Advertisement
০৭ নভেম্বর ২০২৪

চার বছরের প্রতীক্ষা শেষে বাড়ির পথে শহরে পালিয়ে আসা কিশোর

চার-চারটে বছর পার! এত দিনে অপেক্ষা শেষ হল বছর চোদ্দোর বিকাশের। এ বার উত্তরপ্রদেশে নিজের বাড়িতে ফিরবে সে। চার বছর আগে ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে দিদির সঙ্গে ঝগড়া করে উত্তরপ্রদেশের চিত্রকূট জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম সারাইয়ার বাড়ি থেকে পালিয়েছিল দশ বছরের বিকাশ প্রজাপতি। তার পরে ঘুরতে ঘুরতে বিহারের দেহরি অন-সোন থেকে বিনা টিকিটে ট্রেনে চেপে হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছেছিল। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা দেবাশিস রায় জানিয়েছেন, রেল-পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আদালতের নির্দেশে বিকাশের জায়গা হয়েছিল হাওড়ার জুজারসাহার কাছে জেলা-প্রশাসনের এক হোমে।

দাদার সঙ্গে বিকাশ। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

দাদার সঙ্গে বিকাশ। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৪০
Share: Save:

চার-চারটে বছর পার! এত দিনে অপেক্ষা শেষ হল বছর চোদ্দোর বিকাশের। এ বার উত্তরপ্রদেশে নিজের বাড়িতে ফিরবে সে।

চার বছর আগে ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে দিদির সঙ্গে ঝগড়া করে উত্তরপ্রদেশের চিত্রকূট জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম সারাইয়ার বাড়ি থেকে পালিয়েছিল দশ বছরের বিকাশ প্রজাপতি। তার পরে ঘুরতে ঘুরতে বিহারের দেহরি অন-সোন থেকে বিনা টিকিটে ট্রেনে চেপে হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছেছিল। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা দেবাশিস রায় জানিয়েছেন, রেল-পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আদালতের নির্দেশে বিকাশের জায়গা হয়েছিল হাওড়ার জুজারসাহার কাছে জেলা-প্রশাসনের এক হোমে। সেখানে তারই মতো ১২০ জন বালক ও কিশোরের সঙ্গে থাকতে থাকতে চার বছরে পুরো বাঙালি হয়ে যায় বিকাশ। প্রায় ভুলেই যায় তার মাতৃভাষা।

তবে দেবাশিসবাবু বলেন, “ছেলেটি কোনও দিনই বাড়ির ঠিকানা বলতে পারেনি। এমনকী, কোন রাজ্যের বাসিন্দা তা-ও বলতে পারেনি। তাই তাকে তার বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়াও সম্ভব হয়নি।”

তা হলে কী ভাবে খোঁজ মিলল তার মা-বাবার?

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এক বার অসুস্থ হয়ে হাওড়া জেলা হাসপাতালে টানা কয়েক সপ্তাহ ভর্তি ছিল বিকাশ। তখনই হাসপাতালের কর্মী ও নার্সদের সঙ্গে ভাব জমিয়ে ফেলেছিল সে। সেই সূত্রে হোমের অন্য আবাসিকেরা অসুস্থ হলে হোম কর্তৃপক্ষ তাকেই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তাদের দেখভালের দায়িত্ব দিতেন। দেবাশিসবাবু জানান, দিন পাঁচেক আগে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দা অফিসার আশিস দাস। হাসপাতালের ভিতরে বিকাশকে সব সময়ে ঘুরঘুর করতে দেখে তিনি নিজেই আলাপ করেন তার সঙ্গে। তার সব গল্প জানার পরে তিনি কথা দেন, বিকাশকে তার মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।

আশিসবাবু জানান, হাসপাতালে থাকাকালীন বিকাশ মাঝেমধ্যেই এসে আবদার করত, তার বাড়ি খুঁজে দিতে। সে শুধু কাবির্র্ বলে একটা জায়গার নাম বলেছিল। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেই তিনি ইন্টারনেট ঘেঁটে জানতে পারেন, কার্বি হল উত্তরপ্রদেশের চিত্রকূট জেলার এক জায়গা। আশিসবাবুর কথায়, “সেই সূত্র ধরে চিত্রকূটের জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনিই উদ্যোগী হয়ে পুলিশের মাধ্যমে বিকাশের বাড়ি খুঁজে বার করেন। তার আত্মীয়দের ডেকে পাঠানো হয় মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার বাংলোয়। গোটা ঘটনাটি হয় মাত্র চার দিনে।”

বৃহস্পতিবার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার বাংলোর দোরগোড়ায় দাদা ও অন্য আত্মীয়দের দেখতে পেয়ে তাই নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিল না বিকাশ। মুহূর্তের মধ্যে সম্বিত্‌ ফিরে পেয়ে দাদার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সে। দাদাও বুকে আঁকড়ে ধরেছিলেন ছোট ভাইকে। উপস্থিত স্বাস্থ্য দফতরের অফিসার ও কর্মীদের চোখও তখন জলে ঝাপসা।

এ দিনই বিকাশের দাদা ও মামা-সহ পরিবারের মোট চার জন উত্তরপ্রদেশ থেকে হাওড়ায় এসে পৌঁছন। ভাইকে ফিরে পেয়ে বিকাশের দাদা মনোজ প্রজাপতি বলেন, “অনেক খুঁজেছি। পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু ভাইকে পাইনি। ভেবেছিলাম, আর বোধ হয় পাবই না। শেষে বাংলাই আমার ভাইকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকব।” হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার বাংলোয় তখন উপস্থিত ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা দেবাশিস রায়-সহ স্বাস্থ্য দফতরের অন্যান্য পদস্থ অফিসারেরা।

এত দিন পরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে কী বলল হিন্দি ভুলে যাওয়া বিকাশ?

ঝরঝরে বাংলায় হাসতে হাসতে বিকাশের মন্তব্য, “দাদা তোমরা আমাকে হিন্দিটা শিখিও। আমি তোমাদের বাংলা শিখিয়ে দেব।”

অন্য বিষয়গুলি:

homecoming debashish das
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE