সংসদের প্রথম দিনই বিরোধীরা যে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াবে, তা জানাই ছিল। জানা ছিল, বিজেপির পুরনো কৌশলেই তাদের নিশানা করবে বিরোধীরা। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী আজ যে ভাবে সক্রিয় হয়েছেন, তাতে বিস্মিত কংগ্রেসেরই বহু নেতা। বিরোধীদের সম্মিলিত প্রতিবাদের ধাক্কায় দফায় দফায় মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভা। রাজ্যসভায় মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হলেও সরকার পক্ষের জবাবে অসন্তুষ্ট বিরোধীরা এক জোটে ত্যাগ করল সভাকক্ষ।
বরাবর বিরোধীদের অন্যতম অস্ত্র মূল্যবৃদ্ধি। কারণ বিষয়টি আমজনতার সঙ্গে জড়িত এবং সে কারণেই এটা নিয়ে হইচই করে জনতা মন পেতে চায় সব দল। ইউপিএ সরকারের আমলে বিরোধী বিজেপিও এই কাজ করেছে। লোকসভা ভোটের সময় নরেন্দ্র মোদী তুলোধনা করেছেন কংগ্রেসকে। কিন্তু বিজেপি গদিতে বসার পর থেকেই বেড়েছে রেলের ভাড়া, তেলের দাম, এমনকী আলু-পেঁয়াজের দামও। আর সেটিকেই পুঁজি করে আজ কংগ্রেস সংসদের ভিতরে-বাইরে সরব হয়েছে। এই হইচইয়ে প্রথম সারিতে থেকেছেন রাহুল। ওয়েলে না নামলেও আস্তিন গুটিয়ে, স্লোগান দিয়ে নজর কাড়েন তিনি। এ দিন সংসদের বাইরে ঘেরাও অভিযানে দেখা গিয়েছে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কন্যা শর্মিষ্ঠাকেও।
প্রথম দিন থেকেই কংগ্রেস কেন এতটা আক্রমণাত্মক হল? দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশের বক্তব্য ছিল, সংসদে গঠনমূলক রাজনীতির নজির স্থাপন করুক কংগ্রেস। যে কারণে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিকে সরাসরিই সমর্থন করেছিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। কিন্তু শাকিল আহমেদ, গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মারা সনিয়া-রাহুলকে বোঝান, মোদী সরকারকে বেগ দিতে গেলে ইউপিএ জমানায় বিজেপি-র কৌশলই তাদের দিকে ফিরিয়ে দিতে হবে। মূল্যবৃদ্ধি প্রশ্নে বিজেপি যে ভাবে মনমোহন-সরকারের বিরোধিতা করত, কংগ্রেসকেও তাই করতে হবে। এই যুক্তি মেনে নেন সনিয়া, রাহুল।
নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আলোচনা করে সরকারকে রক্ষায় আসরে নামেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। লোকসভায় বিরোধীরা মুলতুবি প্রস্তাব আনতে চাইলে তা খারিজ করেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। পরিবর্তে রাজ্যসভার মতো আলোচনায় সম্মতি দেন। কিন্তু বিরোধীরা জানিয়ে দেয়, রাজ্যসভায় মুলতুবি প্রস্তাব আনা যায় না। সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর মতে, প্রথম দিনেই মুলতুবি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার নজির নেই। আর তা মানলে বাস্তবে সরকারকেই মূল্যবৃদ্ধির কথা স্বীকার করতে হতো। বাস্তবে রেল-ভাড়া হোক বা পেট্রোলিয়ামের দামবৃদ্ধি সবই ইউপিএ আমলের সিদ্ধান্ত।
লোকসভায় সুযোগ না পেলেও রাজ্যসভায় সরকারের এই অবস্থান তুলে ধরেন জেটলি। তিনি বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রেলভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ভোটের জন্য তা ঝুলিয়ে রাখা হয়। এমনকী ভোটের ফল প্রকাশের দিন রেলবোর্ড ভাড়া বাড়াতে চাইলেও প্রাক্তন রেলমন্ত্রী সেটি বিজেপি সরকারের ঘাড়ে ছেড়ে দেন। বর্তমান সরকার ইউপিএ-র সেই সিদ্ধান্তই কার্যকর করেছে। পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তও ভোটের জন্য আটকে ছিল। এখন বলবৎ হচ্ছে। আর গত দু’বছরের তুলনায় আলু-পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে বলে দাবি করে সরকার। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্র যখন ইউপিএ জমানার ঘাড়ে দায় চাপাতে সক্রিয়, তখন আনন্দ শর্মা বলেন, “এ সব অজুহাত মানুষ শুনতে নারাজ। সুদিন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। সেই প্রতিশ্রতি পালন করে দেখাতে হবে।” তাঁর কথায়, “মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে মোদী সরকার এখন মজুতদারদের ওপর হানাদারির জন্য রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিচ্ছে। ইউপিএ জমানায় একই কথা বলেছিলেন মনমোহন। তখন কিন্তু মোদী-সহ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি অসহযোগিতা করেছিল।”
কংগ্রেস সূত্র বলছে, ভবিষ্যতে সংসদে এই সুরই বজায় রাখতে চায় দল। পরবর্তী সেনাপ্রধান জেনারেল সুহাগ সম্পর্কে প্রাক্তন সেনাপ্রধান তথা কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহের মন্তব্যে বেশি বিরোধিতা না করায় এখন হাত কামড়াচ্ছে কংগ্রেস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy