সাত নম্বর রেস কোর্সের ঠিকানায় প্রবেশ করেছেন ছ’মাস হল। এর মধ্যেই পাঁচ কেজি ওজন ঝরিয়ে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী!
অবাক হচ্ছেন? ‘ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতি’ সটান ধরে রাখায় কি কোনও পরিশ্রম নেই! তা-ও ৬৪ বছর বয়সে! তবে শুনুন। সূর্যোদয়ের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রোজ ঘুম ভাঙে মোদীর। অ্যালার্ম দিয়ে ভোর ঠিক সাড়ে ৫টায়। তারপর ঘড়ি ধরে নিত্য দু’ঘণ্টা শরীরচর্চা করছেন প্রধানমন্ত্রী।
এটুকু শোনামাত্রই অনেকের মনে যোগগুরু রামদেবের ছবিটা উঁকি দিতে পারে! কারণ ইদানীং মোদী-রামদেব সখ্য সুবিদিত। কিন্তু রামদেবের পতঞ্জলি নয়, যে ঘরানা ও আদবে প্রধানমন্ত্রী ব্যায়াম করছেন, বিশ্বজুড়ে তা পরিচিত ‘পিলাটিজ’ পদ্ধতি নামে। বিশ শতকের গোড়ায় এই ফিটনেস পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন জার্মানির জোসেফ পিলাটিজ। তিনি অবশ্য একে বলতেন ‘কন্ট্রোলজি’। কারণ, পেশির নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নিয়ন্ত্রিত সঞ্চালনই এই প্রক্রিয়ার মূল কথা। কিছু আধুনিক সরঞ্জামও অবশ্য লাগবে। আমেরিকা-ইংল্যান্ডে এখন দুরন্ত জনপ্রিয় পিলাটিজ। এক কোটিরও বেশি আমেরিকান এই পদ্ধতিতে শরীরচর্চা করেন বলে পরিসংখ্যান জানাচ্ছে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক বার এই পিলাটিজ রপ্ত করতে পারলে সুফল মিলবে বহুমুখী। ওজন তো কমবেই, শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা বাড়বে, রোগের আক্রমণ প্রতিহত হবে, সব চেয়ে বড় কথা, শরীরের শক্তি বাড়বে।
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে নিয়মিত যোগাসন করতেন মোদী। শীর্ষাসন করতে পারেন অনায়াসে। আমদাবাদের মুখ্যমন্ত্রী নিবাসে ‘জিম’ ছিল। আধুনিক ট্রেডমিল, ক্রস ট্রেনার, পরিমিত ওজন তোলার সরঞ্জাম, ফিটনেস বলও ছিল সেখানে।
কিন্তু মোদী মানেই তো সময়ের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া! প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মাসখানেক পরে এক পরিচিতের কাছ থেকে পিলাটিজের কথা জানতে পারেন তিনি। এ ব্যাপারে আরও খোঁজখবর নেন। একজন প্রশিক্ষকেরও সন্ধান পান। সাত নম্বর রেস কোর্স সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর এই ফিটনেস প্রশিক্ষক ভিন্দেশি। বছরের ছ’মাস তিনি আমেরিকায় থাকেন। বাকি ছ’মাস থাকেন দিল্লিতে। সূত্রটি জানাচ্ছেন, যোগাসনের সঙ্গে পিলাটিজের অনেকটা মিল দেখেই মোদীর আরও বেশি করে ভাল লেগে যায় এই কসরত্। প্রধানমন্ত্রী নেমে পড়েন পিলাটিজ চর্চায়।
আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবার তাদের শাখায় শরীরচর্চাকে বরাবরই গুরুত্ব দেয়। শরীরচর্চার প্রতি তাঁর আগ্রহ সেখান থেকেই তৈরি হয়েছে, জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “শাখার ব্যায়ামাগারে এক সময়ে ডাম্বেল ভাঁজতাম। স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত ছিলাম। ফুটবল বিশেষ না খেললেও শরীরচর্চা কখনও ছাড়িনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাত্রা বদলালেও আসন, ব্যায়াম এ সব রুটিনে বসে গিয়েছে।”
তবে এর পরেও বলতে হয়, শরীর-সচেতনতার নিরিখে মোদী হয়তো কিছুটা ব্যতিক্রমই!
তাঁর মতোই সঙ্ঘ পরিবার থেকে বিজেপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে উত্থান হয়েছে অনেকের। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যোগাসনের সঙ্গে এঁদের অধিকাংশেরই বিশেষ যোগ ছিল না, বা এখনও নেই। অটলবিহারী বাজপেয়ী ভোজনরসিক ছিলেন। শারীরিক কসরতের দিকে কখনওই নজর দেননি তিনি। তুলনায় লালকৃষ্ণ আডবাণী শরীর-সচেতন। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করেন বাড়িতে। খাওয়া-দাওয়া নিরামিষ এবং সে ব্যাপারে তাঁর সংযমও রয়েছে। তাই আশি বছর পেরিয়েও নিজেকে এখনও সটান রেখেছেন আডবাণী। কিন্তু দ্বিতীয় প্রজন্মের এক একজন নেতা এক এক রকম ব্যামোর সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছেন। কারও মধুমেহ, কারও বা হৃদ্যন্ত্র কি পাকস্থলীতে সমস্যা।
প্রাক্তন দুই বিজেপি সভাপতি অতিরিক্ত ওজন বয়ে বেড়াচ্ছিলেন বেঙ্কাইয়া নায়ডু এবং নিতিন গডকড়ী। কিন্তু ওজন কমাতে ফিটনেস বা শারীরিক কসরতের মধ্যেই ঢোকেননি। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওজন কমিয়েছেন দু’জনেই। অবশ্য বেঙ্কাইয়া ব্যাডমিন্টন খেলেন রোজ সকালে। এক সময়ে ঝাল ঝাল চেট্টিনার চিকেন আর শুকনো মালাবারি প্রন কারি ছিল তাঁর পছন্দের ডিশ। এখন সে দিকে তিনি আর তাকান পর্যন্ত না।
সম্প্রতি পাকস্থলীর বাইপাস সার্জারি করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। অতিরিক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতেই নাকি এই অস্ত্রোপচার। ওজন অবশ্য বরাবরই বেশি ছিল জেটলির। বছর কয়েক আগে পর্যন্ত যখন সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত প্র্যাকটিস করতেন, সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকে থেকে পা ফুলে যেত তাঁর। সন্ধ্যায় সোফায় বসে টেবিলে পা তুলে রাখতেন ফোলা কমাতে। রোজ লোধি গার্ডেনে ঘণ্টাখানেক হাঁটতেন ঠিকই। কিন্তু হাঁটা শেষ করেই বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বেঞ্চে বসে আড্ডা দিতে দিতে চা-শিঙাড়া খেতেন। এর পর ওজনের কী দোষ! তবে অস্ত্রোপচারের পর তিনিও এখন ওজন কমিয়েছেন প্রায় বিশ কেজি।
বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দৃশ্যত সক্রিয়। তবে তিনিও লড়ছেন শর্করার সঙ্গে। রোজ ইনসুলিন নিতে হয়। এখন নতুন ঝক্কি হল মাঝেমধ্যেই বিদেশযাত্রা। তার জেরে জেটল্যাগ। কখনও কখনও এমন হয় যে, একটি যাত্রার ক্লান্তি দূর হওয়ার আগেই অন্য যাত্রায় বেরিয়ে পড়তে হল সুষমাকে। তবে নিজেকে ফিট রাখতে খাবারদাবারে নিয়ন্ত্রণ ও সকালে নিয়ম করে হাঁটাটা বজায় রেখেছেন সুষমা।
রসিকতা করে অনেকেই বলছেন, প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে ‘টোয়েন্টি ফোর বাই সেভেন’ কাজ করছেন, তার ঠেলাতেই ফিটনেসে জোর জিতে হচ্ছে তাঁর মন্ত্রিসভার সতীর্থদের! এমনকী এক গাল হেসে বেঙ্কাইয়া সে কথাটা স্বীকারও করে নিলেন। তবে জেটলির অভিজ্ঞতা মজার। বললেন, ওজন কমিয়ে নতুন জামা-প্যান্ট সব ঢিলে হয়ে গিয়েছে। “বহু পুরনো সব কুর্তা দেখছি এখন ফিট হচ্ছে,” বললেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর লোধি গার্ডেনে হাঁটা বন্ধ করেছেন জেটলি। জানালেন, ২ নম্বর কৃষ্ণ মেনন মার্গে তাঁর সরকারি বাংলোর পিছনের লনে জগিং ট্র্যাক রয়েছে। ওখানেই হাঁটেন। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে লোধি গার্ডেনের বন্ধুদেরও এখন বাড়িতে ডেকে নেন হাঁটার জন্য। তবে এখনও হাঁটার চেয়ে আড্ডাটারই গুরুত্ব বেশি।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দুধে জল মেশাচ্ছেন না। নইলে এত দ্রুত ফল পাওয়া যায়! আগামী মাসে কেরলের শবরীমালা মন্দিরে যাওয়ার কথা ভাবছেন তিনি। পাহাড়ের উপরে মন্দির। মোদীর নাকি ইচ্ছে, সমতল থেকে গোটা রাস্তাটা হেঁটে উঠবেন।
ওই যে, কষ্ট না করলে কি ধরে রাখা যায় ছাপ্পান্ন ইঞ্চি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy