Advertisement
১০ জানুয়ারি ২০২৫

আমিই বাবা, রণে ভঙ্গ দিলেন তিওয়ারি

ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণ মিলেছিল আগেই। ছ’বছরের টানাপড়েনে ইতি টেনে এ বার নিজের মুখে রোহিত শেখরকে ছেলে বলে স্বীকার করে নিলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা নারায়ণ দত্ত তিওয়ারি। স্বীকার যদি করলেনই, তবে ছ’বছর পরে কেন?

বাবাকে পেয়ে রোহিত। নয়াদিল্লিতে।

বাবাকে পেয়ে রোহিত। নয়াদিল্লিতে।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৪ ০৮:২৪
Share: Save:

ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণ মিলেছিল আগেই। ছ’বছরের টানাপড়েনে ইতি টেনে এ বার নিজের মুখে রোহিত শেখরকে ছেলে বলে স্বীকার করে নিলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা নারায়ণ দত্ত তিওয়ারি।

স্বীকার যদি করলেনই, তবে ছ’বছর পরে কেন? রোহিত তো মামলা ঠুকেছিলেন ২০০৮ সালে। তিওয়ারি নিজে এখন রোহিতকে বলছেন, আইনি লড়াইয়ে তিনি ক্লান্ত। সেই কারণেই মেনে নিচ্ছেন সব কিছু। বিষয়টা এত সরল কি না এবং এই স্বীকারোক্তির ফলাফল কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে নানা জল্পনা শোনা যাচ্ছে। আপাতত ৯০ বছরে এই নতুন পিতৃত্বের ভার নিয়ে তিওয়ারি তাঁর জীবনের নানা বিতর্কের একটিতে দাঁড়ি দিতে পারলেন বলে মনে করা হচ্ছে।

রাজীব গাঁধীর আমলে বিদেশমন্ত্রী, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী, অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল জীবনে একাধিক পদের দায়িত্ব সামলেছেন তিওয়ারি। সামলাতে পারেননি শুধু নিজেকেই। ২০০৯ সালে অন্ধ্রের রাজ্যপাল থাকাকালীনই একটি তেলুগু চ্যানেলে ফাঁস হয়ে যায় তিওয়ারির যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিওটেপ। তখনই তাঁর ৮৪ বছর বয়স। রাজভবনের শয্যায় একসঙ্গে তিন মহিলার সঙ্গে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এই টেপ ফাঁস হওয়ার পরই তুমুল আলোড়ন ওঠে। সব রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে দাবি করেও তিওয়ারিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হয়। এবং অবশ্যই খোয়াতে হয় রাজ্যপাল পদ।

রোহিত শেখর।

সেই সময় নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে রোহিত শেখরের মামলা। তার বছরখানেক আগেই তিওয়ারিকে নিজের বাবা বলে দাবি করে মুখ খুলেছিলেন ৩৪ বছরের এই যুবক। তিওয়ারি মানতে না চাওয়ায় লড়াই গড়ায় আদালতে। রোহিত ডিএনএ পরীক্ষার আর্জি দাখিল করেন।

কে এই রোহিত? অবিভক্ত উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেত্রী উজ্জ্বলা শর্মার ছেলে। উজ্জ্বলার দাবি, তাঁর সঙ্গে তিওয়ারির সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল অনেক দিন আগেই। তিওয়ারি সে সময় রাজ্যের যুব কংগ্রেস সভাপতি। উজ্জ্বলা সাধারণ সম্পাদক। তিওয়ারির স্ত্রী সুশীলা সন্তানহীনা ছিলেন বলেই তিওয়ারি তাঁর মাধ্যমে সন্তান পেতে চেয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন উজ্জ্বলা। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, তিওয়ারি পরে তাঁকে বিয়ে করবেন বলেও কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু কথা রাখেননি। যত দিনে রোহিত জন্মালেন, তিওয়ারি তখন সাংসদ হয়ে গিয়েছেন। উজ্জ্বলার সঙ্গে দূরত্বও বাড়তে শুরু করেছে। ১৯৯৩ সালে মারা যান তিওয়ারির স্ত্রী সুশীলা। উজ্জ্বলা আশা করেছিলেন, এ বার হয়তো তাঁকে বিয়ে করবেন ‘এন ডি’। সে আশাও পূর্ণ হয়নি।

তা হলে? কথা দিয়ে কথা রাখেননি বারবার। ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্তও স্বীকার করেননি কিছু। কীসে মন বদলাল তিওয়ারির? উজ্জ্বলা শর্মার দাবি, সম্প্রতি ডাক্তার দেখাতে দিল্লি এসেছিলেন তিওয়ারি। সে কথা জানতে পেরে রবিবার রাতে ছেলেকে নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান উজ্জ্বলা। বরফ গলে তখনই। আর তার পর দিনই এল স্বীকারোক্তি। স্বাভাবিক ভাবেই রোহিত খুশি। এ দিন তিনি বলেন, “আজ উনি নতুন অধ্যায় শুরু করলেন। আমি চাই উনি (তিওয়ারি) আমার মাকে প্রাপ্য সম্মান দিন। আমি এখন বাবার সঙ্গে সময় কাটাতে চাই আর ওঁর দেখাশোনা করতে চাই।”

শুধু বৃদ্ধ পিতার দেখাশোনা করেই সন্তুষ্ট থাকবেন রোহিত? তিওয়ারির সম্পত্তির উত্তরাধিকার চান না? উজ্জ্বলা কিন্তু সে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। বলেছেন, “সত্যিটা জানানোই আমার লক্ষ্য ছিল। ...এখন দেখতে হবে, ওঁর ছেলে হিসেবে রোহিত যেন ওঁর অধিকার পায়।” আবার রোহিতের কথায় অন্য উত্তরাধিকারের ইশারাও রয়েছে। তিনি বলছেন, “বাবা যদি আমার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেন, আমি ওঁর কথা শুনে চলব। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে যা করতে বলবেন, করব।”

তিওয়ারি কী ভাবছেন এ নিয়ে? তিনি বলছেন, রোহিতকে নাকি দেওয়ার মতো তাঁর কিছুই নেই। এ কথায় চিঁড়ে ভিজবে কি না, সেটা অবশ্য ভবিষ্যতই বলবে। অনেকেই বলছেন, স্বীকারোক্তি দেওয়া ছাড়া তিওয়ারির আর উপায় ছিল না। ২০১২ সালেই দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল, ডিএনএ পরীক্ষায় তিওয়ারির পিতৃত্ব প্রমাণিত হয়েছে। তার পর থেকে তিওয়ারি চেষ্টা করছিলেন, কোনও একটা মধ্যস্থতার সাহায্য নিয়ে মামলাটা মিটিয়ে ফেলতে। কিন্তু উজ্জ্বলা বা রোহিত তাতে রাজি হননি। এখন ভালয় ভালয় না মানলে কোর্টের রায়ে তাঁর জন্য আরও বড় দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে বুঝেই তিওয়ারি মাথা নোয়ালেন বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে সাংবাদিক বৈঠকে স্বীকারোক্তি দিলেই হল না। আদালতেও একই স্বীকারোক্তি করতে হবে তিওয়ারিকে। তিওয়ারি বলছেন, তাতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। এমনকী রোহিত আর উজ্জ্বলা চাইলে তাঁর কাছে এসে থাকতেও পারেন। এ দিন সংবাদমাধ্যমের সামনে ছেলের পাশাপাশি উজ্জ্বলার কাঁধেও হাত রাখতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু উজ্জ্বলা বারবারই তিওয়ারির হাত নামিয়ে দিয়েছেন। এত বছরের ক্ষত, এত সহজে কি মোছে?

ছবি: পিটিআই।

অন্য বিষয়গুলি:

narayan dutta tiwari rohit sakhar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy