Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

রামমন্দির নিয়ে চুপ থেকে জল মাপছে যদুবংশ

রাজ্যের রাজনৈতিক শিবির এই নৈঃশব্দের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলছেন, রামমন্দির নিয়ে ফের মুখ খুলে জল ঘোলা করতে চাইছেন না যাদব নেতারা।

রাজ্যের রাজনৈতিক শিবির এই নৈঃশব্দের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলছেন, রামমন্দির নিয়ে ফের মুখ খুলে জল ঘোলা করতে চাইছেন না যাদব নেতারা।

রাজ্যের রাজনৈতিক শিবির এই নৈঃশব্দের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলছেন, রামমন্দির নিয়ে ফের মুখ খুলে জল ঘোলা করতে চাইছেন না যাদব নেতারা।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৪৩
Share: Save:

সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে অযোধ্যার বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ ট্রাস্টকে মন্দির তৈরির জন্য দেওয়ার রায় ঘোষণার পর থেকে টুঁ শব্দটিও করেনি উত্তরপ্রদেশের যদুবংশ। চুপ সমাজবাদী পার্টির নেতারাও। সর্বোচ্চ আদালতের রায় সবাইকে মানতে হবে—এই আপ্তবাক্যটির বাইরে আর কোনও মন্তব্য শোনা যায়নি এসপি শিবির থেকে।

রাজ্যের রাজনৈতিক শিবির এই নৈঃশব্দের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলছেন, রামমন্দির নিয়ে ফের মুখ খুলে জল ঘোলা করতে চাইছেন না যাদব নেতারা। তার কারণ, মূলত রাজনৈতিক এবং কিছুটা সামাজিকও বটে। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, ‘‘এই রায়ের পর যাদবদের কাছে পরিস্থিতি উৎসব করার নয়, সমালোচনা

করারও নয়। মধ্যপন্থা হিসেবে চুপ থাকা বা গোটা বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়াকেই শ্রেয় বলে মনে করা হচ্ছে। ভোটের কথা মাথায় রেখে সংখ্যাগুরু অথবা সংখ্যালঘু — কোনও পক্ষকেই রুষ্ট করতে চাইছেন না নেতারা। পাশাপাশি বিজেপিকে রুখতে নরম হিন্দুত্বের লাইনটিকেও ছাড়া হচ্ছে না।’’

আরও পড়ুন: ঠাকরে-মূর্তিতে মালা, উদ্ধবকে বার্তা বিজেপির

এই প্রসঙ্গে এসপি নেতা কিরণময় নন্দ বলেন, ‘‘রামমন্দির নিয়ে রাজনীতি চিরকালের মত শেষ হয়ে গেল, সেটা একটা ভাল দিক। বিজেপি আর মন্দির বানানো নিয়ে মেরুকরণ করতে পারবে না। ভোটের বিষয় করে তুলতে পারবে না। এ নিয়ে আর কারও কোনও মাথাব্যথা রইল না।’’

কিন্তু রাজনৈতিক শিবিরের মতে, ‘মাথাব্যথার’ যথেষ্ট কারণ ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। উত্তরপ্রদেশে বিজেপির উত্থানের পিছনে রয়েছে, বিভিন্ন জাত, পাত, বর্ণের হিন্দুকে সংগঠিত করে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার কৌশল। এই কৌশল নির্মাণে রামমন্দির সংক্রান্ত আবেগও যে অত্যন্ত জরুরি একটা মশলা — তা ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করছেন এসপি নেতারা। গত লোকসভা ভোটে এসপি-বিএসপি-আরএলডি-র মহাজোট মুখ থুবড়ে পড়ার বহু কারণের মধ্যে একটি হল, নিজেদের বিশ্বস্ত যাদব ভোটকে অনেক ক্ষেত্রেই ধরে রাখতে পারেননি অখিলেশ যাদব। হিন্দুত্বের আবেগে তা অনেকটাই ভেসে গিয়েছে মোদীর দিকে।

শুধু যাদব নয়। স্থানীয় এক নেতার কথায়, ‘‘ফসলের দাম পাওয়া যাচ্ছে না। লাভের সব গুড় খেয়ে নিচ্ছে দালাল, ফড়েরা। গোটা বছর কৃষকেরা সঙ্কটের মধ্যে। কিন্তু ২০১৭-র বিধানসভা এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে দেখা গেল কৃষকেরা ভোটের সময় হিন্দুত্বকেই প্রাধান্য দিল। গোটা বছর জাঠ, ঠাকুর, দলিত একে অন্যের সঙ্গে ঝগড়া কাজিয়ায় লিপ্ত থাকে। ভীম আর্মি তৈরিই হয়েছিল দলিত এবং ঠাকুরের লড়াই থেকে। কিন্তু সম্প্রতি ভোটদানের সময় দেখা যাচ্ছে এরা সবাই শুধু মাত্র হিন্দুই বনে গিয়েছেন!’’

এসপি নেতাদের যুক্তি, যাদবেরা কৃষ্ণের বংশধর। তারা মূলত কৃষ্ণভক্ত। অযোধ্যার হইচই তাদের স্পর্শ করে না। কিন্তু পাল্টা যুক্তিও দলের ভিতর থেকেই উঠে আসছে। তা হল, ‘রাম এবং কৃষ্ণের খুব বেশি ফারাক থাকে না উত্তরপ্রদেশের সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক পরিমণ্ডলে।’

‘মাথাব্যথা’র আরও একটি কারণ থেকে যাচ্ছে বলেই মনে করছে বিরোধীরা। সেটি হল, বিতর্কিত জমি নিয়ে মামলা হয়তো সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে মিটল। কিন্তু রামমন্দিরকে ঘিরে আবেগ অন্তর্হিত হল কি? বা তাকে অন্তর্হিত হতে দেবেনই বা কেন অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথেরা। সূত্রের মতে, ভোট এলেই রামমন্দির নির্মানকে বড় করে তুলে ধরবে বিজেপি। রামমন্দির তৈরির জন্য ‘সংগ্রাম’-কে বিজ্ঞাপন ও প্রচারের অঙ্গ করে তোলা হবে। সেই রামমন্দিরকে কেন্দ্র করেই হিন্দু ও মুসলমানের মেরুকরণ যে তখনও হবে না, তার নিশ্চয়তা নেই এসপি-সহ বিরোধীদের কাছে।

তাই আপাতত কোনও শব্দ না করে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে চাইছে গো বলয়ের যদুবংশ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy