Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
খরার রাজ্যে

গ্রামের জলে ভাগ বসাচ্ছে বাঘিরা-আকেলারা

পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ৪৫% খরার কবলে। জলের কাছে বন্ধক জীবন কাটছে কী ভাবে?পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ৪৫% খরার কবলে। জলের কাছে বন্ধক জীবন কাটছে কী ভাবে?

পেঞ্চের জঙ্গলে পাতা ঝরা গাছ। নিজস্ব চিত্র

পেঞ্চের জঙ্গলে পাতা ঝরা গাছ। নিজস্ব চিত্র

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
নাগপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৯ ০২:০৫
Share: Save:

চাষের জলের সঙ্কট আছে। তবে হাহাকার নেই। তবু স্বস্তিতে নেই বিদর্ভের পিপরিয়া গ্রামের বাসিন্দারা। কেন? কারণ, জলের টানে ‘প্রতিবেশীরা’ চলে আসছে গ্রামে।

প্রতিবেশীরা দু’-পেয়ে প্রাণী হলে অবশ্য কথা ছিল না। কিন্তু এরা তা নয়। এরা বুনো জন্তু।

মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশ মিলিয়ে প্রায় ২৯০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে পেঞ্চ জাতীয় উদ্যান। মূলত বাঘের জন্য বিখ্যাত হলেও রয়েছে চিতাবাঘ, সম্বর, নীল গাই, বুনো মোষ, নেকড়ে। মহারাষ্ট্রের দিকে এই জঙ্গলের মধ্যে রয়ে গিয়েছে কিছু গ্রাম। তারই একটা পিপরিয়া। ভাণ্ডারা জেলার পাউনি থেকে কয়েক কিলোমিটার জঙ্গলের ভিতরে গেলেই এই গ্রাম। আর সেই গ্রামের তিন দিকেই জঙ্গল।

গ্রামের মুখে ঢুকতেই চোখে পড়ল একটা ছোট জটলা। ওয়াকিটকি হাতে এক বনকর্মী আর কিছু গ্রামবাসী।

খরার দাপট কেমন?

এক গ্রামবাসী বললেন, ‘‘টানাটানি থাকলেও এখনও জল আছে। কুয়ো একেবারে শুকিয়ে যায়নি। পাম্প চালালে মাটির তলার জলও অল্প উঠবে। মাঠের ডোবাতেও জল আছে। আর তাতেই সমস্যা।’’ কেন? শিবচন্দ্র ভানে নামে এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘জঙ্গলে জলের টান পড়ছে। জন্তুরা জলের খোঁজে মাঝেমধ্যেই বেরিয়ে আসছে।’’ গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, বাঘ, নেকড়ের মতো বুনো জন্তু প্রায়ই গবাদি পশু মারে। সেই সঙ্গে হরিণ, নীল গাই খেতের ক্ষতি করে।

স্থানীয় বনকর্মীরা অবশ্য জঙ্গলে জলের অভাবের কথা স্বীকার করছেন না। তাঁরা বলছেন, জন্তুদের জন্য রোজ জলের গাড়ি যাচ্ছে। বিভিন্ন কৃত্রিম পুকুরে জল ভরে দেওয়া হচ্ছে। জলের অভাব থাকার কথা নয়।

আরও পডু়ন: পাক বার্তার পরেই হানা পুলওয়ামায়, সংঘর্ষে নিহত মেজর

জঙ্গলের কিছু ছবি অবশ্য পথেই পেয়েছিলাম। মানসর পেরোলেই পেঞ্চ শুরু হয়ে যায়। নাগপুর-জবলপুর হাইওয়ে থেকে জঙ্গলের যেটুকু চোখে পড়ে, সবই শুকনো। তীব্র গরমে গাছের পাতা শুকিয়ে গিয়েছে। ছোট ছোট ঝোপও রোদে পুড়ে হলদে হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন নালার খাত শুকিয়ে কাঠ। তাই জলের সঙ্কট নেই, সেটাও বলা চলে না।

শিবচন্দ্র জানান, এ বছর বৃষ্টি হয়নি। তাই খেত থাকলেও চাষের কাজ শুরু হয়নি। দিনের বেলা গ্রামের মোড়ে আড্ডা চলছে। জঙ্গলের ভিতরে জলাধার আছে। বর্ষা এসে গেলে কুয়োর পাশাপাশি সেখান থেকেও চাষের জল পাওয়া যাবে। পাশ থেকে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘তেমন ভাল বর্ষা না-হলে চাষ করব না। পেট চালানোর জন্য জঙ্গলে বন দফতরের ঠিকে মজুরি, পর্যটকদের গাইডের কাজ তো রয়েইছে।’’ আড্ডা ছাড়িয়ে আরও ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে দু’পাশের খেত। লাঙল দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বৃষ্টি না-হওয়ায় বীজ বোনা হয়নি। খেতের পাশে গাছের তলায় বসে গল্প করছিলেন দুই প্রৌঢ়। তাঁদেরই এক জন বাসুদেব চৌধুরী। পিপরিয়ার এই বাসিন্দার সাত একর জমি রয়েছে। রয়েছে কমলার খেতও।

বাসুদেব জানান, তীব্র রোদে কমলালেবুর গাছ শুকিয়েছে, পাতা ঝলসে গিয়েছে। বাগানে ছোট একটি ডোবাও আছে। জল, খাবারের খোঁজে নীলগাই, সম্বরের দল মাঝেমধ্যে ওই বাগানে ঢুকে পড়ে। বাঘ বা চিতাবাঘের হানা বেশি গেরস্থ বাড়ির গোয়ালে। এ ভাবেই চলছে।

গ্রামের মোড়ে আড্ডার ফাঁকে শিবচন্দ্র বলেন, ‘‘শেরের সঙ্গে তো আমাদের নিত্যদিনের বসবাস।’’ শের শুনেই মনে পড়ে যায়, রুডিয়ার্ড কিপলিংয়ের ‘দ্য জাঙ্গল বুক’-এর পটভূমি তো এই পেঞ্চের জঙ্গলই। মনে পড়ে যায় শের খান, বাঘিরা, বালু, আকেলার সঙ্গে মানুষ মোগলির জীবনযাপনের কথা। ২০১৬ সালে ‘দ্য জাঙ্গল বুক’ সিনেমায় খরার দৃশ্যে একমাত্র
জলাশয় থেকে মোগলির সঙ্গেই পিপাসা মিটিয়েছিল পশুরা।

বাস্তবে খরার সময়েও শিবচন্দ্রদের গ্রামে পশুদের আনাগোনা সেই গল্পই মনে পড়িয়ে দেয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Drought Pench National Park Wild Animals Water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy