Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

পুত্রহারা বাবার ভরসা নাতনিরাই

শীতের নরম রোদ এসে পড়েছে একতলা বাড়ির উঠোনে। আচমকাই নিস্তব্ধতা ভেঙে বাগানের দিক থেকে বেরিয়ে দৌড়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে গেল দু’টি বাচ্চা। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা কয়েকটি চেয়ার। দেওয়াল দিয়ে ঘেরা বাড়ির লোহার দরজা ঠেলে ঢুকতেই চোখে পড়ল আকাশের দিকে চেয়ে একটি চেয়ারে বসে শৈলেন্দ্রকুমার শুক্ল।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
রাঁচি শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৫
Share: Save:

শীতের নরম রোদ এসে পড়েছে একতলা বাড়ির উঠোনে। আচমকাই নিস্তব্ধতা ভেঙে বাগানের দিক থেকে বেরিয়ে দৌড়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে গেল দু’টি বাচ্চা। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা কয়েকটি চেয়ার। দেওয়াল দিয়ে ঘেরা বাড়ির লোহার দরজা ঠেলে ঢুকতেই চোখে পড়ল আকাশের দিকে চেয়ে একটি চেয়ারে বসে শৈলেন্দ্রকুমার শুক্ল। পরিচয় দিতে নিজেই করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেন।

রোদের দিকে চেয়ে আছেন কেন? বৃদ্ধের জবাব, “রোদের দিকে নয়। দেখছিলাম বাড়ির ছাদের দিকে। ছেলে বার বার দোতলাটা তৈরি করতে বলত। আমি বলতাম, এ বার যা করার তুমি এসে কর। আমি তো একতলা তৈরি করেছি। হয়তো নতুন বছরে দোতলাটা হয়ে যেত। আর হবে না!”

এই ডিসেম্বরের ১২ তারিখেই তো বাড়ির একমাত্র ছেলের কর্নেল হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তারপরে কাশ্মীরের বারামুলা থেকে হয়তো অন্য কোথাও চলে যেতেন বুটি মোড়ের কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সংকল্প শুক্ল। বৃদ্ধ বাবা জানান, “এক রেজিমেন্টে দু’জন কর্নেল থাকেন না। ফলে সংকল্পের পোস্টিং অন্য কোথাও হতেই পারত।” কিন্তু তার আগেই, ৫ ডিসেম্বরের সকালে আত্মঘাতী জঙ্গিদের আক্রমণে কাশ্মীরের বারামুলায় মারা যান সংকল্প। বৃদ্ধ বাবার কথায়, ‘‘মেয়ে জব্বলপুরে থাকে। ছেলেই ছোট। ভেবেছিলাম ছেলে নতুন বছরে ফিরবে। বাড়ির দোতলাটা তুলে এ বার হয়তো এখানেই স্ত্রী আর বাচ্চাদের নিয়ে থাকা শুরু করবে। কিন্তু পুরনো বছরটা সব কেড়ে নিল।” ভিজে যায় বৃদ্ধের চোখের পাতা। তিনি বলে চলেন, “ভীষণ জেদি ছিল সংকল্প। রেজিমেন্টের অন্যান্য অফিসারদের আগে নিজেই শত্রুর দিকে এগিয়ে যেত। দশ বছর আগে এ জন্য এক বার জঙ্গিদের গুলিতে আহত হয়। সে বার ফিরেছিল। কিন্তু ভাগ্যদেবী তো বার বার সুযোগ দেন না!”

ইতিমধ্যেই বাড়ির উঠোনে অচেনা কণ্ঠস্বর শুনে ঘরের ভিতর থেকে বেরিয়ে এল সংকল্পের দুই মেয়ে। সারা ও মানা। সারার বয়স আট। মানা পাঁচ। বাবার মৃত্যুশোক কাটিয়ে সামান্য ধাতস্থ তারা। দুই নাতনির দিকে চেয়ে বৃদ্ধ বলেন, “মেয়ে দু’টোকে বড় করতে হবে।” উল্লেখ্য, এখনও কোনও সরকারি ক্ষতিপূরণ আসেনি।

ছেলের মৃত্যু শোক সামলাতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সংকল্পের মা সুষমাদেবী। পুরনো বছরে ছেলের মৃত্যু যে মানসিক ধাক্কা দিয়েছে বৃদ্ধ দম্পতিকে তা সামলে ওঠা যাবে কিনা নিশ্চিত নন শৈলেন্দ্রকুমার। তবুও নতুন বছরে কী চাইবেন ঈশ্বরের কাছে? বৃদ্ধের কথায়, “দুটি জিনিস। ছেলে শান্তিতে থাকুক। আর আমরা যেন শেষ জীবনটা একে অন্যের জন্য সুস্থ থাকি। আমাদের আর কেউ নেই!”

অন্য বিষয়গুলি:

sailendra sukla prabal gangopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE