ফাইল চিত্র।
অগ্নি রায়-এর সঙ্গে কথোপকথনে—
বাজপেয়ী সরকারের আমলে অর্থ এবং বিদেশমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাক্তন সতীর্থ। ২০১৪-য় মোদী, অমিত শাহের সঙ্গে বনিবনার অভাবে বিজেপি ত্যাগ। শত্রুঘ্ন সিন্হা, প্রশান্ত ভূষণ, অরুণ শৌরীদের সঙ্গে যৌথ ভাবে তৈরি করেছিলেন বিজেপি-বিরোধী মঞ্চ। সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আলোচনায়। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটের আগে সেই যশবন্ত সিন্হাকে দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করলেন তৃণমূল নেত্রী।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে দেশের সব চেয়ে উত্তপ্ত বিধানসভা ভোট পশ্চিমবঙ্গে। আপনি সদ্য তৃণমূলে। কী ভাবে দেখছেন আগামী দিনের লড়াই?
যশবন্ত: বাংলার ভোট, জাতীয় গুরুত্ব পেয়ে গিয়েছে। বিজেপিকে দেখুন, পশ্চিমবঙ্গে যে ভাবে ঝামেলা পাকাচ্ছে অন্য রাজ্যে তার ছিটেফোঁটাও নয়। এই মোদী বাহিনীকে রোখার শেষ সৈনিক যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এটা ওরাও জানে। এই ভোটে মমতাজি বিপুল জয় পেলে গোটা দেশের মেজাজ বদলে যাবে। বার্তা যাবে সর্বত্র। বিজেপির রথের চাকা থামবে। এটা দেশের জন্যে খুব জরুরি। এটা সম্ভবও। বিজেপির কাছে পশ্চিমবঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো মুখ নেই। ওরা যে ইতিমধ্যেই নার্ভাস, তা অকল্পনীয় অর্থ সম্পদ জড়ো করে নেতা কেনার ধূম দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমি তো বলি, ‘বরোড জনতা পার্টি’! নির্বাচনী বন্ড-এর মাধ্যমেও সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করার খেলা খেলছে বিজেপি। খোলাখুলি ভাবে দেশের সব সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির অপব্যবহার করছে। তবে তাতে লাভ হবে না। বাংলায় মমতার যে বিপুল জনপ্রিয়তা, তাতে ভাটা পড়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছি না।
প্রশ্ন: রাজ্যসভার যে আসনগুলি ফাঁকা হচ্ছে, সেখানে প্রার্থী হওয়ার আশ্বাস কি দলের কাছ থেকে পেয়েছেন?
যশবন্ত: এখনই এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। প্রথম লক্ষ্য, আসন্ন ভোটে জেতা। আমাকে একটা পদ দেওয়া হয়েছে। এখন দিল্লিতেই অপেক্ষা করছি পরবর্তী নির্দেশের জন্য। দল যে ভাবে চাইবে কাজ করব। যখন চাইবে বাংলায় যাব।
প্রশ্ন: বাংলায় মমতা জিতলে বিজেপি-বিরোধিতা গতি পাবে বলে বলছেন। আপনারা কংগ্রেসের সমর্থন পাবেন ?
যশবন্ত: কংগ্রেস কী করবে, তারাই বলতে পারে। আমরা আশা করব কংগ্রেসও সঙ্গে আসবে। তবে কারও জন্য অপেক্ষা না-করাই ভাল, তাতে সময় নষ্ট হয়। এখনই তো দেখছেন, শিবসেনা, আরজেডি, এসপি, আপ-এর মতো দল মমতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। শুধুমাত্র বাংলার ভোটে হয়তো এর গুরুত্ব তত নেই। কিন্তু ২০২৪-এর লোকসভার ভোটে সলতে পাকানোর কাজটা তো শুরু করে দেওয়া যাবে। কে নেতৃত্ব দেবেন, সেটা নিয়ে আগে থেকে কোনও নাম বা দল ঠিক না-করার পক্ষপাতী আমি। তাতে অকারণে মনোমালিন্য তৈরি হয়। এমন আগেও হয়েছে। এখন বিজেপিকে উৎখাত করাটা অগ্রাধিকার। তা সে যার নেতৃত্বেই হোক না কেন।
প্রশ্ন: বিজেপিকে উৎখাত করার কথা বলছেন। কিন্তু তারাও তো গণতান্ত্রিক ভাবে জিতে বিপুল সংখ্যক আসন নিয়েই ক্ষমতায় এসেছে।
যশবন্ত: এসেছে এবং দেশের অর্থনীতিকে ধসিয়ে দিয়েছে। সরকার কোভিডের দিকে এখন আঙুল তুলছে। কিন্তু আমি স্পষ্ট বলতে চাই, ২০২০ সালের মার্চের আগের আটটা ত্রৈমাসিক কাল ভাল করে লক্ষ্য করা হোক। লাগাতার মন্দার ছবি। দেশের জিডিপি ছিল ৮ শতাংশ। আট ত্রৈমাসিকে তা নেমে দাঁড়ায় ৪ শতাংশে। তার পরে কোভিড আসার পর হাতুড়ি মেরে লকডাউন করা হল। পরিযায়ী শ্রমিকেরা দুর্দশার চরমে পৌঁছল। আর্থিক বৃদ্ধি শূন্যের নীচে নামল। আসলে গোড়া থেকেই এই সরকার বাজারে চাহিদা বাড়ানোর জন্য কোনও পদক্ষেপ করেনি। আমরা অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা-সহ বিভিন্ন চাপের মধ্যেও বাজারে চাহিদা বাড়ানোর জন্য লাগাতার প্রয়াস করে গিয়েছি। দেশ জুড়ে জাতীয় সড়ক তৈরি হয়েছে, একের পর এক আবাসন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আর এখন দেশের এই বেহাল অর্থনীতির মধ্যে দেখা যাচ্ছে শেয়ার বাজার ঊর্ধ্বগামী। আমার যদি ক্ষমতা থাকত, আমি এর জন্য অনুসন্ধানের নির্দেশ দিতাম। এই অপ্রত্যাশিত উত্থানের পিছনে রহস্যটা খুঁজে বার করার চেষ্টা করতাম। যদি দেশের শেয়ার বাজার ফাটকাবাজদের হাতে চলে যায়, তবে তো সর্বনাশ!
প্রশ্ন: আপনি দেশের বিদেশমন্ত্রীও ছিলেন। পূর্ব লাদাখে চিনের আগ্রাসন এবং আট মাস পরে পিছু হটা নিয়ে কী
মনে হয়?
যশবন্ত: চিনের বিষয়টি নিয়ে সরকার দেশকে মিথ্যা বলছে। চিনের যা করার ছিল, তা তারা করে দিয়ে গিয়েছে। ভারতকে নিজের জমি থেকে পিছু হটিয়েছে। আমেরিকার সেনেট-এর ‘আর্মড সার্ভিস কমিটি’র কর্তা, ফিলিপ ডেভিডসন তো সম্প্রতি এ কথা স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, চিনের কাছে ভারতকে জমি ছাড়তে হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy