Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

পাখির চোখ

আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে সিভিল সার্ভিসেস মেন পরীক্ষা। এই নিয়ে পরীক্ষার্থীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিলেন গত বছরের সফল পরীক্ষার্থী মৈনাক ঘোষ। শুনলেন সৌরজিৎ দাসআগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে সিভিল সার্ভিসেস মেন পরীক্ষা। এই নিয়ে পরীক্ষার্থীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিলেন গত বছরের সফল পরীক্ষার্থী মৈনাক ঘোষ।

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৩৫
Share: Save:

ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি) পরিচালিত সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষার তিনটি ধাপ— প্রিলিমিনারি, মেন এবং পার্সোনালিটি টেস্ট (পিটি)। এদের মধ্যে মেন পরীক্ষাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এক অর্থে তোমাদের হাতে। ভাল পরীক্ষা দিলে তো ভাল নম্বর অবশ্যই পাবে। কিন্তু যদি তা না-ও দাও, তা হলেও কিন্তু তোমার পুরো খাতা দেখা হবে এবং নিজের পারফরম্যান্স সম্পর্কে একটা ধারণা পাবে। সে দিক থেকে প্রিলিমিনারি পরীক্ষাটা কিন্তু একেবারেই এলিমিনেশন টেস্ট। এর নম্বর কোথাও যোগ হয় না। অন্য দিকে, পরীক্ষার মোট নম্বরের মধ্যে পিটি থেকে যোগ হবে মাত্র ১৪ শতাংশ। এখানে তুমি কতটা নম্বর তুলতে পারবে, তা কখনও বলা যায় না। তাই, মেন পরীক্ষায় ভাল করাটাই থাকে সবার লক্ষ্য।

সব সময় মাথায় রেখো যে চূড়ান্ত তালিকায় নাম তুলতে সাহায্য করবে এই মেন পরীক্ষা। আর পিটি নির্ণয় করে দেবে কোন সার্ভিস বা ক্যাডার-এর যোগ্য তুমি। মেন পরীক্ষা বেশ লম্বা একটি প্রক্রিয়া। পাঁচ দিন পরীক্ষা হয়। সাধারণত প্রতি দিন দুটি ভাগে, তিন ঘণ্টা করে। মাঝে দু’ঘণ্টার বিরতি থাকে। কোনও একটা পেপার খারাপ হলে পরের পেপারে তার রেশ রাখলে চলবে না। বরং সেটা ভাল করার চেষ্টা করতে হবে। তাই এখানে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে ঠিক থাকতে হবে। পরীক্ষার সময় মাথা ঠান্ডা রাখাটা জরুরি। কারণ ওখানে লেখার সঙ্গে সঙ্গে ভাবার প্রক্রিয়া চালাতে হয়। বিরতির সময় স্বাস্থ্যকর খাবার খাও, কিন্তু অল্প পরিমাণে। আর সঙ্গে চকলেট রাখো। এতে খুব তাড়াতাড়ি শরীরে এনার্জি পাবে, এই ধরনের কঠিন পরীক্ষার সময় যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

উত্তর লেখার ধরন

সিলেবাসের কোনটা কী পড়বে এখন আর সেই নিয়ে আলোচনার সময় নেই। বরং কয়েকটা টিপস দিয়ে রাখি, যেগুলো পরীক্ষা দেওয়ার সময় আমারও কাজে লেগেছিল। প্রশ্ন যা-ই থাকুক না কেন, তোমার উত্তর যেন গুছোনো হয়। উত্তরের তিনটি ভাগ থাকবে। প্রথমে ভূমিকা, তার পরে মূল অংশ, শেষে উপসংহার।

ভূমিকা হবে ছোট, পুরো উত্তরটা যতখানি, তার মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। প্রশ্নের ভিতরে ‘কি ওয়ার্ড’-গুলিকে ব্যাখ্যা করো এখানে। সঙ্গে সূত্র-সহ অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলো দাও। ভুল বা মনগড়া তথ্য কখনওই দেবে না। বিখ্যাত উদ্ধৃতি যোগ করতে পারো। যদি প্রশ্নটা বর্তমান কোনও ঘটনা সংক্রান্ত হয়, তা হলে প্রেক্ষাপটটা জুড়ে দিও।

এর পরে আসি মূল অংশে। এই অংশটাই ঠিক করে দেবে, সংশ্লিষ্ট উত্তরটি লিখে তুমি কত নম্বর পেতে পারো। প্রশ্নে যা চাওয়া হয়েছে, তার যথাযথ উত্তর এখানে দিতে হবে। ধরো, উত্তরে চেয়েছে যুক্তিগ্রাহ্য বিশ্লেষণ। এখানে কিন্তু তোমাকে প্রথমে ইতিবাচক ও তার পরে নেতিবাচক, দুটি দিকই দেখাতে হবে। যদিও শেষটা হবে ইতিবাচক ভাবেই। মাথায় রেখো, ইউপিএসসি কিন্তু ইতিবাচক সমালোচনাই পছন্দ করে। এখানেও বিভিন্ন কমিটি বা রিপোর্টের সহায়ক তথ্য দিতে পারো, যা তোমার লেখাকে আরও সমৃদ্ধ করবে। মূল অংশটিকে একাধিক অনুচ্ছেদে ভেঙে লিখতে পারো। দেখতে ভাল লাগে, পরীক্ষকের নম্বর দিতেও সুবিধে। অনেকে অনুচ্ছেদ না করে পয়েন্ট আকারে উত্তর লেখে। এ ক্ষেত্রে কোনও পয়েন্ট তুমি পুরো বাক্যে না লিখে, শুধু দু-তিনটে শব্দ দিয়েই ছেড়ে দিলে, তা করলে চলবে না।

এত ক্ষণ যা লিখেছ সেটারই সংক্ষিপ্তকরণ করতে হবে উপসংহারে। সঙ্গে একেবারে অন্য রকম, ইউটোপিক ধারণাও যোগ করতে পারো, কিন্তু তা যেন যুক্তিগ্রাহ্য হয়। সঙ্গে কোনও চার্ট বা ছবি যোগ করতে পারো, যাতে তা পরীক্ষকের নজর কাড়ে। যদি হাতে খুব বেশি সময় না পাও, তা হলেও দু’তিন লাইনের উপসংহার লিখতেই হবে। একেবারে কিছু না লিখে এসো না।

হাতের লেখা

হাতের লেখা পরিষ্কার রাখো। অনেকেরই এমন হাতের লেখা হয় যে, পড়া যায় না। যদি কারও এমন সমস্যা থাকে, তা হলে দুটি বাক্যের মধ্যে পর্যাপ্ত জায়গা রাখো এবং শব্দগুলো একটু বড় করে লেখো যাতে শিক্ষক বুঝতে পারেন তুমি কী লিখেছ। আর পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে পনেরো-কুড়ি মিনিট কিছু একটা লেখো। এতে পরীক্ষায় হঠাৎ করে লেখার জড়তাটা কেটে যায়।

পরীক্ষার সময়

সাধারণত পরীক্ষা শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। হাতে যখন প্রশ্নপত্র পাবে তখন দু’তিন মিনিট ধরে ভাল করে পুরোটা এক বার দেখে নাও। বেছে নাও কোনগুলি একেবারে সোজা, কোনগুলি তুমি মোটামুটি পারবে। এ বার সেগুলি লিখতে শুরু করো। শক্ত প্রশ্নগুলো রাখো শেষের জন্য। উত্তর লেখার সময় কি-ওয়ার্ডগুলি আন্ডারলাইন কোরো। কিন্তু বেশি কোরো না। তাতে উত্তরটা দেখতে খারাপ লাগবে। এখন সাধারণত ১০ আর ১৫ নম্বরের প্রশ্ন আসে। যত নম্বরের প্রশ্ন, সেই অনুযায়ীই উত্তর করো। তবে দেখে নিও, কারণ ইউপিএসসি মাঝেমধ্যেই প্রশ্নের নম্বর পাল্টে দেয়। খাতার মার্জিনের বাইরে যেন উত্তর না বেরিয়ে যায়। এই ধরনের নির্দেশ কিন্তু খাতার প্রথমেই দেওয়া থাকে। কিন্তু পরীক্ষার্থীরা সেগুলি দেখে না। এর জন্য নম্বর কাটা যেতে পারে।

সঙ্গে থাকুক ঘড়ি

একটা ঘড়ি রাখো। প্রত্যেকটা প্রশ্নের জন্য সময় ভাগ করে নাও। এক বার কোনওটা লেখা হয়ে গেলে, আর সেটা নিয়ে ভেবো না। অনেকে এই করতে গিয়ে সময় নষ্ট করে। যদি পরের প্রশ্ন লিখতে গিয়ে আগের প্রশ্নের কোনও পয়েন্ট মনে পড়ে, সেটা সঙ্গে সঙ্গে যোগ করে দিতে পারো। তার বাইরে আর কিছু ভাবতে যেও না।

চেষ্টা কোরো সব ক’টা

এ বার প্রশ্ন উঠতে পারে, ঠিক কতগুলো প্রশ্ন তোমার করা উচিত এবং কী ভাবে? আমার মতে, তোমার সব প্রশ্ন উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। যদি কোনওটার উত্তর না-ও জানা থাকে, তা হলেও সেই প্রশ্নটা একেবারে ছেড়ে এস না। প্রশ্নটা দু’এক বার পড়ে দেখো, তার কোনও কি-ওয়ার্ড তোমার পরিচিত কি না। যদি একটা-দুটো শব্দও পরিচিত ঠেকে, সেগুলোর উপরে ভিত্তি করে অন্তত একটা অনুচ্ছেদ লিখে এস। তাতে যদি তুমি পাঁচ-দশ নম্বর বাড়তি পাও, সেটাও পরীক্ষায় নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদি দেখো সময়ের অভাবে তা পারছ না, ক্ষতি নেই। আমি বলব, দায়সারা ভাবে ২০টা প্রশ্নোত্তর করার থেকে ১৭টি প্রশ্নের খুব ভাল ভাবে উত্তর করে আসা অনেক ভাল। ঠিক যতটা প্রয়োজন, ততটাই লেখো। যদি দেখো কোনও প্রশ্নে লেখার শেষে আর জায়গা নেই, কিন্তু একটা পয়েন্ট ঢোকাতে হবে, সে ক্ষেত্রে ফ্লো-চার্ট ইত্যাদি ব্যবহার করো।

সব দিক ছুঁয়ে যেও

এ বার আসি প্রবন্ধ (Essay)-র কথায়। এর জন্য ইউপিএসসি-র নির্দেশিকাটা খুঁটিয়ে পড়তে হবে। চিন্তার বৈচিত্র, প্রবন্ধের বিভিন্ন অনুচ্ছেদের মধ্যে সম্পর্ক, বিষয় থেকে সরে না যাওয়া— এমন অনেক নির্দেশই দেওয়া থাকে। যে ছাত্রছাত্রীরা প্রবন্ধ নিয়ে সে ভাবে প্রস্তুত হয়নি, তাদেরই লেখা উচিত সেই সব সাধারণ বিষয় নিয়ে, যেগুলি খুব জটিল নয়। অন্য দিকে, দার্শনিক এবং জটিল বিষয়ের ক্ষেত্রে, আগে সেটা ভাল করে পড়ো। এখানেও মূলত প্রশ্ন লেখার পদ্ধতিটাই অনুসরণ করো। ভূমিকায় প্রবন্ধের কি-ওয়ার্ডগুলি অল্প কথায় ব্যাখ্যা করে নাও। তার পরে মূল অংশে ঢোকো। প্রয়োজনে সহায়ক তথ্য ও উদ্ধৃতি ব্যবহার করো। পৃথক অনুচ্ছেদ করে লেখো, তবে কোনওটাই যেন খুব বড় না হয়। বিষয়টি রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত— যতগুলি দিক থেকে আলোচনা করতে পারো, কোরো। তাতে তোমার প্রবন্ধটি সমৃদ্ধ হবে। সাধারণত সাত-আট পাতায় প্রবন্ধ লিখতে হয়। শেষে ইতিবাচক সমাধান দিয়ে উপসংহার শেষ করো।

ঐচ্ছিকে হেলাফেলা নয়

বাকি রইল ঐচ্ছিক বিষয়। এর উপর প্রায় চল্লিশ শতাংশ নির্ভর করে, তুমি ফাইনাল লিস্টে ঢুকবে কি না, বা তোমার র‌্যাঙ্ক কী হবে। যেহেতু এক-এক জনের এক-এক রকমের ঐচ্ছিক বিষয়, তাই এই নিয়ে আমি বেশি কিছু বলব না। তবে ঐচ্ছিক বিষয়ে যে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হয়, বলাই বাহুল্য।

শেষে...

অনেক সময়েই পরীক্ষা ভাল হয় না। তার জন্য উৎসাহ হারানো বা ভেঙে পড়ার কিছু নেই। আবার তুমি সুযোগ পাবে। অনেকে তিন-চার বারের চেষ্টায় নিজের মনের মতো র‌্যাঙ্ক পায়। আমিও তা-ই পেয়েছি। নিজের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা কোরো। সব সময় আত্মবিশ্বাস রাখো, তুমি ঠিক পারবে।

বক্সের মধ্যে

মেন-এ থাকে মোট ন’টি পেপার। পেপারগুলি হল—

• পেপার এ: ল্যাঙ্গোয়েজ পেপার

• পেপার বি: ইংলিশ পেপার এ ও বি ৩০০ নম্বরের।

• পেপার ১ (এসে)

• পেপার ২ (জেনারেল স্টাডিজ-১— যার মধ্যে রয়েছে ইন্ডিয়ান হেরিটেজ অ্যান্ড কালচার, হিস্ট্রি অ্যান্ড জিয়োগ্রাফি অব দ্য ওয়র্ল্ড অ্যান্ড সোসাইটি)

• পেপার ৩ ( জেনারেল স্টাডিজ ২— গভর্নেন্স, কনস্টিটিউশন, পলিটি, সোশ্যাল জাস্টিস এবং ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস)

• পেপার ৪ (জেনারেল স্টাডিজ ৩— থাকে টেকনোলজি, ইকনমিক ডেভেলপমেন্ট, বায়ো-ডায়ভার্সিটি, এনভায়রনমেন্ট, সিকিয়োরিটি অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট)

• পেপার ৫ (জেনারেল স্টাডিজ ৪— এথিক্স, ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড অ্যাপটিটিউড)

• পেপার ৬ (ঐচ্ছিক বিষয়ের প্রথম পত্র)

• পেপার ৭ (ঐচ্ছিক বিষয়ের দ্বিতীয় পত্র)।

এই পেপারগুলি সব ২৫০ নম্বরের।

প্রথম দিন হয় ‘এসে’ পরীক্ষা। তার পরের দিন জিএস-১ ও জিএস-২। তার পরের দিন জিএস-৩ ও জিএস-৪। এর পরে হয় ল্যাঙ্গোয়েজ পেপার ও কম্পালসারি ইংরেজি। এই দুটি কোয়ালিফায়িং পেপার। মানে, এ দুটোতে নির্ধারিত নম্বর না পেলে, বাকি পেপারগুলি দেখাই হবে না। আর শেষ দিন থাকে ঐচ্ছিক বিষয়ের দুটি পেপার।

সাধারণ প্রার্থীরা মোট ছ’বার এই পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবে। তফসিলি জাতি/ জনজাতি এবং অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণির ক্ষেত্রে এই শর্ত অন্য।

পরীক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে দেওয়া থাকে ইউপিএসসি-র ওয়েবসাইটে। ইউপিএসসি-র ওয়েবসাইট: www.upsc.gov.in

মৈনাক ২০১৮ সালের

পরীক্ষায় ৩১ র‌্যাঙ্ক করেছেন

অন্য বিষয়গুলি:

Education UPSC Civil Services Exam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy