Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Joshimath

‘উন্নয়নের’ মূল্য চুকিয়েই কি ডুবছে জোশীমঠ

পাহাড়ি এই শহরের জেপি কলোনি হোক বা মাড়ওয়ারি এলাকা— রোজ নতুন নতুন বাড়িতে ফাটলের আতঙ্ক দেখা দিচ্ছে। শুক্রবার সন্ধেয় একটি মন্দির ভেঙে পড়েছে।

আতঙ্কের পরিবেশ উত্তরাখণ্ডের এই প্রাচীন শহরে।

আতঙ্কের পরিবেশ উত্তরাখণ্ডের এই প্রাচীন শহরে। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
জোশীমঠ শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৩৯
Share: Save:

গত কয়েক দিন ধরেই উত্তরাখণ্ডের এই প্রাচীন শহরে আতঙ্কের পরিবেশ। রাতবিরেতে মাটির তলা থেকে ভেসে আসে অদ্ভুতুড়ে সব আওয়াজ। বহু বাড়িতে ফাটল ধরছিল আগেই। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সেই তালিকাটা এখন হু-হু করে বাড়ছে। প্রশাসনের হিসেবে অন্তত পাঁচশো! শহরের আনাচে-কানাচে এখন একটাই আলোচনা। তলিয়ে যাচ্ছে জোশীমঠ।

পাহাড়ি এই শহরের জেপি কলোনি হোক বা মাড়ওয়ারি এলাকা— রোজ নতুন নতুন বাড়িতে ফাটলের আতঙ্ক দেখা দিচ্ছে। শুক্রবার সন্ধেয় একটি মন্দির ভেঙে পড়েছে। তবে সেটি পরিত্যক্ত হওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পাশাপাশি, শহরের রাস্তা থেকে চাষের জমি— বহু জায়গায় বিপজ্জনক ফাটলের মুখে উন্মক্ত হয়েছে পাতালের অন্ধকার। কোথাও আবার ফাটল চুঁইয়ে বেরিয়ে আসছে ভূগর্ভস্থ জলের ধারা। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার থেকে বদ্রীনাথ জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুক্রবার সকাল থেকেই উত্তরাখণ্ড সরকারের তরফে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, এমন ৪৭টি পরিবারকে ইতিমধ্যে আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী কাল থেকে বাড়ি বাড়ি ঘুরে কথা বলবে বিশেষজ্ঞ দল। আগামী ছ’মাস পুনর্বাসনযোগ্য পরিবারগুলিকে বাড়ি ভাড়া বাবদ মাসে চার হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী জানিয়েছেন, জোশীমঠের পরিস্থিতি নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। জোশীমঠে কেন তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ দল তৈরি করছে রাজ্য সরকার।

কেন তলিয়ে যাচ্ছে জোশীমঠ? কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে আসছে প্রায় ৫০ বছরের পুরনো একটি রিপোর্টের কথা। ১৯৭৬ সালে মিশ্র কমিটি নামে একটি সমীক্ষক দলের রিপোর্টে স্পষ্ট করে বলা হয়েছিল, হিমালয়ের ধসপ্রবণ এলাকার উপরে গড়ে উঠেছে শহরটি। প্রাকৃতিক ও মানুষের কর্মকাণ্ডের জেরে জোশীমঠের স্থায়িত্ব বড়জোর ১০০ বছর। এর মধ্যে শহরটি ধীরে ধীরে তলিয়ে যাবে। ধস রুখতে বোল্ডার না সরানো, বড়সড় নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা, গাছ না কাটার মতো নানা দাওয়াই দিয়েছিল কমিটি। তবে সে সব সতর্কবার্তা উড়িয়ে দিয়ে দিনে দিনে আড়ে-বহরে শহর বেড়েছে। ধাপ কেটে, সুড়ঙ্গ খুঁড়ে তৈরি হয়েছে রাস্তাঘাট, নতুন জনবসতি। সঙ্গে একের পর এক জলাধার, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও।

রিপোর্ট বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে অন্তত ১২৮টি ধসের মুখে পড়েছে চামোলি-জোশীমঠ এলাকাটি। ২০২১ সালে উত্তরাখণ্ডের চামোলিতে কাদা-ধসের বন্যায় তলিয়ে গিয়ে প্রায় ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তখন থেকেই জোশীমঠের বাড়িগুলিতে বড় বড় ফাটল নজরে আসতে শুরু করে।

তিব্বত-ভারতের সীমান্তে অবস্থিত প্রাচীন এই শহর ছুঁয়েই পৌঁছতে হয় বদ্রীনাথ ধামে। অবস্থানগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ শহরটির অস্তিত্ব। বিজ্ঞানীদের মতে, ভারী নির্মাণকাজের জেরে বিপদের মুখে আজ শহরটি। বিশেষ করে দু’টি বড় নির্মাণকাজের দিকে আঙুল উঠছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে সেই দু’টি ক্ষেত্র— তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও হেলাং পাসে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন চামোলির জেলাশাসক।

অন্য বিষয়গুলি:

Joshimath cracks
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy