও দেখা যাচ্ছে না। ফলে মনের মধ্যে নানা আশঙ্কা কাজ করা স্বাভাবিক। কিন্তু এই পরিস্থিতি সারা জীবন থাকবে না। বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে। তাই এখন নিজেকে এমন ভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে তখন যে কোনও সুযোগ এলে সেটা হাতছাড়া না হয়। তোমরা সেই প্রজন্ম যারা একটা অতিমারির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছ। সেই প্রচেষ্টায় সহজে হাল ছাড়লে চলবে?

অন্য বিষয়গুলি:

Jobs Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy