দেশ জুড়ে সমালোচনার মুখে পড়ে সিদ্ধান্ত বদলালেন অখিলেশ যাদব। বদায়ূঁ গণধর্ষণের চার দিনের মাথায় এক বিবৃতি দিয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আজ জানালেন, সিবিআই তদন্তেই রাজি তাঁরা। এ দিকে এই ঘটনায় অভিযুক্ত আরও দু’জন ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে।
গত মঙ্গলবার রাতে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় বদায়ূঁর কাটরা গ্রামের দুই বোন। বড় জনের বয়স ১৫ আর তুতো বোন ১৪ বছরের। আমগাছের ডাল থেকে দুই বোনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় পরের দিনই। অসহায় বাবা-মায়েরা ছুটে গিয়েছিলেন থানায়। মেলেনি ন্যূনতম সাহায্যও।
ঘটনার বীভৎসতা, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ। সমালোচনা আরও উস্কে দিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। রাজ্যের আইনশঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কাল অখিলেশকে প্রশ্ন করেছিলেন এক সাংবাদিক। উল্টে মেজাজ হারিয়ে তিনি প্রশ্নকর্তাকেই পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “আপনার কী সমস্যা হচ্ছে? আপনি তো সুরক্ষিত। তা হলে প্রশ্ন করছেন কেন?” শত বিতর্ক, পুলিশি তদন্তে ধর্ষিতাদের পরিবারের অনাস্থা, গ্রামবাসীদের হাজারো অভিযোগ সত্ত্বেও অখিলেশের সাফ জবাব ছিল, সিবিআই তদন্তের কোনও দরকার নেই। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গঠন করে অপরাধীদের দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।
২৪ ঘণ্টাও কাটেনি, চাপের মুখে মত বদলাতে বাধ্য হলেন তিনি। বিএসপি নেত্রী মায়াবতী সরব হয়েছিলেন কালই। বদায়ূঁর ঘটনায় সিবিআই তদন্ত হতেই পারে বলে মুখ খুলেছিলেন কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী মেনকা গাঁধীও। আর আজ একেবারে নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়ে হাজির হন রাহুল গাঁধী। এ দিন সিবিআই তদন্ত দাবি করেন তিনিও। এর পরই সরকারি ভাবে জানানো হয়, রাজ্য কেন্দ্রীয় তদন্তে রাজি আছে।
বিকেলের দিকে খবর আসে, মুখ্যসচিবের পদ থেকে জাভেদ উসমানিকে সরিয়ে দিয়েছেন অখিলেশ। তাঁর বদলে ওই পদের দায়িত্ব সামলাবেন অলোক রঞ্জন। সরকারি ভাবে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো না হলেও মনে করা হচ্ছে, রাজ্যে একের পর এক অপরাধের ঘটনা সামনে আসায় সরকারের মুখরক্ষার তাগিদেই এই সিদ্ধান্ত।
এ দিকে গণধর্ষণ ও খুনে অভিযুক্ত আরও দু’জনকে আজ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত কাল ধরা পড়েছিল পুলিশকর্মী সর্বেশ যাদব এবং দুই ভাই পাপ্পু আর অবধেশ যাদব। তাঁদের আর এক ভাই উর্বেশ এবং কনস্টেবল ছত্রপল যাদবকে ধরা হয় আজ। তিন ভাইয়ের নামে খুন এবং ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রে সামিল হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে দুই পুলিশের নামে।
ধর্ষণের কথা জানাজানি হতেই ধর্ষিতাদের পরিবারপিছু পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার। সরকারি সাহায্যের আশ্বাস আজ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন ধর্ষিতাদের এক জনের বাবা। কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীকে তিনি বলেন, “মেয়েদের সম্মান তো আর টাকা দিয়ে ফিরে পাব না। তাই টাকার দরকার নেই। আমি শুধু বিচার চাই।” তাঁর কথায়, “যে ভাবে নিরীহ মেয়েদু’টোকে ওরা টাঙিয়ে রেখে গিয়েছিল, সে ভাবেই সকলের চোখের সামনে ওদের ফাঁসি হোক। এমন নৃশংস কাজ যারা করতে পারে তাদের জন্য আর কোনও শাস্তিই যথেষ্ট নয়।” পুলিশ যদি সময়মতো সাহায্য করত, তা হলেও হয়তো প্রাণদু’টো বাঁচত আক্ষেপ ঝরে পড়ে বাবার গলায়।
মেয়েদের হারানোর পর ফাঁকা বাড়িতে অবশ্য রাজনৈতিক নেতাদের ভিড় লেগেই আছে। আজ যেমন গিয়েছিলেন রাহুল। আগামী কাল বিকেলে যাওয়ার কথা মায়াবতীর। মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশের যদিও কাটরা গ্রামে যাওয়ার সময় হয়নি এখনও। বদায়ূঁ ছাড়াও মুলায়মের খাসতালুক আজমগড়ে ধর্ষণ ও অখিলেশের নিজের কেন্দ্র এটাওয়ায় ধর্ষিতার মাকে মারধরের ঘটনায় রীতিমতো কোণঠাসা উত্তরপ্রদেশ সরকার। যাবতীয় বিতর্ক চাপা দিতে মুখ্যসচিব বদল আর সিবিআই অস্ত্রই হাতিয়ার তাদের।
রাজধানীতে চলন্ত বাসের মধ্যে নির্ভয়ার গণধর্ষণ, মুম্বইয়ে শক্তি মিলসে গণধর্ষণ নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, মোমবাতি মিছিল কম হয়নি সে সময়। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তিও দিয়েছে আদালত। কিন্তু মেয়েদের নিরাপত্তার ছবিটা পাল্টায়নি একফোঁটাও। গাছ থেকে ঝুলন্ত দুই কিশোরী আবারও দেখিয়ে দিল সেটাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy