বিদ্যুৎ বিপর্যয় ও দিনে ১৫০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা জাগিয়ে কয়লা ক্ষেত্রে পাঁচ দিনের ধর্মঘটশুরু হচ্ছে কাল থেকে। লক্ষ্যণীয় বিষয়, কয়লা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের নীতির বিরোধিতায় এই ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিচ্ছে সঙ্ঘ পরিবারেরই শ্রমিক সংগঠন, ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ (বিএমএস)।
বিজেপির অনেক নেতা মনে করছেন, আর্থিক সংস্কারের প্রশ্নে যে সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকারের মতান্তর রয়েছে, এই ঘটনায় ফের তার প্রমাণ মিলল। সঙ্ঘ সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, পাছে অন্য দল বিরোধী রাজনীতির পরিসর দখল করে নেয়, সে কারণেই বিএমএস অন্য শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে মিলে ধর্মঘটে যাচ্ছে।
ধর্মঘটের কারণ হিসেব শ্রমিক সংগঠনগুলির বক্তব্য, কয়লা খনি বণ্টনের জন্য অর্ডিন্যান্সে খনি থেকে কয়লা তোলার ভার বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার দরজা খোলা হয়েছে। এটা কার্যত কয়লা ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণ। ভবিষ্যতে কোল ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণেরও রাস্তা খুলতে চলেছে মোদী সরকার। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেই বিএমএস কয়লা ক্ষেত্রের সমস্ত শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছে। এক ধাপ এগিয়ে বিএমএসের সাধারণ সম্পাদক ব্রিজেশ উপাধ্যায়ের মন্তব্য, “আমরা সমর্থন করছি না। বলুন, আমরাই ধর্মঘটের নেতৃত্ব দিচ্ছি।” ধর্মঘট প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে কয়লা ও বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়েছিলেন গত শনিবার। কিন্তু অন্য শ্রমিক সংগঠনগুলির মতো বিএমএস-ও সেই বৈঠক বয়কট করে।
প্রশ্ন উঠেছে, মোদী সরকার যেখানে উন্নয়নকেই সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছে, সেখানে সঙ্ঘের একটি সংগঠন কেন অন্য শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে মিলে ধর্মঘটে যাচ্ছে? এমনিতেই সঙ্ঘের ধমার্ন্তরণ কমর্সূচির জেরে সংসদের শীত অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি পাশ করাতে পারেনি সরকার। জারি করতে হয়েছে একাধিক অর্ডিন্যান্স। এ বার কী মোদী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির সরাসরি বিরোধিতা শুরু করে দিল সঙ্ঘের শ্রমিক শাখা? এমন বিরোধিতা যে মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার রাস্তাও বন্ধ করে দিতে হয়! এই প্রশ্নের মুখেও কিন্তু বিএমএসের সাধারণ সম্পাদক ব্রিজেশ বৈঠক বয়কটের সিদ্ধান্তকেই ঠিক বলে মনে করছেন। তাঁর বক্তব্য, “মন্ত্রী সত্যিই ধর্মঘট নিয়ে চিন্তিত হলে অনেক আগেই বৈঠক ডাকতেন। মঙ্গলবার থেকে ধর্মঘট হচ্ছে জেনে শনিবার বৈঠক ডাকতেন না।”
সঙ্ঘ পরিবার সূত্রের সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, বিএমএস ধর্মঘটে যাচ্ছে বলেই যে সঙ্ঘ পরিবার আর্থিক সংস্কারের প্রশ্নে মোদী সরকারের সঙ্গে সংঘাতে যাচ্ছে, এমনটা নয়। ইউপিএ সরকারের আমলে কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি-ও অন্য শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে মিলে ধর্মঘটে যেত। এখন বিএমএস যদি সংস্কারের বিরোধিতা না করে তা হলে অন্যান্য রাজনৈতিক দল বিরোধিতার জায়গাটি দখল করে নেবে।
বিএমএস জানিয়েছে, কয়লার পরে ব্যাঙ্কেও ধর্মঘট হবে। বুধবারই সর্বভারতীয় ব্যাঙ্ক ইউনিয়নগুলি বেতন বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘটে যাচ্ছে। তাতেও সামিল রয়েছে বিএমএস। বিএমএস ধর্মঘটে নামায় অন্য শ্রমিক সংগঠনের নেতারা খুশি। এআইটিইউসি নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত বলেন, “সকলে মিলে একজোট হয়ে এত বড় মাপের কয়লা ধর্মঘট বহুদিন হয়নি। কয়লা ক্ষেত্রের সাড়ে পাঁচ লক্ষ স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মী এই ধর্মঘটে অংশ নিচ্ছেন। মোদী সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কয়লা ক্ষেত্রে অর্ডিন্যান্স তৈরির আগে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক হবে। কিন্তু কোনও আলোচনাই করেনি সরকার।”
কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের হিসেব, ২০ শতাংশ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তাদের মজুত কয়লা দিয়ে চার দিনও টানা উৎপাদন চালাতে পারবে না। ধর্মঘটের আগেই তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে বেশি কয়লা পাঠাতে শুরু করেছে কোল ইন্ডিয়া। দিনে গড়ে যেখানে ২০৭টি করে রেকে কয়লা পাঠানো হয়, এখন পাঠানো হচ্ছে ২২৫টি রেক। যদিও ধর্মঘটের জেরে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করছে বিদ্যুৎ মন্ত্রক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy