অসমে আদিবাসীদের উপরে হামলার নির্দেশ দিয়েছিল এনডিএফবি (সংবিজিৎ) গোষ্ঠীর লেফটেন্যান্ট বি বিদাই। ওই ঘটনার আগেই পাল্টা-আক্রমণের আশঙ্কায় মা-কে বাড়ি থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় এনডিএফবি জঙ্গি নেতা সংবিজিৎ। অসমে গণহত্যার খলনায়কের আসল চরিত্র এমন বলেই জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
বিশ্বনাথ চারিয়ালি থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটার দূরে, এক নম্বর শালাইকাটি গ্রামে বাড়ি ইংতি কাথার সংবিজিতের। পাড়ার লোক ওই জঙ্গি নেতাকে চেনেন চারসিং নামে। বড়ো জঙ্গিদের নেতৃত্ব দেওয়া এই কার্বি যুবক ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর থেকেই ঘরছাড়া। সংবিজিতের পড়শিরা জানান, প্রেমিকাকে নিয়ে পালানো সংবিজিৎ গ্রামে আসে না। তবে, দূরে থাকলেও সব খবর রাখে।
ঘটনার দিন বি বিদাইয়ের ফোন ট্যাপ করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরো জানতে পেরেছিল, আদিবাসীদের উপরে হামলা হলে প্রতি-আক্রমণের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল সংগঠনেরই অনেকে। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, আদিবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথে জবাবি হামলায় তার বাড়িও আক্রান্ত হতে পারে বলে বুঝতে পেরেছিল সংবিজিৎ। তাই, এক সপ্তাহ আগে মা-কে গোপন স্থানে নিয়ে যায় সে। আজ দেখা যায়, সংবিজিতের বাড়ি জনহীন।
দরজা ভেজানো।
পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, ঘটনার দিন বেলা আড়াইটে নাগাদ বিদাইয়ের ফোনালাপ হাতে এলেও, বড়ো ভাষা জানা পুলিশকর্মীর অভাবেই ফোনের কথাবার্তা বোঝা সম্ভব হয়নি। বড়ো পুলিশকর্মীর সন্ধান করে বিদাইয়ের আক্রমণের নির্দেশ জানতে অন্তত আড়াই ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। তাই সময় মতো পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
পুলিশ জানায়, আক্রমণের সময়ে অরুণাচলে থাকা সংবিজিৎ আক্রমণের পরেই তাওয়াং চলে যায়। সেখান থেকে পাড়ি দেয় ভুটান। গত কাল ভুটান সীমান্তের ফুন্টশোলিং-এ সংবিজিতের মোবাইল ‘ট্র্যাক’ করেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। কেন্দ্রের কাছেও হামলার আগাম খবর ছিল বলেই গোয়েন্দা সূত্রে খবর। গণহত্যার ঠিক আগেই এনডিএফবি-র অন্য গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষবিরতির মেয়াদ আরও বাড়ায় কেন্দ্র। তখন ওই গোষ্ঠীর নেতারা ঘনিষ্ঠ মহলে জানান, কয়েক দিনের মধ্যেই সংবিজিৎ গোষ্ঠী হামলা চালাবে বলে তাঁদের ধারণা।
আজ অসমের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ। জঙ্গি দমন নিয়ে সেনা ও অন্য বাহিনী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তা নিয়ে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান। রাজ্যের সংবেদনশীল এলাকায় ৬৬ কলাম সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। জঙ্গি দমনে নিযুক্ত কম্যান্ডারদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলেন সেনা প্রধান। সুহাগ সংঘর্ষ কবলিত এলাকাগুলি চপারে ঘুরে দেখেন। সরকারি সূত্রে খবর, কেন্দ্র ও রাজ্যের গোয়েন্দাদের সঙ্গে বোঝাপড়া বাড়ানোর উপরে জোর দিয়েছেন সেনাপ্রধান।
আজ জঙ্গি দমনে গঠিত ইউনিফায়েড কম্যান্ডের কর্তাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও বৈঠক করেন। যৌথ বাহিনীর কর্তারা তাঁকে জানান, সীমানা ও সীমান্ত এলাকায় রাস্তাঘাটের অভাব। সেতু না থাকায় গাড়ি চলছে না। সেনা অভিযানেও সমস্যা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী যত দ্রুত সম্ভব অরুণাচল, ভুটান সীমান্তে থাকা এলাকাগুলির রাস্তাঘাট উন্নত করার নির্দেশ দেন। সেনা, বিএসএফ, এসএসবি, সিআরপি ও অসম পুলিশকে জঙ্গি দমনে সময়ভিত্তিক ‘রোড ম্যাপ’ তৈরির উপরে জোর দেন গগৈ। বৈঠক শেষে ডিজিপি খগেন শর্মা বলেন, “সীমান্তবর্তী এলাকাগুলির সিংহভাগই সংরক্ষিত অরণ্য। নিয়মানুযায়ী, সেখানে স্থায়ী পুলিশ পোস্ট তৈরি করা যায় না। আমরা বিশেষ অনুমতি নিয়ে ওই জঙ্গলগুলিতে স্থায়ী পুলিশ পোস্ট ও ফাঁড়ি বসানোর ব্যবস্থা করছি।”
আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে অসম গণহত্যার তদন্ত ভার নিয়েছে এনআইএ। কোকরাঝাড় ও শোণিতপুরে এই ঘটনায় চারটি এফআইআর হয়েছে। সেগুলির তদন্ত ভার এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়া হবে।
গণহত্যা নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে সম্প্রতি ত্রাণশিবিরে নিগৃহীত হয়েছেন অসমের ডেপুটি স্পিকার-সহ একাধিক নেতা। কিন্তু তাতে যে রাজনীতিকরা শিক্ষা নেননি তা আজ বোঝা গিয়েছে। ত্রাণ শিবির সফর করার পরে, কংগ্রেস নেতা রিপুন বরা বলেন, “যারা গুলি চালিয়েছে, তারা হিন্দিভাষী ছিল। এটা চিন্তার কথা।” এই কথার প্রতিবাদ করে ভোজপুরি পরিষদ-সহ বিভিন্ন দল।
বিরোধীদের বক্তব্য, “নিরীহদের রক্ষা করতে না পারা কংগ্রেস এখন ঘটনার রাজনীতিকরণের চেষ্টায় রয়েছে।” রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে তরুণ গগৈ ও রিপুন বরার কুশপুতুল পোড়ানো হয়। তরুণ গগৈ সরকারকে আজ আক্রমণ করেন বিজেপি মুখপাত্র সিদ্ধার্থনাথ সিংহও। তাঁর কথায়,“বড়ো জঙ্গিদের সম্ভাব্য হামলা নিয়ে কেন্দ্র রাজ্যকে সতর্ক করেছিল। জঙ্গিদের প্রতি নরম মনোভাবের জন্যই তরুণ গগৈ সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy