Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
GRE

লক্ষ্য যদি হয় বিদেশে পড়াশোনা, বিভিন্ন স্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এই নিয়ে কথা বললেন সৌরজিৎ দাসলক্ষ্য যদি হয় বিেদশে পড়াশোনা, বিভিন্ন স্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা। কী ভাবে নেবে তার প্রস্তুতি?

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

জিআরই

আমেরিকা, কানাডা-সহ বিশ্বের বহু দেশের গ্র্যাজুয়েট প্রতিষ্ঠানগুলিতে মাস্টার্স এবং পিএইচ ডি স্তরে ভর্তি হতে ‘গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এগজ়্যামিনেশনস’ বা জিআরই দিতে হয়। বিশ্ব জুড়ে হাজারেরও বেশি বিজ়নেস স্কুলও এখন তাদের এমবিএ এবং অন্যান্য বিজ়নেস প্রোগ্রামে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করার ক্ষেত্রে জিআরই স্কোর দেখে নেয়। জিআরই পরীক্ষা দু’রকমের— জেনারেল এবং সাবজেক্ট টেস্ট। গ্র্যাজুয়েট স্কুলগুলিতে মোটামুটি ভাবে জিআরই জেনারেল টেস্টের স্কোরই চাওয়া হয়। ভারতে জিআরই জেনারেল টেস্টটি কম্পিউটার বেসড পরীক্ষা (সিবিটি) হিসেবে নেওয়া হয়।

জেনারেল টেস্টে তিনটি বিভাগ থাকে: ১) অ্যানালিটিক্যাল রাইটিং; ২) ভার্বাল রিজ়নিং; এবং ৩) কোয়ান্টিটেটিভ রিজ়নিং। মোট ছ’টি সেকশন। অ্যানালিটিক্যাল রাইটিং-এ দু’টি টাস্ক থাকে, ‘অ্যানালাইজ় অ্যান ইস্যু’ আর ‘অ্যানালাইজ় অ্যান আর্গুমেন্ট’। প্রতিটি টাস্কের জন্য আধ ঘণ্টা করে সময় দেওয়া হয়। ভার্বাল রিজ়নিং-এর দু’টি বিভাগে ২০টি করে প্রশ্ন থাকে। এখানেও এক একটি বিভাগের জন্য সময় থাকে আধ ঘণ্টা করে। কোয়ান্টিটেটিভ রিজ়নিং-এর দু’টি বিভাগেও ২০টি করে প্রশ্ন থাকে, উত্তরের জন্য সময় দেওয়া হয় ৩৫ মিনিট করে। অ্যানালিটিক্যাল রাইটিং-এর বিভাগই সব সময়ে এই পরীক্ষার প্রথমে থাকে, তার পরে বাকি বিভাগগুলি ক্রমানুসারে আসে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে একটি অতিরিক্ত ‘আনস্কোরড’ অথবা ‘রিসার্চ’ বিভাগ থাকে। কম্পিউটার বেসড জিআরই-তে মোট সময় লাগে প্রায় ৩ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। পরীক্ষা দেওয়ার পর ১০-১৫ দিনের মধ্যে স্কোর পাওয়া যায়। ওয়েবসাইট: www.ets.org/gre

টোয়েফ্‌ল

আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো যে সমস্ত দেশের মাতৃভাষা ইংরেজি, সেখানে পড়তে যেতে হলে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার প্রমাণ দেওয়ার জন্য ‘টেস্ট অব ইংলিশ অ্যাজ় আ ফরেন ল্যাঙ্গোয়েজ’ (টোয়েফ্‌ল) পরীক্ষা দিতে হয়। ১৫০টি দেশের দশ হাজারেরও বেশি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিদেশি ছাত্রদের ভর্তির ক্ষেত্রে টোয়েফ্‌ল স্কোর দেখে নেয়। এ ছাড়া বিদেশে কাজ ও অভিবাসনের ক্ষেত্রেও এই টেস্টের স্কোর কাজে লাগে। ভারতে ইন্টারনেট বেসড টেস্ট (টোয়েফ্‌ল আইবিটি টেস্ট) চালু রয়েছে।

কী থাকে এই পরীক্ষায়? টোয়েফ্‌ল আইবিটি-তে চারটে ভাগ— লিসনিং, রিডিং, স্পিকিং ও রাইটিং। রিডিং বিভাগে থাকে তিনটে বা চারটে রিডিং প্যাসেজ। প্রত্যেকটি প্যাসেজে থাকে ১০টি করে প্রশ্ন। লিসনিং-এ থাকে দু’ধরনের জিনিস— লেকচার এবং কনভারসেশন। তিন-চারটে লেকচার থাকে, ৩-৪ মিনিট লম্বা। প্রতিটি লেকচারে থাকে ৬টি করে প্রশ্ন। অন্য দিকে, ২-৩ মিনিটের দু-তিনটে কনভারসেশন থাকে। প্রতিটায় ৫টি করে প্রশ্ন থাকে। লেকচার, ক্লাসরুম ডিসকাশন এবং কথোপকথন শুনে তার পর উত্তর দিতে হয়। স্পিকিং-এ থাকে চারটি টাস্ক। কোনও পরিচিত বিষয়ের উপর মত প্রকাশ করতে হয়। রিডিং ও লিসনিং টাস্কের উপর নির্ভর করছে স্পিকিং। রাইটিং-এ থাকে দুটো টাস্ক। রিডিং এবং লিসনিং টাস্কের উপর ভিত্তি করেই প্রার্থীকে প্রবন্ধ লিখতে হয়। পরীক্ষার মোট সময় দেওয়া হয় তিন ঘণ্টা। আনুমানিক ছ’দিনের মধ্যে পরীক্ষার স্কোর জানা যায়। ওয়েবসাইট: www.ets.org/toefl/ibt/about

জিম্যাট

শতাধিক দেশের ২১০০-রও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, ৬০০০-এর কাছাকাছি গ্র্যাজুয়েট ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে ভর্তির অন্যতম মাপকাঠি হল ‘জি-ম্যাট’ বা গ্র্যাজুয়েট ম্যানেজমেন্ট অ্যাডমিশন টেস্টের স্কোর। কারও যদি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়ার ইচ্ছে থাকে এবং সে যদি বিদেশ যেতে চায়, তা হলে এই পরীক্ষায় বসা উচিত। ভারতেও বেশ কিছু বিজ়নেস ম্যানেজমেন্ট স্কুলের ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য এই স্কোর প্রয়োজন হয়।

পরীক্ষায় থাকে চারটে বিভাগ— অ্যানালিটিকাল রাইটিং অ্যাসেসমেন্ট, ইন্টিগ্রেটেড রিজ়নিং, কোয়ান্টিটেটিভ রিজ়নিং, ভার্বাল রিজ়নিং। মোট সময় দেওয়া হয় ৩ ঘণ্টা ৭ মিনিট। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে চেক ইন করতে হয়। পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার প্রায় তিন সপ্তাহের মধ্যে পাওয়া যায় আনুষ্ঠানিক স্কোর।

কোভিডের কারণে এখন জিম্যাট অনলাইন এগজ়্যামিনেশন-ও পরিচালিত হচ্ছে। এখানে থাকে তিনটে বিভাগ— কোয়ান্টিটেটিভ রিজ়নিং, ভার্বাল রিজ়নিং এবং ইন্টিগ্রেটেড রিজ়নিং। সময় ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট, ১৫ মিনিট থাকে চেক ইন-এর জন্য। স্কোর পাওয়া যাবে সাত দিনের মধ্যে। ওয়েবসাইট: www.mba.com/exams/gmat;

www.mba.com/exams/gmat-online

স্যাট

আমেরিকায় কলেজ স্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা ও সম্ভাবনা কতটা, তা যাচাইয়ের জন্য তিন প্রকারের পরীক্ষা হয়ে থাকে। এগুলি হল, স্যাট রিজ়নিং টেস্ট, স্যাট সাবজেক্ট টেস্ট এবং এসিটি বা অ্যাক্ট টেস্ট। জানিয়ে রাখা দরকার, আমেরিকায় অনেক কলেজেই ভর্তির ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাগুলির স্কোর বাধ্যতামূলক নয়। যাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তাদের মধ্যে বেশির ভাগ কলেজ স্যাট রিজ়নিং অথবা অ্যাক্ট টেস্টের স্কোরকে সমান গুরুত্ব দেয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে সাবজেক্ট টেস্টের স্কোরও চাইতে পারে। স্যাট রিজ়নিং এবং স্যাট সাবজেক্ট টেস্ট আমেরিকার কলেজ বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয়। স্যাট রিজ়নিং-এ চারটে বিভাগ থাকে—

রিডিং (প্যাসেজ এবং সেনটেন্স কমপ্লিশন), রাইটিং অ্যান্ড ল্যাঙ্গোয়েজ (প্রবন্ধ-সহ ব্যাকরণ, শব্দের ব্যবহার, বাক্যে ভুল অংশ নির্ধারণ ইত্যাদি), ম্যাথমেটিক্স (অ্যারিথমেটিক অপারেশনস, অ্যালজেব্রা, জিয়োমেট্রি, স্ট্যাটিসটিক্স এবং প্রোব্যাবিলিটি), এসে (প্রবন্ধ)। এসে বিভাগটি ঐচ্ছিক। এখানে ৫০ মিনিটে একটি প্রবন্ধ লিখতে হয়। পরীক্ষার্থী চাইলে শুধু প্রথম তিনটি বিভাগের জন্য পরীক্ষায় বসতে পারে।

এই পরীক্ষায় বসতে অনলাইনে রেজিস্টার করতে হয়। আবেদন করার জন্য https://collegereadiness.collegeboard.org/sat ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।

এসিটি বা অ্যাক্ট টেস্ট

বেশির ভাগ কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য এসিটি টেস্টের স্কোর গ্রহণ করে। আন্তর্জাতিক স্তরে বছরে পাঁচ বার হয় এই পরীক্ষা— সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, ডিসেম্বর, এপ্রিল এবং জুন। কলকাতায় পরীক্ষার দু’টি সেন্টার আছে। এই টেস্টের মূলত চারটে ভাগ: ইংরেজি, ম্যাথমেটিক্স, রিডিং ও সায়েন্স। এ ছাড়া পরীক্ষার্থী যদি চায়, তা হলে পরীক্ষার সঙ্গে জুড়তে পারে প্রবন্ধ বিভাগ।

আমেরিকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রক্রিয়ার বিষয়ে আরও বিশদে জানা যাবে ‘ইউসিয়েফ কলকাতা’ থেকে। হোয়াটসঅ্যাপ: +৯১৮২৪০২-৬১১২১, মেল: usiefkolkata@usief.org.in

আইইএলটিএস

ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা যাচাই করার আর একটি আন্তর্জাতিক পরীক্ষা হল ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গোয়েজ টেস্টিং সিস্টেম (আইইএলটিএস)। বিশ্ব জুড়ে ৯০০০-এরও বেশি প্রতিষ্ঠানে স্বীকৃত এই পরীক্ষা, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, অভিবাসন বিভাগ, সরকারি এজেন্সি, বহুজাতিক সংস্থা ইত্যাদি। যুগ্ম ভাবে পরীক্ষাটি পরিচালনা করে ব্রিটিশ কাউন্সিল, আইডিপি আইইএলটিএস অস্ট্রেলিয়া এবং কেমব্রিজ ইংলিশ ল্যাঙ্গোয়েজ অ্যাসেসমেন্ট। আইইএলটিএস পরীক্ষা দু’ধরনের হয়। একটি অ্যাকাডেমিক, অন্যটি জেনারেল ট্রেনিং। যে সব দেশের মাতৃভাষা ইংরেজি, সেই সব দেশে পড়তে যাওয়ার জন্য এই পরীক্ষা দিতে হয় ছেলেমেয়েদের। আর যারা কাজের অভিজ্ঞতার জন্য বা কোনও প্রশিক্ষণ নিতে কিংবা কোনও ইংরেজিভাষী দেশে প্রবাসী হতে চায়, তাদের জেনারেল টেস্ট দিতে হয়। পরীক্ষায় চারটে বিভাগ থাকে: লিসনিং, রিডিং, রাইটিং ও স্পিকিং। মোট সময় ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। লিসনিং, রিডিং ও রাইটিং টেস্টগুলি একই দিনে হয়ে যায়। স্পিকিং টেস্ট অন্যান্য পরীক্ষাগুলির দিনেও হতে পারে, বা সপ্তাহখানেক আগে বা পরে হতে পারে।

আইইএলটিএস-এর মতো পরীক্ষার বিষয়ে জানতে পারবে ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে। ওয়েবসাইট: www.britishcouncil.in

অন্য বিষয়গুলি:

GRE SAT TOEFL Education Abroad Study
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE