নতুন সাজে। সাতনায় ভোটের প্রচারে রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।
নরেন্দ্র মোদীর দিকে ছুড়ে দেওয়া একের পর এক বিশেষণকে এ বার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি।
শুরু হয়েছিল গুজরাত বিধানসভা ভোটের সময়ে সনিয়া গাঁধীর ‘মওত কা সওদাগর’ আক্রমণ দিয়ে। তার পরে মোদী সম্পর্কে নানা বিশেষণ প্রয়োগ করেছেন কংগ্রেস নেতারা। ফলে মাঝে মাঝেই বিতর্কে জড়িয়েছেন তাঁরা। তবে সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী ইমরান মাসুদের মন্তব্য। বিজেপির দাবি, কাল মাসুদ মোদীকে ‘টুকরো টুকরো’ করে কেটে ফেলার কথা বলেছেন। আজ দলের সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিজেপি নেতৃত্ব মাসুদের একটি ভিডিও-ও প্রকাশ করেছেন। আগামিকাল মাসুদ-সহ কংগ্রেস নেতাদের সমস্ত মন্তব্যের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনেরও দ্বারস্থ হচ্ছে বিজেপি। কিন্তু তার আগে ওই সব মন্তব্যের দায় সনিয়ার উপরে চাপিয়ে পাল্টা প্রচারে নামছে তারা।
আজ মোদীর সেনাপতি অরুণ জেটলি সরাসরি তোপ দাগেন সনিয়াকে। তাঁর কথায়, ‘সনিয়া গাঁধী মোদীকে ‘মওত কা সওদাগর’ বলে আক্রমণ শুরু করেছিলেন। রাহুল গাঁধীও মোদীকে হিটলার বলেছেন। দলীয় নেতৃত্ব এ রকম প্ররোচনামূলক মন্তব্য করলে নিচু স্তরে স্পষ্ট বার্তা যায়।’ তাঁর বক্তব্য, ‘কংগ্রেস যখন এমন মন্তব্য করে মেরুকরণের রাজনীতি করছে, মোদী কিন্তু সকলকে এক সঙ্গে নিয়ে চলার কথা বলছেন। ফারাক এখানেই। কংগ্রেস করছে বিভাজনের রাজনীতি, বিজেপি জোড়বার।” কংগ্রেস মুখপাত্র রশিদ অলভির ‘যমরাজ’, দিগ্বিজয় সিংহের ‘রাবণ’, মণিশঙ্কর আইয়ারের ‘রক্তপুরুষ’, মণীশ তিওয়ারির ‘দাউদ ইব্রাহিম’, সলমন খুরশিদের ‘ব্যাঙ’ ও ‘নপুংসক’ মোদীর বিরুদ্ধে করা এই মন্তব্যগুলি নিয়েও পাল্টা প্রচার চালাবে বিজেপি।
তবে মাসুদের মন্তব্য নিয়েই সব চেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে কংগ্রেস। গত ভোটে বরুণ গাঁধী একই ধরনের মন্তব্য করায় তখন বিজেপি-র বিরুদ্ধে তা অস্ত্র করেছিল কংগ্রেস। এখন তারা নিজেরাই সেই অবস্থায় পড়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, বিষয়টি জানার পর আজ প্রিয়ঙ্কা বঢরার নির্দেশে কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা মাসুদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সুরজেওয়ালা বলেন, “কংগ্রেস মুখের ভাষায় বা অন্য কোনও ভাবে হিংসায় প্রশ্রয় দেয় না। মাসুদকে বলা হয়েছে, তাঁর কথার ব্যাখ্যা যেন তিনিই দেন।” এর পর হাইকম্যান্ডের নির্দেশে মাসুদ ক্ষমাও চেয়ে নেন। তিনি বলেন, “মানছি যে এ ধরনের কথা বলা ঠিক হয়নি।” তবে তিনি দাবি করেন, বিজেপির প্রকাশ করা ভিডিওটি আট মাস আগের। তখন তিনি সমাজবাদী পার্টিতে ছিলেন। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, “গুজরাত দাঙ্গার জন্যও মোদীর ক্ষমা চাওয়া উচিত।” দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে, মোরাদাবাদ, সাহারানপুর ও গাজিয়াবাদে প্রচারে যাবেন রাহুল গাঁধী। তখন তিনি ক্ষত মেরামতে সচেষ্ট হবেন।
তবে ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারাই স্বীকার করছেন, মাসুদ পরে যতই ক্ষমা চান, এ ধরনের মন্তব্যে দলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, তা ভোটে ধর্মীয় মেরুকরণে হাওয়া যোগাতে পারে। বিজেপিও সেই সুযোগের জন্যই ওত পেতে রয়েছে। সেই কারণে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে কটূ শব্দ ব্যবহার না করতে নির্দেশ দিয়েছেন রাহুল গাঁধীও।
প্রশ্ন হল, রাহুলের এই নির্দেশের পরেও কেন সলমন খুরশিদ বা ইমরান মাসুদের মতো নেতারা তা শুনছেন না? জবাবে কংগ্রেস নেতারা বলছেন, সলমন বা ইমরানরা এ ধরনের কথা বলছেন স্রেফ স্থানীয় সমীকরণের কথা মাথায় রেখে। ফারুকাবাদ হোক বা সাহারানপুর, সেখানে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা গড়ে ৪০ শতাংশেরও বেশি। ওই সব এলাকায় সংখ্যালঘু ভোটের মেরুকরণ কংগ্রেসের দিকে হলে সলমনদের লাভ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy