Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Curriculum Vitae

চাই নিজস্বতার ছাপ

চাকরির বাজারে নিজেকে উপস্থাপন করার প্রথম ধাপই হল সিভি। তাই তা এমন ভাবে লিখতে হবে, যেন তা প্রথম দেখাতেই নজর কাড়বে নিয়োগকর্তার। আলোচনা করলেন সৌরজিৎ দাসনিজের ছোট-বড় সাফল্য ফলাও করে লিখলেই তা ভাল সিভি নয়।

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০৩
Share: Save:

চাকরি, উচ্চশিক্ষা, স্কলারশিপ বা ইন্টার্নশিপ, যে কোনও আবেদনে চাওয়া হয় ‘কারিকুলাম ভিটা’, সংক্ষেপে সিভি। অনেকে একে ‘বায়োডেটা’ কিংবা ‘রেজিউমে’-ও বলেন। তোমার পরিচয়, লেখাপড়া, কাজের অভিজ্ঞতা, বিশেষ কৃতিত্ব (পুরস্কার ইত্যাদি) এবং যোগাযোগ, এগুলো থাকতেই হবে সিভি-তে। কিন্তু কেবল তাতেই হবে না। মনে রেখো, যাঁর হাতে তোমার আবেদনপত্র পৌঁছবে, তিনি তোমাকে চেনেন না। আর পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে তোমার বিশেষত্ব কী, তা-ও জানেন না। তোমার বিশিষ্টতার একটা আভাস দিয়ে আবেদনপত্রের প্রতি তাঁকে আকর্ষণ করতে হলে তোমার হাতে প্রধান অস্ত্র হল সিভি। তাই সিভি হওয়া চাই ঝকঝকে, বুদ্ধিদীপ্ত, তাতে থাকা চাই নিজস্বতার ছাপ। সঙ্কোচ করা বা বড়াই করা, কোনওটাই চলবে না সিভিতে। সংযত ভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে, কোথায় তোমার জোর, কেন তুমি যোগ্য।

নিজের ছোট-বড় সাফল্য ফলাও করে লিখলেই তা ভাল সিভি নয়। চাকরির ক্ষেত্রে জব ডেসক্রিপশনের সঙ্গে সঙ্গে থাকে ‘পার্সন স্পেসিফিকেশন’ —অর্থাৎ ওই কাজটা করার জন্য কী ধরনের ক্ষমতা বা দক্ষতা চাওয়া হচ্ছে, তার তথ্য। হতেই পারে জব ডেসক্রিপশন দেখে তোমার মনে হল, এই ধরনের চাকরিই আমি চেয়েছিলাম। কিন্তু পার্সন স্পেসিফিকেশন-এ চোখ রেখে তুমি বুঝতে পারলে, বেশ কিছু জায়গায় তোমার খামতি রয়েছে। প্রয়োজনে এই তথ্যগুলি কোনও খাতায় টুকে রাখো। এই তথ্যগুলি জানা থাকলে ঠিক কী ধরনের সিভি লিখতে হবে, বুঝতে পারবে। উচ্চশিক্ষার নানা ধরনের ফেলোশিপের আবেদনে যে প্রশ্নগুলো দেওয়া থাকে, তা থেকেও আন্দাজ করা যায়, কী ধরনের গবেষক চাওয়া হচ্ছে। এগুলো মাথায় রেখে সিভি লিখতে হবে।

আর একটা কথা। একটিই সিভি বানিয়ে রেখে সব জায়গায় পাঠাবে না। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বিশেষত্ব রয়েছে, তাদের চাহিদারও বিশেষত্ব আছে। তোমার সম্পর্কে সব তথ্য এক হলেও, কোনটাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আগে রাখতে হবে, কোনটা বাদ দিলেও চলে, সেটা বদলে যাবে প্রতিষ্ঠান অনুসারে। তাই প্রতিটা আবেদন অনুযায়ী চাই আলাদা সিভি।

গোড়ার কথা

সিভি হতে হবে নির্ভুল। বাক্যগঠন, বানান ভুল— এ সব সিভি-তে থাকলে বিবেচক বিরক্ত, বিরূপ হবেন। ভুলে ভরা সিভি কেবল জ্ঞানের অভাব বোঝায়, তা নয়। বোঝায় যে তুমি যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে লেখোনি। যা থেকে মনে হতে পারে যে, তুমি স্বভাবতই ‘কেয়ারলেস’। এমনও মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, তুমি যখন একটা নির্ভুল সিভি তৈরি করার পরিশ্রমটা করোনি, অতএব তুমি ফাঁকিবাজ। কিংবা, এই কাজটা পাওয়ার আবেদন তৈরি করতে তুমি যখন যথেষ্ট পরিশ্রম করোনি, তার মানে তুমি কাজটার বিষয়ে যথেষ্ট সিরিয়াস নও। মোট কথা, সিভিতে ভুল থেকে গেলে তা তোমার বিপক্ষে যাবে। নিশ্চিত

হওয়ার জন্য সিভি তৈরি করে নির্ভরযোগ্য কোনও ব্যক্তিকে এক বার দেখে দেওয়ার অনুরোধ করো। তা ছাড়া, যে ধরনের চাকরির জন্য আবেদন করছ, সেই পেশার কাউকে দিয়ে সিভি দেখিয়ে নিলে প্রয়োজনীয় পরামর্শও পাবে।

• ইংরেজিতেই সিভি লেখা হয়। ভাষা রাখো সহজ সরল। অপ্রয়োজনীয় কথা লিখে অযথা লেখা বাড়িও না।

• পুরো সিভি-টা একটাই ফন্টে লিখতে হবে। পরিচিত ফন্ট ব্যবহার করাই ভাল। ফন্টের সাইজ় ১১ বা তার বেশি হলে ভাল হয়। দুটি বাক্যের মধ্যে পর্যাপ্ত জায়গা রাখো। এবং যথেষ্ট মার্জিন ছেড়ে লেখা শুরু করো।

• সিভিতে বিভিন্ন বিভাগের জন্য আলাদা হেডিং দাও। যাতে নিয়োগকর্তারা এক ঝলকে তোমার সিভিটা দেখে নিতে পারেন।

• সাধারণত সিভি ওয়ার্ড ফরম্যাটেই লেখা হয়। কারণ অধিকাংশ জায়গাতেই প্রিন্ট আউট জমা দেওয়া হয়। তবে সিভি-র সফ্ট ফাইলও রেখো। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ই-মেল’এর মাধ্যমে সিভি পাঠাতে বলে।

• অনেকে সিভিতে পাসপোর্ট আকারের ছবি আটকে দেয়। সাধারণত সিভিতে ছবির দরকার পড়ে না। কোনও ধরনের অলঙ্করণ সিভিতে একেবারেই করবে না।

• সিভি দু’পাতার (এ-ফোর সাইজ়ের পাতায়) বেশি বড় করার দরকার নেই।

কাঠামো

সিভি-র শুরুতেই তোমার নাম, বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেল ইত্যাদি রাখো। এখানে যে ই-মেল আই-ডি দেবে, সেটা যেন খুব উদ্ভট কিছু না হয়। চাকরির আবেদন যেহেতু করছ, তাই মার্কশিট ইত্যাদিতে ব্যবহৃত নামটি রেখে কোনও মেল আই-ডি তৈরি রাখা ভাল।

এর পরে থাকুক প্রোফাইল বা পার্সোনাল স্টেটমেন্ট। এখানে খুব ছোট করে তোমার দক্ষতা এবং লক্ষ্য সম্পর্কে কম কথায় একটা অনুচ্ছেদ লেখো, যেটা পড়ে নিয়োগকর্তারা তোমার সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা করতে পারবেন। তা ছাড়া এই অংশটিকে এমন ভাবে লিখতে হবে, যাতে তাঁরা তোমার বাকি সিভিটা দেখতে আগ্রহ বোধ করেন।

এর পরে তোমার যে দক্ষতাগুলি রয়েছে, সেগুলিকে আলাদা বিভাগ করে বুলেট আকারে লিখতে পারো।

অভিজ্ঞতা-অনভিজ্ঞতা

• অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই ফ্রেশারদের সুযোগ দেয়। তবে আবেদন করার আগে যদি কোনও কোর্স বা ইন্টার্নশিপ করে থাকো, সেই তথ্য সিভিতে উল্লেখ করে দিও।

• যাদের আগে চাকরির অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদের পুরনো চাকরির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্যই লিখতে হবে। যেমন, কোন সংস্থায় কাজ করতে, কত বছর করেছ, কী ধরনের প্রোজেক্ট-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলে, কী পদে ছিলে, কী দায়িত্ব ছিল, ইত্যাদি। যে চাকরিটা সর্বশেষ করেছ, সেটাই প্রথমে রেখো। এবং সেখানে যে ধরনের কাজ করেছ বা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছ, সে বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করো। পুরনো চাকরির ক্ষেত্রে খুব বেশি বিস্তারিত কথা বলার প্রয়োজন নেই। কারণ নিয়োগকর্তারা অনেক সময় তোমার শেষ চাকরিতে তুমি কী ভূমিকা নিয়েছিলে বা সেখানে কী কাজ করতে, সেই বিষয়ে বেশি আগ্রহী হতে পারেন। প্রত্যেক চাকরিতে তোমার সাফল্যের বিষয়গুলি উল্লেখ করতে ভুলো না। সম্ভব হলে ‘রেফারি’ হিসেবে কোনও প্রাক্তন সহকর্মীর নাম দিও, যিনি তোমার কাজের দক্ষতা সম্পর্কে বলতে পারবেন।

• আজকাল ‘লিডারশিপ’ বিষয়টাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে কোনও ছোট দলে বা প্রোজেক্টে তোমার টিম লিডারশিপ-এর অভিজ্ঞতা থাকলে, লিখতে ভুলো না।

• কোনও জায়গাতেই বাড়তি কথা লেখার প্রয়োজন নেই।

আর যা কিছু

• খেলাধুলো, নাটক, লেখালিখির মতো এক্সট্রাকারিকুলার অ্যাক্টিভিটি-র সঙ্গে যুক্ত থাকলে, সেটা সিভিতে জায়গা অনুসারে যোগ করে দিও।

• যদি তোমার কোনও ‘হবি’ থাকে, সেটা উল্লেখ করতে ভুলো না। হয়তো তুমি একটা টেকনিক্যাল কাজের জন্য আবেদন করছ। অন্য দিকে, তুমি একটা পার্সোনাল ওয়েবসাইট চালাও নিজের অবসর সময়ে। এই ধরনের তথ্য কিন্তু তোমার সিভিকে অন্যদের থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে দিতে পারে।

• যদি এলাকায় স্বেচ্ছাসেবা ও সমাজসেবামূলক কাজ যেমন, রক্তদান শিবির, দরিদ্র শিশুদের পড়াশোনা করানো, লোকালয় পরিষ্কার-এর মতো কাজে তুমি যুক্ত থাকো— অবশ্যই তা উল্লেখ করবে। এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকাকে ইতিবাচক চোখেই দেখেন নিয়োগকর্তারা।

শিক্ষাগত যোগ্যতা

সাধারণত শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং এক্সট্রাকারিকুলার অ্যাক্টিভিটির কথা শেষে রাখা উচিত।

• চাকরির মতো সর্বশেষ যে পরীক্ষায় তুমি উত্তীর্ণ হয়েছ সেটা দিয়ে শুরু করে ক্রমপর্যায়ে বোর্ডের পরীক্ষা পর্যন্ত লিখতে হবে। লেখার সময় কেবল প্রতিষ্ঠান, ডিগ্রি এবং প্রাপ্ত নম্বর লিখলে হয়তো তা যথেষ্ট না-ও হতে পারে। কোনও কোনও প্রতিষ্ঠান হয়তো দেখতে চাইতে পারে, তুমি কোন কোন বিষয়ে পড়াশোনা করেছ। সে ক্ষেত্রে সংক্ষেপে সেই তথ্যগুলি উল্লেখ করে দিতে হবে।

• হয়তো কোথাও কোনও সেমিনার বা ওয়ার্কশপ করেছিলে। সেখান থেকে সার্টিফিকেটও পেয়েছিলে। সিভি-তে তা অবশ্যই উল্লেখ করবে। সঙ্গে এখানে তোমার ভূমিকা বা সাফল্যের কথাও অল্প কিছু শব্দে বলে দিতে পারো।

• হয়তো কোনও স্বল্পমেয়াদের কম্পিউটার বা বিদেশি ভাষার কোর্স শুরু করেছিলে, কিন্তু শেষ করতে পারোনি। সে ক্ষেত্রে কোর্সটা কত দিন করেছিলে, সে কথা উল্লেখ করে দিও।

অন্য বিষয়গুলি:

Curriculum Vitae CV Resume
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy