—ফাইল চিত্র।
ভাবাবেগের ঢেউয়ে কোণঠাসা যাতে না হতে হয়, তার জন্য গত কাল রামনামে গলা মিলিয়েছিলেন বিরোধীরাও। আজ তাঁরা ফের চেষ্টা করলেন, অর্খনীতি-করোনা-লাদাখের দিকে নজর ঘোরাতে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে রামমন্দিরই যে তাঁদের অস্ত্র, সে কথা বুঝিয়ে দিতে দ্বিধা করলেন না যোগী আদিত্যনাথ।
আজ যোগী স্পষ্টই বলে দিলেন, নিজের ধর্মবিশ্বাস প্রকাশের অধিকার তাঁর রয়েছে। ফলে শিলান্যাস অনুষ্ঠানে যোগদান নিয়ে প্রশ্ন তোলার মানে হয় না। একই ভাবে মসজিদের শিলান্যাসে যেতে যে সন্ন্যাসী হিসেবে তাঁর আপত্তি আছে, সে কথাও সোজাসুজি বলে দিয়েছেন তিনি।
ধর্মনিরপেক্ষ দেশে কোনও মন্দিরের শিলান্যাসে প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর যাওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে কাল থেকেই প্রশ্ন তোলা হচ্ছিল নানা মহলে। যোগীর পাল্টা যুক্তি, ‘‘যখন রাজনৈতিক স্বার্থে নেতারা মাথায় ফেজ টুপি পরেন, ইফতারে যান, তখন ধর্মনিরপেক্ষতায় সমস্যা হয় না? মানুষ সব বোঝেন।’’ কংগ্রেসকে নিশানা করে যোগী বলেন, তাঁরা সাংবিধানিক মূল্যবোধের মানে জানেন না। সংবিধানেও রাম-সীতার ছবি রয়েছে।
প্রশ্ন: বিকল্প জমিতে বাবরি মসজিদের শিলান্যাসেও আমন্ত্রণ এলে যাবেন? যোগী আদিত্যনাথ: যদি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রশ্ন করা হয়, আমার কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায় নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু এক জন সন্ন্যাসী হিসেবে আমি কোনও ভাবেই যাব না।.. মসজিদের শিলান্যাসে আমাকে কেউই আমন্ত্রণ জানাবেন না। আমিও যাব না।
আরও পড়ুন: শুনশান অযোধ্যায় দানা বাঁধছে করোনার ভয়
রামমন্দিরের শিলান্যাসের পর বিজেপি এ বার খোলাখুলিই নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ‘রামরাজ্যে’র স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০২২-এর বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত যোগী তাই রামমন্দিরের মন্ত্রই জপবেন। তার পর ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে এমনিতেই নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে মন্দিরের উদ্বোধন হবে। তখন স্বাভাবিকই আরও এক দফা আবেগ উসকে দেওয়ার সুযোগ আসবে।
আজ যোগীর কথায় সেই সম্ভাবনা আরও প্রকট হয়েছে। আজ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, বিকল্প জমিতে মসজিদের শিলান্যাসে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনি যাবেন কি না। যোগী বলেন, ‘‘যদি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রশ্ন করা হয়, আমার কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায় নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু এক জন সন্ন্যাসী হিসেবে আমি কোনও ভাবেই যাব না। নিজের ধর্মীয় আস্থা প্রকাশের সব রকম অধিকার আমার রয়েছে। মসজিদের শিলান্যাসে আমাকে কেউই আমন্ত্রণ জানাবেন না। আমিও যাব না। আমাকে যেদিন ডাকা হবে, সেদিন এই ধর্মনিরপেক্ষতাই বিপদে পড়ে যাবে।’’
আরও পড়ুন: চিনা অনুপ্রবেশের নথি গায়েব প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওয়েবসাইট থেকে
ঘটনা হল, রামমন্দিরকে ঘিরে হিন্দু আবেগ উথলে উঠতে পারে বুঝেই এসপি, বিএসপি-সহ প্রায় সব দলই বুধবার রামের জয়গান গেয়েছিল। এত দিন মন্দিরের প্রশ্নে নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করার পরে কংগ্রেসও অবস্থান পাল্টে রামনাম করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আজ সকাল থেকে ফের তাঁরা মন্দির থেকে নজর ঘোরাতে সচেষ্ট হন। রাহুল গাঁধী প্রশ্ন তোলেন লাদাখে চিনের অনুপ্রবেশ নিয়ে। পি চিদম্বরম প্রশ্ন তোলেন কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি রাখা নিয়ে। বামেরা সরব হন অর্থনীতির দুর্দশা নিয়ে।
সার্বিক ভাবে বিরোধী শিবির থেকে করোনা মোকাবিলায় মোদী সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগও ওঠে। দাবি করা হয়, করোনা ব্যর্থতা ঢাকতেই মোদী-যোগী সাংবিধানিক পদে থেকেও মন্দিরের শিলান্যাসে যেতে দ্বিধা করছেন না। তার উত্তরেই যোগী বলেন, নিজ ধর্মবিশ্বাস প্রকাশ করার অধিকার সকলের রয়েছে। বরং তাঁর পাল্টা অভিযোগ, কংগ্রেস আসলে অযোধ্যা বিবাদের সমাধান চায়নি। কারণ কংগ্রেস নিজেই ভোটের জন্য এই বিবাদ শুরু করেছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy