Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

আমি অ্যানার্কিস্ট, ফের চমক কেজরিওয়ালের

দু’জনেই রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন আম আদমি তথা সাধারণ মানুষকে। এখন দু’জনেই দু’রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু চিন্তাভাবনায় দু’জনের মধ্যে বিস্তর ফারাক। তাই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল যখন জোরের সঙ্গে ঘোষণা করেন, আমি ‘অ্যানার্কিস্ট’, তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার সমালোচনা করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৪ ২২:৪৩
Share: Save:

দু’জনেই রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন আম আদমি তথা সাধারণ মানুষকে। এখন দু’জনেই দু’রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু চিন্তাভাবনায় দু’জনের মধ্যে বিস্তর ফারাক। তাই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল যখন জোরের সঙ্গে ঘোষণা করেন, আমি ‘অ্যানার্কিস্ট’, তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার সমালোচনা করেন। তাঁর বক্তব্য, অরবিন্দ যদি অ্যানার্কিজমই বাছেন, তা হলে মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকার কোনও অধিকার নেই তাঁর। অবিলম্বে তাঁর শাস্তি হওয়া উচিত।
হঠাৎ আজ অ্যানার্কিস্ট প্রসঙ্গ উঠল কেন? সম্প্রতি কেজরিওয়ালদের অ্যানার্কিস্টের তকমা দিয়েছিলেন কংগ্রেস মন্ত্রী সলমন খুরশিদ। আপ সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, “হয় নির্বুদ্ধিতার জন্য, না হলে ইচ্ছা করেই এরা অ্যানার্কিস্ট-এ পরিণত হয়েছে।” আজ সেই সূত্র ধরেই নিজেকে অ্যানার্কিস্ট হিসাবে জাহির করেছেন কেজরিওয়াল। বলেছেন, “আমায় যদি ওরা অ্যানার্কিস্ট (নৈরাজ্যবাদী) বলে, তবে তাই। আমি নৈরাজ্যবাদী!” তাঁর বক্তব্য, “আমি ক্ষমতায় এসেছি বলে এই নয় যে, আন্দোলন থেমে যাবে। বিধানসভা তো রয়েছেই, প্রয়োজনে সড়কে নামতেও দ্বিধা করব না।”
রাতে ধর্না-মঞ্চে অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সোমবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
‘অ্যানার্কিস্ট’-এর অর্থ কী? দিল্লিতে কংগ্রেস-বিজেপির অনেক নেতাই বলছেন, অ্যানার্কিজম বা নৈরাজ্যবাদ একটি বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদ, যা রাষ্ট্র-সরকার-আইনের মতো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর বিরোধী। তাঁরা একাধিক অভিধানের উদাহরণও তুলে ধরেছেন। অক্সফোর্ড অ্যাডভান্স লার্নার খুলে দেখা গেল, অ্যানার্কিস্ট মানে এমন এক জন মানুষ, যিনি মনে করেন আইন ও সরকার জরুরি নয়। কেমব্রিজ বলছে এমন এক জন যিনি চান, বর্তমান সরকার এবং আইন বিলুপ্ত হোক। ইন্টারনেটে অনলাইন অভিধানে বলা হয়েছে সরকার, রাজনীতি এবং কূটনীতির ক্ষেত্রে এমন ব্যক্তিকে অ্যানার্কিস্ট বলা হয়, যিনি সরকার বিলোপের পক্ষে সওয়াল করে থাকেন। অন্য অভিধানে আরও বলা হয়েছে, অ্যানার্কিস্ট তিনিই, যাঁর মধ্যে ব্যক্তিস্বাধীনতার এক চরম প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী যখন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধর্নায় বসছেন, তখন একটি প্রশ্নই দিনভর ঘুরপাক খেয়েছে: অরবিন্দ কি একটি প্রশাসনের শীর্ষপদে থেকেও সেই পথেই হাঁটছেন?
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, “কেজরিওয়াল যা করছেন সেটি অ্যানার্কিজমই। আসলে উনি বকধার্মিক!” তাঁর মতে, “উনি বুঝতেই পারছেন না, আন্দোলন আর প্রশাসন চালানোর মধ্যে ফারাক কোথায়!”
বিজেপির হর্ষবর্ধন বলছেন, “যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী হয়েও কেজরিওয়াল আজ রাস্তা জুড়ে বসে পড়লেন, তা খাঁটি অ্যানার্কিস্টেরই লক্ষণ। আজ তাঁদের আন্দোলনে যাঁরা সমস্যায় পড়েছেন, তাঁরা আম আদমিই।” বিজেপি সাংসদ অরুণ জেটলির বক্তব্য, “আম আদমি পার্টি চমকদারি ও জনমোহিনী রাজনীতি থেকে এ বার অ্যানার্কিতে পৌঁছেছে।”
আদ আদমির আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন মমতা। তিনিও সমর্থন করেননি কেজরিওয়ালের এই বক্তব্য। বলেছেন, “গণতন্ত্রের অর্থ শৃঙ্খলা, প্রত্যয়, অধ্যবসায়। কখনওই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ নয়।” এর পরই তিনি বলেন, “যদি এক জন মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে অ্যানার্কিস্ট বলেন, তা হলে তাঁর অবিলম্বে শাস্তি হওয়া উচিত।”
আপ-এর আন্দোলনে দিনভর নাকাল হয়েছেন দিল্লিবাসী। শেষমেশ রেল ভবনের সামনে একটি পার্কে ধর্নায় বসেন কেজরিওয়াল। কোনও মুখ্যমন্ত্রীর এ ভাবে ধর্নায় বসার ঘটনাও বিরল। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, এর আগে এক বার ’৬৯-এ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায় নিজের সরকারে বিরুদ্ধেই অবস্থানে বসেন।
সামনেই প্রজাতন্ত্র দিবস। তার আগে এই আন্দোলনে শহর আরও ব্যতিব্যস্ত হবে বলেই অনেকের মত। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, কেজরিওয়াল কি কুর্সি থেকে ফের রাস্তাতেই ফিরতে চাইছেন? এই আন্দোলন বা নিজেকে অ্যানার্কিস্ট বলা কি তারই পূর্বাভাস?
এই প্রশ্ন নিয়ে আলোচনাতেই আপাতত সরগরম দিল্লি।

অন্য বিষয়গুলি:

new delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy